ইয়েমেনের মার্কিন বিমান হামলা, এক রাতে নিহত ৬৮

মধ্যপ্রাচ্যের গৃহযুদ্ধকবলিত দেশ ইয়েমেনের একটি বন্দিশালায় হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী। এতে নিহত হয়েছেন ৬৮ জন এবং আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৪৭ জন।
 
সোমবার ইয়েমেনের সশস্ত্র হুথি বিদ্রোহী গোষ্ঠী পরিচালিত টেলিভিশন চ্যানেল মাসিরাহ টিভির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, আগের দিন রোববার ২৭ এপ্রিল দেশটির উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় শহর সাদাহ’-এর একটি বন্দিশালায় বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী।

সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, ওই বন্দিশালায় যারা ছিলেন তারা সবাই আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিক এবং ইয়েমেনের সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে আমিরাত-সৌদি বা উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য ধনী দেশে যাওয়ার জন্য দেশটিতে প্রবেশ করেছিলেন। অবৈধভাবে ইয়েমেনে প্রবেশকারী আফ্রিকান ও এশীয় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্যই এই বন্দিশালাটি তৈরি করা হয়েছিল।
 
ইয়েমেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, বন্দিশালাটিতে মোট ১১৫ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী ছিলেন। মার্কিন হামলার পর তাদের কেউই আর স্বাভাবিক অবস্থায় নেই।

২০১৫ সালের শুরুর দিকে ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের হামলার মুখে সৌদি-সমর্থিত ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর আল হাদি ক্ষমতা ছেড়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যান। ক্ষমতাচ্যুত এই প্রেসিডেন্টকে ফেরাতে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।
 
কিন্তু এই অভিযানের শুরুর পর ইয়েমেনের রাজনৈতিক সংকটের অবসানের পরিবর্তে আরও তীব্র হয়ে ওঠে। বর্তমানে ইয়েমেনে কার্যত দুই শাসকগোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক সহযোগিতার ওপর ভর করে দেশটির দক্ষিণাঞ্চল এখনও মনসুর হাদির নেতৃত্বাধীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে, অন্যদিকে উত্তরাঞ্চল সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে হুথি বিদ্রোহীরা।

ইয়েমেনের এই সংঘাতকে মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্যের লড়াইয়ে সৌদি-ইরানের ছায়াযুদ্ধ হিসেবে দেখা হয়। টানা গৃহযুদ্ধ ও সংঘাত চলার ফলে প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এবং একদা স্বচ্ছল এই দেশটি। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইয়েমেনের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ খাদ্য ও ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের গুরুতর সংকটে ভুগছেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের হামলার পর গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। সেই অভিযানের বিরোধিতা করে এবং হামাসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে লোহিত সাগরে চলাচলকারী বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে হুথিরা।

এ ধরনের হামলা থেকে বিরত থাকতে বেশ কয়েকবার সতর্কবার্তা দেওয়ার পর গত বছর নভেম্বর থেকে ইয়েমেনের হুথি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোতে হামলা শুরু করে মার্কিন বাহিনী।

এমআর/টিএ


Share this news on: