সিঙ্গাপুরে টানা ১৪ বারের মতো ক্ষমতায় পিএপি

সিঙ্গাপুরে শনিবার অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা পিপলস অ্যাকশন পার্টি (পিএপি) আবারও ভূমিধস বিজয় অর্জন করেছে। দেশটির টানা ৬৬ বছরের শাসনকাল আরও দীর্ঘায়িত করলো এই ফলাফল, যা নতুন প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওয়াংয়ের জন্য বড় এক প্রাপ্তি।

শনিবার (৩ মে) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে পিবিএস নিউজ।

নির্বাচন বিভাগের ঘোষণা অনুযায়ী, ভোট গণনা শেষে পিএপি ৮২টি সংসদীয় আসনে বিজয়ী হয়েছে। এর আগেই তারা ৫টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিল। ফলে মোট ৯৭টি আসনের মধ্যে পিএপি’র দখলে এসেছে ৮৭টি আসন। বিরোধী ওয়ার্কার্স পার্টি আগের মতোই ১০টি আসনে অবস্থান ধরে রেখেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, পিএপি’র জনপ্রিয় ভোট শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫.৬ শতাংশে, যা ২০২০ সালের প্রায় রেকর্ড-নিম্ন ৬১ শতাংশের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। পিএপি সমর্থকরা স্টেডিয়ামে পতাকা উড়িয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন বিজয়ের আনন্দে।

সিঙ্গাপুরের অর্থমন্ত্রী লরেন্স ওয়াং জনগণের কাছে পূর্ণাঙ্গ ম্যান্ডেট চেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির প্রেক্ষিতে উদ্ভূত অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য। সরকার ইতোমধ্যে প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস কমিয়েছে এবং সম্ভাব্য মন্দার বিষয়ে সতর্ক করেছে।

৫২ বছর বয়সি ওয়াং বলেন, ‘এত দৃঢ় ম্যান্ডেট পেয়ে আমি অনুতপ্ত ও কৃতজ্ঞ।’

তিনি স্বীকার করেন, জনগণ আরও বিকল্প কণ্ঠস্বর চায় সংসদে, তবে দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে একটি শক্তিশালী পিএপি টিম প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘এই ফলাফল সিঙ্গাপুরকে বৈশ্বিক অস্থিরতার মুখোমুখি হতে আরও শক্ত অবস্থানে রাখবে।’

সিঙ্গাপুর ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিষয়ক অধ্যাপক ইউজিন ট্যান বলেন, ‘২০২০ সালের পর বিরোধীদের অগ্রগতি না হওয়া ছিল কিছুটা বিস্ময়কর। ভোটাররা তাদের অবস্থান গোপন রেখেছিল, আর আজ তারা জানিয়ে দিয়েছে—যে দলটি দীর্ঘদিন ধরে দেশটিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে, তাদের ওপরই আস্থা রাখছে।’

লরেন্স ওয়াং সিঙ্গাপুরের চতুর্থ নেতা হিসেবে লি সিয়েন লুংয়ের স্থলাভিষিক্ত হন। লি ২০২৪ সালের মে মাসে দুই দশকের শাসনের পর পদত্যাগ করেন এবং বর্তমানে মন্ত্রিসভায় জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী হিসেবে রয়েছেন। তার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে লি পরিবার কেন্দ্রিক নেতৃত্বের একটি অধ্যায়, যার সূচনা হয়েছিল তার বাবা লি কুয়ান ইউ’র হাত ধরে, যিনি সিঙ্গাপুরকে ৩১ বছরের শাসনে এক ঔপনিবেশিক প্রান্তিক অঞ্চল থেকে বিশ্বের অন্যতম ধনী রাষ্ট্রে পরিণত করেন।

যদিও পিএপি স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত, তবে সরকার নিয়ন্ত্রিত কঠোর নীতি, বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল নগরীতে জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি, আয় বৈষম্য, বাসস্থান সংকট, জনসংখ্যার চাপ ও মতপ্রকাশের সীমাবদ্ধতা বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়িয়েছে।

বিরোধীদলগুলো বলছে, সংসদে তাদের শক্তিশালী উপস্থিতি রাজনৈতিক ভারসাম্য ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। তবে তারা বারবারই পিছিয়ে পড়ছে, সম্পদের ঘাটতি, একতা না থাকা এবং বিচ্ছিন্ন জনসমর্থনের কারণে। অনেক সমালোচক গেরিম্যান্ডারিং বা নির্বাচনী এলাকার ইচ্ছেমতো পুনর্বিন্যাসকেও পিএপি’র সুবিধা হিসেবে দেখছেন।

ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা প্রিতাম সিং বলেন, ‘এটা ছিল কঠিন এক লড়াই। আমরা আবার নতুন করে শুরু করব, আগামীকাল থেকেই কাজ শুরু।’

যুক্তরাষ্ট্রের শুভেচ্ছা বার্তা

সিঙ্গাপুর ও প্রধানমন্ত্রী ওয়াংকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘আমরা প্রায় ৬০ বছর ধরে একটি দৃঢ় ও টেকসই কৌশলগত অংশীদারত্ব এবং একটি নিরাপদ, মুক্ত ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের অঙ্গীকার ভাগ করে নিচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘নবনির্বাচিত সরকার ও প্রধানমন্ত্রী ওয়াংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যেতে আমরা অপেক্ষায় আছি, যাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও জোরদার হয়।’

এফপি/এসএন

Share this news on: