ঢাকায় এসেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক বিষয়ে আলোচনার জন্য ঢাকায় এসেছেন । প্রায় ১৫ বছর পর পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে পাকিস্তানের পূর্ণাঙ্গ কোনো সচিব ঢাকায় এলেন।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব ঢাকায় পৌঁছান। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগ) ইশরাত জাহান।
আমনা বালুচের ঢাকায় পৌঁছানোর তথ্য  গণমাধ্যমকে নি‌শ্চিত ক‌রে‌ছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণাল‌য়ের এক কর্মকর্তা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তরা জানিয়েছেন, আগামী ১৭ এপ্রিল ঢাকায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে অনুষ্ঠেয় সচিব বৈঠকের নেতৃত্বে ইসলামাবাদের নেতৃত্ব দেবেন আমনা বালুচ। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বৈঠকটি হওয়ার কথা, যেখানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন ঢাকার পক্ষে নেতৃত্বে দেবেন।

সূচি অনুযায়ী, পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক ও মধ্যাহ্নভোজ শেষে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সফরে সার্বিক দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনা হবে। এই প্ল্যাটফর্মে কোনো বিষয় বাদ থাকে না, সব আলোচনা হয়। অগ্রগতি কী আছে, কী করার আছে বা যায়; কী কী দেওয়ার আছে বা নেওয়া যায় সবই আলোচনায় টেবিলে থাকবে। মোটা দাগে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কানেক্টিভিটি; বিশেষ করে আকাশপথে যোগাযোগ, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, কৃষি, মৎস্য, সংস্কৃতি, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার মতো বিষয়গুলো গুরত্ব পাবে। এছাড়া, সার্ক, ওআইসি, ডি-৮ এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক যুগের বেশি সময় পর দুই দেশের মধ্যে ৬ষ্ঠ পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হতে যাচ্ছে। ২০১০ সালে সর্বশেষ ইসলামাবাদে বৈঠকে বসেছিল দুই দেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব। এছাড়া, অর্থমন্ত্রী পর্যায়ের অর্থনৈতিক কমিশনের সর্বশেষ বৈঠক হয় ২০০৫ সালে। দীর্ঘদিনের জট খোলার পর আশা করা হচ্ছে, এবারের আলোচনায় পরবর্তী অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠক নিয়ে কথা হবে।

ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র বলছে, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে দু’দেশের সম্পর্ক দৃঢ় করার প্রস্তাব। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে একটি যৌথ কমিশন পুনর্বহালের বিষয়টি তুলতে পারে পাকিস্তান। এছাড়া, বাংলাদেশের দিক থেকে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের লক্ষ্যে একটি বিশেষায়িত কর্মসূচির প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে পাকিস্তানকে।

পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণে আন্তরিক বাংলাদেশ। তবে সম্পর্কের অমীমাংসিত ইস্যুগুলো ভুলে যায়নি ঢাকা। বাংলাদেশ মনে করে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া, যুদ্ধের জন্য ক্ষতিপূরণ, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, সম্পদের হিস্যা, ১৯৭০ সালে অবিভক্ত পাকিস্তানের ঘূর্ণিঝড়ের সময় দেওয়া বৈদেশিক সহায়তার পাওনা পরিশোধের মতো বিষয়গুলোর সুরাহা জরুরি।

অমীমাংসিত বিষয়ের সুরাহা না করে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ আগ্রহী নয়। ঢাকার চাওয়া, পাকিস্তান এগিয়ে আসুক। কেননা, অমীমাংসিত বিষয়ে সুরাহা যতদিন হবে না ততদিন সামনে আসবে। আলোচনার টেবিলে থাকবে। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব বলেন বা মন্ত্রী বলেন তাদের সঙ্গে আলোচনায় অমীমাংসিত বিষয় থাকে। অমীমাংসিত ইস্যু যতদিন সুরাহা না হয়, ততদিন উঠতে থাকবে; এটাতো স্বাভাবিক। আমরা তো চাই এগুলোর সুরাহা বা মিটমাট হয়ে যাক। একটা অবস্থান নিক ওরা। সম্পর্ক সামনে আগানোর জন্য ভালো হয় যদি তারা সমস্যাগুলো মিটিয়ে ফেলে।

