বার্সেলোনার বিপক্ষে মাঠে নামার আগে মিরাকল কিছু করে দেখানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের কোচ নিকো কোভাচ। তার শিষ্যরা ঘরের মাঠ সিগন্যাল ইদুনা পার্কে সেই মঞ্চও তৈরি করেছিল। তবে কাছাকাছি গিয়েও শেষে বাস্তবে ফলটা নিজেদের করে নিতে পারেনি ডর্টমুন্ড। অবশ্য ঠিকই বার্সেলোনাকে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে তারা।
বিশেষ করে হ্যাটট্রিককারি সেরহেউ গুইরাসি। তার হ্যাটট্রিকেই চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে ৩-১ গোলে জয় পেয়েছে ডর্টমুন্ড। কিন্তু প্রথম লেগে ৪-০ ব্যবধানে হেরে যাওয়ায় দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৩ ব্যবধানে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে বার্সেলোনা। ২০১৯ সালের পর মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের শেষ চারে জায়গা পেল কাতালান ক্লাব।
বার্সাকে আজ বাঘে পেয়েছিল ডর্টমুন্ড। ঘরের মাঠে শুরু থেকে আক্রমণ করতে থাকে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। তার ফলও পেতে পারত শুরুতেই। গোলরক্ষক ভয়েচেক সেজনি ও ডিফেন্ডারের বদান্যতায় রক্ষা পায় বার্সেলোনা।
তবে খুব বেশিক্ষণ গোলবার অক্ষত রাখে পারে না কাতালান ক্লাব। ম্যাচের ৯ মিনিট ভুল করে বসেন সেজনি। প্রতিপক্ষের আক্রমণ প্রতিহত করতে গোলবার ছেড়ে বেরিয়ে এসে পাসকেল গ্রোবকে ফাউল করে বসেন বার্সার গোলরক্ষক। ভিএআরে কিছু সময় কথা বলে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন ইতালিয়ান রেফারি মরিজিও মারিয়ানি।সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে ভুল করেননি গুইরাসি।
পানেনকা কিকে ১১ মিনিটে হলুদ বাহিনীদের আনন্দে ভাসান তিনি। ১৬ মিনিটে আরেকটি গোলও পিয়েছিল ডর্টমুন্ড। তবে অফসাইডের কারণে তা বাতিল হয়ে যায়। ৩৬ মিনিটে বাঁ প্রান্তে একটা সুযোগ পেয়েছিলেন করিম আদেইমি। তবে তার নেওয়া জোরাল শটটি প্রতিহত করেন সেজনি। ৩৯ মিনিটে প্রথমবারের মতো আক্রমণের সুযোগ পায় বার্সা। কিন্তু ডর্টমুন্ডের ডি-বক্সে ফাঁকায় বল পেয়েও টাচ জোরাল হওয়ায় জুলস কুন্দের শট নেওয়ার আগেই বল ধরে ফেলেন গোলরক্ষক গ্রেগর কোবেল।
বিরতির পর পরেই লিড বাড়ানোর দারুণ সুযোগ তৈরি করে ডর্টমুন্ড। তবে ৪৮ মিনিটের আক্রমণকে সফল হতে দেননি সেজনি। পর পর দুইবার সেভ করেন তিনি। শুরুতে আদেইমির শট পরে পাসকেলের। কর্নারের বিনিময়ে প্রতিহত করলেও ডর্টমুন্ড ঠিকই গোল আদায় করে নেয়। সতীর্থর নেওয়া কর্নারে হেড দেন রামি বেনসাবানি। তাতে মাথা ছুঁইয়ে বার্সার জালে জড়িয়ে দেন প্রথম গোলের নায়ক গুইরাসি। তবে ৫ মিনিট পরেই আত্মঘাতী গোল হজম করে বসে বার্সার ওপর দারুণ ছড়ি ঘোড়ানো ডর্টমুন্ড।
রবার্ট লেভানডফস্কিকে উদ্দেশ্য করে ৫৪ মিনিটের সময় ডান প্রান্ত থেকে ডি-বক্সে ক্রস করেন ফেরমিন লোপেজ। তা প্রতিহত করতে গিয়ে নিজেদের জালেই বল জড়িয়ে দেন বেনসাবানি। ৬৪ মিনিটে বার্সাকে সমতায় ফেরানোর এবার দারুন সুযোগ পান লোপেজ নিজেই। কিন্তু ডি-বক্স থেকে শট নেওয়ার সুবর্ন সুযোগ পেয়েও বারের ওপর দিয়ে মারলেন বার্সার ফরোয়ার্ড।
অন্যদিকে সুযোগ পেয়ে হ্যাটট্রিক করতে ভুল করেননি গুইরাসি। ৭৬ মিনিটে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন গিনির স্ট্রাইকার। তার হ্যাটট্রিক গোলটির একটা ধন্যবাদ পেতে পারেন জুলিয়ান ডুরানভিল। ডান প্রান্তে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদেও বোকা বানিয়ে দারুণ পাস বাড়ান ১৮ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড।
শুরুতে রোনাল্ড আরাউহো ক্লিয়ার করলে সামনে থাকা গুইরাসি বল পেয়ে জালে জড়িয়ে দেন। ৩-১ গোলে এগিয়ে উজ্জীবিত ডর্টমুন্ড দুই মিনিট পরে আরেকটি গোল করেছিল। কিন্তু এবারও অফসাইডের ফাঁদে গোলটা পাওয়া হয়নি জার্মান ক্লাবের। পরে আরো কিছু আক্রমণ করলেও কোচ কোভাচের চাওয়া অলৌকিককে বাস্তবে পরিণত করতে পারেননি ডর্টমুন্ডের খেলোয়াড়রা।
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে যেতে না পারলেও বার্সার অপরাজেয় যাত্রা অবশ্য থামিয়েছে তারা। হ্যান্সি ফ্লিকের অধীনে ২৪ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর হার দেখেছে বার্সা।
ডর্টমুন্ডের মতোই দুর্দান্ত খেলে শেষ চারে যাওয়া হয়নি অ্যাস্টন ভিলারও। তারাও ঘরের মাঠ ভিলা পার্কে ৩-২ গোলে জিতেও আশাহত হয়েই মাঠ ছেড়েছে। কেননা দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৪ ব্যবধানের জয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে পিএসজি।
এমআর/টিএ