‘সরকারের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা কমলে দেশ মহা সংকটে পড়বে’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা কমলে দেশ মহা সংকটে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু।

তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-জনতা এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার সংঘাত ও ভুল বোঝাবুঝি জাতিকে হতাশ করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা কমলে দেশ মহা সংকটে পড়বে। সংস্কার, খুনিদের বিচার ও অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন সবই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

শুক্রবার (১৬ মে) বিকেলে চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে এবি পার্টি চট্টগ্রাম মহানগর আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি বলছি—আপনাদের ঝগড়া, মারামারি জনগণ পছন্দ করছে না। কে এমপি হবেন, কে পালাবে, কে কী করেছে এসব বাদ দিন, আগে রাষ্ট্রকে গঠনের দিকে মনোযোগ দিন। আমাদের ঐক্য নষ্ট হলে দেশ গভীর সংকটে পড়বে।

তিনি বলেন, ভারত একের পর এক আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এখনও তারা বাংলাদেশকে ন্যায্য হিস্যা দিতে নারাজ। আমাদের সীমান্তকে অস্থির করতে চায়। কিন্তু দেশের মানুষ প্রস্তুত—যার যা আছে, তা নিয়েই সীমান্তে পৌঁছে যাবে।

মঞ্জু বলেন, ভারতের আধিপত্যবাদী চক্রান্ত প্রতিহত করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কোনো বিভেদ নয়, কোনো দ্বন্দ্ব নয়—সব ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাষ্ট্র গঠনে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে নানা সমস্যা রয়েছে। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান—সব ধর্মাবলম্বীদের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা—সব জায়গায় সমান উন্নয়ন করতে হবে। এবি পার্টি জনগণের সমস্যা সমাধানে সেবামূলক রাজনীতির চর্চা করছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন নিয়ে মঞ্জু বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরকে উন্নত করতে হবে। চাক্তাই খাল খনন ও জলাবদ্ধতা নিরসন জরুরি। মানুষকে তাদের অধিকার বুঝিয়ে দিতে হবে। আমরা ধর্ম বা মতবাদের বিভেদে রাজনীতি করি না।

তিনি আরও বলেন, আমরা এমন দেশে বাস করি, যেখানে ভৌগলিক স্বাধীনতা থাকলেও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নেই। মাস শেষে বেতন পেয়ে বাসায় ফিরতেও ছিনতাইয়ের ভয়ে থাকতে হয়। ব্যবসায় চাঁদা, চাকরিতে ঘুষ, হাসপাতালে ঘুষ—এসব বন্ধ করতে হবে। এ লক্ষ্যে আমরা রাজনীতি করছি।

জনসভায় এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, চট্টগ্রামকে সিঙ্গাপুর করতে হলে বন্দর উন্নয়ন করতে হবে। আমরা মনে করি, সরকার বন্দরের বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা গরিব দেশের সঙ্গে নয়, উন্নত দেশের সঙ্গে চুক্তি করতে চাই।

তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৯ মাসে এমন কী করলেন, যে তার ওপর আস্থা রাখা যায় না? আমরা যদি উন্নত দেশের সঙ্গে ব্যবসা করি, তাতে সমস্যা কোথায়?

বন্দরের শ্রমিক সংগঠন নিয়ে তিনি বলেন, শ্রমিক সংগঠনগুলোর বেশিরভাগ এখন ব্যবসা করছে। এগুলো লুটেরাদের সাম্রাজ্য গড়ছে।

তিনি আরও বলেন, যারা ক্ষমতায় যেতে মরিয়া, তারা যেন ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়। যদি তারাও দুর্নীতি, খুন-গুমের রাজনীতি করে, তাহলে ওয়াসিম-মুগ্ধ-আবু সাঈদরা আবারও রুখে দাঁড়াবে।