ই কূটনীতিক বলেন, ৫৪ বছর হয়ে গেল। কিন্তু সমস্যার সমাধানতো হচ্ছে না। এখন তারা কি চায় আলোচনা করে বলুক। নতুন কিছু তো বলুক। আনুষ্ঠানিক ক্ষমার বিষয়ে ওদের অস্বস্তি আছে, সেটাতো বোঝাই যায়। এ ছাড়া, আটকে পড়াদের নিয়ে যাওয়া বলেন, টাকা-পয়সা বুঝিয়ে দেওয়া বলেন তারা কমফোটেবল হলে আগেই সব মিটে যেত। সমস্যার সমাধান হয়ে যেত অনেক আগেই। তাদের নিশ্চই কোনো একটা কিছু আছে। দেখা যায়, আলোচনা কি আসে।

এ‌দি‌কে, চল‌তি মা‌সের শেষের দিকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে ঢাকায় আসছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। পা‌কিস্তা‌নের পররাষ্ট্রস‌চি‌বের ঢাকা সফরকা‌লে দেশ‌টির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর নি‌য়ে আলোচনা হ‌বে।

আরএম/টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আরে কারে ভয় দেখান? আমাদের হারানোর কিছুই নাই: হাসনাত আবদুল্লাহ Jul 07, 2025
img
ব্যাংকক থেকে দেশে ফিরলেন নারী ফুটবলাররা Jul 07, 2025
img
সাই পল্লবীর প্রতিবাদ: নারীর অবজেক্টিফিকেশনকে না Jul 07, 2025
img
বিশ্বকে বদলে দিতে ট্রাম্পের ‘ম্যাডম্যান থিওরি’ Jul 07, 2025
img
টঙ্গীর তিন নেতাসহ চার বিএনপি নেতা বহিষ্কার Jul 07, 2025
img
টঙ্গী থেকে গ্রেফতার নেত্রকোণা জেলা আ. লীগের সহ সভাপতি Jul 07, 2025
img
জনগণের অধিকার রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান মুশফিকুর রহমানের Jul 07, 2025
img
আন্দোলনে বিকল্প যোগাযোগের গোপন ছক ফাঁস করলেন শিবির সভাপতি Jul 07, 2025
img
৭ জুলাই: ঢাকায় বাংলা ব্লকেডের ১ বছর Jul 07, 2025
img
মাহমুদুর রহমানের মায়ের মৃত্যুতে তারেক রহমানের শোকপ্রকাশ Jul 07, 2025
img
কুয়াকাটায় এক ইলিশ বিক্রি সাত হাজার সাতশ টাকায় Jul 07, 2025
img
বাল্কহেড আটকিয়ে চাঁদাবাজি, গোয়াইনঘাটে ৬ জন গ্রেফতার Jul 07, 2025
img
শেখ হাসিনা কি দিল্লি থেকে লন্ডনে যাচ্ছেন? Jul 07, 2025
img
রাজধানীর দুই স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ Jul 07, 2025
img
স্বজন হারালেন জামায়াত আমির, জামায়াতের শোক প্রকাশ Jul 07, 2025
img
জামায়াত আমিরের শাশুড়ি ইন্তেকাল করেছেন Jul 07, 2025
img
বিদায়ী সংবর্ধনা শেষে গ্রেফতার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান Jul 07, 2025
img
অসুস্থ চালকের জায়গায় গাড়ি চালালেন হাসনাত আব্দুল্লাহ Jul 06, 2025
img
যৌথ অভিযানে ধরা পড়ল আন্তঃজেলা ডাকাত সর্দার Jul 06, 2025
img
প্রয়োজনে পর্যাপ্ত ডকুমেন্টস সরবরাহ করা হবে : ফরহাদ Jul 06, 2025