দুর্নীতিবাজ আওয়ামীদের তালিকা করছে সিআইডি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনামলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের দুর্নীতিবাজ নেতাদের তালিকা করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা (সিআইডি)।

প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী এবং আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া নেতাদের বিষয়ে সারা দেশ থেকে গোয়েন্দা প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হচ্ছে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক কারবার, তদবির বাণিজ্য, পদ বাণিজ্যের মাধ্যমে যারা বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন, তাদের তালিকা তৈরির কাজ অনেক দূর এগিয়েছে বলে সিআইডি সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থবিত্ত গড়ে তোলা এসব নেতার নামে মামলা করা হবে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুযায়ী আদালতের মাধ্যমে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক এবং ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হবে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হবে। ইতোমধ্যে অনেককে আইনের আওতায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সুনির্দিষ্ট অপরাধে গ্রেপ্তারও হয়েছেন অনেকে।

এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের সাজা হতে পারে সর্বনিম্ন আট বছর থেকে সর্বোচ্চ ১২ বছর পর্যন্ত জেল। তবে কোনোভাবেই নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন সে ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

দুই মাস ধরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, পতিত আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মাঝে মধ্যে ঝটিকা মিছিল বের করছেন। রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ বিভিন্ন স্থানে মিছিল হচ্ছে। নেতাকর্মীদের সক্রিয় করে মাঠে নামানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের পলাতক নেতারা।

এ জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মিটিং করে দেশে থাকা বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা। মাঝে মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অডিও মিটিং করে নেতাকর্মীদের চরম মাত্রায় উসকানি দিচ্ছেন। ১৬ বছরের লুটপাটের মাধ্যমে অর্জিত টাকা খরচ করে সরকার ও দেশবিরোধী চক্রান্তে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা।

ইতোমধ্যে রাজধানীর গুলশানে গ্রেপ্তার হওয়া চারজনের কাছ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথ্য পেয়েছে, সরকারবিরোধী মিছিল করানোর জন্য কারা কারা টাকা দিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে রহস্যময় এক নারীকে খোঁজা হচ্ছে।

গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, খুলনায় একজন আইনজীবী টাকা ঢালছেন আওয়ামী লীগের মিছিলসহ পুনর্গঠনের জন্য। এভাবে সারা দেশে অনেকের বিষয়ে তথ্য পাওয়ার পর সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিষয়টি আলোচনা হয়।
শেখ হাসিনা ভারতে বসে বাংলাদেশবিরোধী উসকানি দিচ্ছেন। সাম্প্রদায়িক কার্ড খেলার চেষ্টা করছেন। শেখ হাসিনাকে থামানোর জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে ভারতের কাছে বার্তা পাঠানো হলে নরেন্দ্র মোদি জানিয়ে দিয়েছেন, শেখ হাসিনাকে থামানো সম্ভব নয়।

সূত্র বলছে, সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে নীতি-নির্ধারকরা আওয়ামী লীগকে থামানোর উপায় খুঁজছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডির পক্ষ থেকে থেকে আইনের আওতায় এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা দেওয়া হয়। এতে সংশ্লিষ্ট মহলের সায় মিলেছে। সবুজ সংকেত পাওয়ায় কাজে নেমে পড়েছে সংস্থাটি।

সূত্র আরও জানায়, অবৈধভাবে অর্জিত টাকা খরচ করে দেশের পাশাপাশি বিদেশেও নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে ফ্যাসিস্টের দোসররা। দেশে অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে থাকা আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন মিথ্যা ও উসকানিমূলক স্ট্যাটাস দিচ্ছেন।

শেয়ার করা হচ্ছে সরকার, বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ জুলাই বিপ্লবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশ নেওয়া অংশীজনদের নামে ভুয়া অনেক ভিডিও। উসকানিমূলক ও ঘৃণাসূচক নানা ধরনের মন্তব্য করে যাচ্ছেন অহরহ। ১৬ বছরে সব ধরনের অন্যায়, জুলুম, নির্যাতন করার পরও অবৈধভাবে অর্জিত বিপুল ধন-সম্পদ নিয়ে রীতিমতো সরকার উৎখাত এবং শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন তারা।

সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করতে চায় না সরকার। সরকার ও বিপ্লবের অংশীদার দলগুলোর এই মহানুভবতার সুযোগে আবার ফিরে আসার স্বপ্নে বিভোর ফ্যাসিস্টরা।