তিনি বলেন, এবি পার্টি তরুণদের নিয়ে নতুন এক বাংলাদেশ গড়ার কাজে নেমেছে—যেখানে মা-বোনেরা চিকিৎসা পাবেন, শিক্ষার্থীরা বিনা খরচে পড়তে পারবে, চাষিরা ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবেন, মেয়েরা নিরাপদে চলাফেরা করতে পারবে।

মিয়ানমারের মানবিক করিডোর নিয়ে তিনি বলেন, এই বিষয়ে শুধু আলোচনা হয়েছে, কার্যকর কিছু হয়নি। তাই মন্তব্যের আগে ভাবতে হবে। প্রফেসর ইউনূস জাতিসংঘ মহাসচিবকে এনেছেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভূমিকা রাখতে। আমরা সরকারের সব সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করি না, আবার অন্ধ সমর্থনও দিই না।

উপদেষ্টা মাহফুজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করা যেতে পারে, কিন্তু তাকে আঘাত করা ফৌজদারি অপরাধ।

জাহাজ ভাঙা শিল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই শিল্প ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। আগামী ১০ বছরে বিশ্বজুড়ে ১৫ হাজার জাহাজ ভাঙতে হবে। অথচ আমাদের দেশে পরিবেশের অজুহাতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সৃষ্টি করে এই শিল্পকে ধ্বংস করা হচ্ছে। ২৪ সালের নির্বাচনে দিল্লির গোলামিকে কবর দেওয়া হয়েছে, এখন কোনো পেছনের দরজা দিয়ে তাদের ফিরিয়ে আনা যাবে না।

আরএম 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
স্বর্ণ কিনবেন? জেনে নিন আজকের বাজারদর Dec 15, 2025
img
৩ দাবিতে আজ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা ডাকসুর Dec 15, 2025
img
রাজধানী ঢাকায় কমবে দিনের তাপমাত্রা Dec 15, 2025
img
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বেড়েছে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি, কমেছে দাম Dec 15, 2025
img
অস্ট্রেলিয়ায় বন্দুক হামলার ঘটনায় প্রাণহানি বেড়ে ১৬ Dec 15, 2025
img

চানখারপুলে ছয় হত্যা

হাবিবুর রহমানসহ ৮ আসামির বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু আজ Dec 15, 2025
img
ওসমান হাদির ঘটনায় মেহেরপুর সীমান্তে বিজিবির নিরাপত্তা জোরদার Dec 15, 2025
img
এমবাপে ও রদ্রিগোর গোলে আলাভেসের বিপক্ষে স্বস্তির জয় রিয়াল মাদ্রিদের Dec 15, 2025
img
এলাকার উন্নয়নে ঐক্যের আহ্বান হাবিবুর রশিদ হাবিবের Dec 15, 2025
img
শব্দদূষণকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে হবে: রিজওয়ানা হাসান Dec 15, 2025
img

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ

হলান্ডের জোড়া গোলে ক্রিস্টাল প্যালেসকে বড় ব্যবধানেই হারাল ম্যানচেস্টার সিটি Dec 15, 2025
img
আজ ওসমান হাদিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়া হবে সিঙ্গাপুর Dec 15, 2025
img
১৫ ডিসেম্বর: ইতিহাসের এই দিনে আলোচিত যত ঘটনা Dec 15, 2025
img

বুন্ডেসলিগা

টেবিলের তলানির দলের বিপক্ষে কোনোমতে হার এড়াল বায়ার্ন মিউনিখ Dec 15, 2025
img
ভোটাধিকার প্রয়োগ করে প্রবাসীদের দেশ গড়ায় অবদান রাখার আহ্বান Dec 15, 2025
img
সিডনির ঘটনায় প্রশংসায় ভাসছেন মুসলিম ফল ব্যবসায়ী Dec 15, 2025
img
বৃহস্পতিবারের মধ্যে চূড়ান্ত হচ্ছে বিএনপির শরিকদের আসন Dec 15, 2025
img
ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় মামলা Dec 15, 2025
img
তুরস্কে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত Dec 15, 2025
img
অস্ত্রসহ সাবেক রেলমন্ত্রীর সহচর গ্রেপ্তার Dec 15, 2025