জানা গেছে, মানি লন্ডারিং বিধিমালা ২০১৯ অনুযায়ী ২৪ অপরাধে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি)। আইন অনুযায়ী অনুসন্ধানকালীন আদালতের আদেশে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা যায়। এ বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

বিধি অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীর ঘুস, দুর্নীতি ছাড়া যে কোনো মানুষের আর্থিক দুর্নীতি, ঘুস, চাঁদাবাজিসহ সব ধরনের আর্থিক দুর্নীতির অনুসন্ধান করতে পারে সিআইডি। এ ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন সাজা আট বছর জেল থেকে সর্বোচ্চ ১২ বছর জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে। গাজী জসিম সিআইডির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এ বিষয়ে কাজ শুরু হয়।

জানা গেছে, দেশব্যাপী বিশাল কর্মযজ্ঞের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে সিআইডির। স্বল্পতা রয়েছে লোকবল, ইকুইপমেন্ট ও অর্থের। রয়েছে কিছু প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জও। দেশের বিভিন্ন ইউনিটে যানবাহনের অপ্রতুলতা, কোনো কোনো জেলা ইউনিটে একটিও অপারেশনাল গাড়ি নেই। নিজস্ব স্থাপনায় অফিসের অভাব রয়েছে। সারা দেশে সিআইডির অধিকাংশ ইউনিটের অফিসই ভাড়া অফিস অথবা জেলা এসপি অফিসের ওপরে পরিচালিত হয়। পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে রয়েছে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের অভাব। এসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও কাজ চলছে সামর্থ্য অনুযায়ী।

সদ্য সাবেক সিআইডি প্রধান গাজী জসিম (বর্তমানে শিল্পাঞ্চল পুলিশের প্রধান) আমার দেশকে বলেন, আইন ও বিধি অনুযায়ী অপরাধ তদন্তে ও অপরাধী পাকড়াও করতে কাজ করছে সিআইডি।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আইএমডিবির শীর্ষ তালিকায় উজ্জ্বল নবীন তারকা আহান ও অনীত পাড্ডা Dec 05, 2025
img
লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে সরকারের ব্যর্থতা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Dec 05, 2025
রুটের প্রথম অস্ট্রেলীয় শতক, স্টার্কের বিশ্বরেকর্ড; ব্রিসবেনে রোমাঞ্চ Dec 05, 2025
img
৬ মাস কথায় বুঝেছি , নেনেই জীবনসঙ্গী : মাধুরী দীক্ষিত Dec 05, 2025
img
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ২০০ Dec 05, 2025
img
দর্শকের কাছে এই প্রজন্মের ‘সেরা অভিনেতা’ রণবীর সিং Dec 05, 2025
img
পপ তারকা কেটি পেরির সঙ্গে সম্পর্কের সিলমোহর দিলেন জাস্টিন ট্রুডো Dec 05, 2025
img
লি‌বিয়া থে‌কে দে‌শে ফির‌লেন আরও ৩১০ বাংলাদেশি Dec 05, 2025
img
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ৮ থানার ওসি বদলি Dec 05, 2025
img
ফরিদপুরে বাসের ধাক্কায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪ Dec 05, 2025
img
বড় কোনো সংকট না হলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত বিএনপি: রিজভী Dec 05, 2025
img
নির্বাচনকে পেছানোর ষড়যন্ত্র চলছে: মুফতি ফয়জুল করিম Dec 05, 2025
img
বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন : মির্জা ফখরুল Dec 05, 2025
img
চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র ফেরত পাঠিয়েছে ৩২৫৮ জন ভারতীয়কে Dec 05, 2025
img
জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকানোর শক্তি কারও নেই: প্রেস সচিব Dec 05, 2025
img
আসছে ‘ফ্যামিলি ম্যান’ সিজন ৪ Dec 05, 2025
img
আইফোনে চালু হলো চ্যাটজিপিটির ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট Dec 05, 2025
img
শেখ হাসিনা সরকারের কারা নির্যাতনেই খালেদা জিয়ার সংকটাপন্ন শারীরিক অবস্থা: মির্জা ফখরুল Dec 05, 2025
img
প্রথম বাংলাদেশী নারী মহাকাশচারী প্রার্থী সারাহ করিম Dec 05, 2025
img
মৌসুমী চ্যাটার্জি কেন সফলতার শীর্ষে যেতে পারেননি? Dec 05, 2025