দীর্ঘজীবী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের গল্প

জর্জ ওয়াকার বুশ, একজন বিখ্যাত মার্কিন রাজনীতিবিদ। ১৯৮৯-৯৩ মেয়াদে ছিলেন আমেরিকার ৪১তম প্রেসিডেন্ট। এর আগে ১৯৬৪ সালে রিপাবলিকান পার্টিতে যোগদানের পর প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। পেশাগত জীবনে ছিলেন একজন রাষ্ট্রদূত এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র পরিচালক। এছাড়া তার আরেকটি বড় পরিচয়, তিনি ৪৩তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ জুনিয়রের বাবা।

বুশ সিনিয়র ১৯২৪ সালের ১২ জুন ম্যাচাচুসেটসের মিল্টন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর জাপান যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাটি পার্ল-হার্বারে আক্রমণ করে। এসময় ১৮ বছর বয়সে বুশ সিনিয়র বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষ না করেই মার্কিন নৌবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৪৫ সালের সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার আগ পর্যন্ত তিনি নৌবাহিনীতে ছিলেন। অতঃপর ১৯৪৮ সালে ফিরে এসে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করেন। এরপর তিনি টেক্সাসে চলে যান এবং পারিবারিক তেল ব্যবসার দায়িত্ব নেন।

১৯৬৪ সালে চল্লিশ বছর বয়সেই তিনি মিলিয়নিয়ার হয়ে যান এবং ব্যক্তিগত তেল কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬৬ সালে টেক্সাস থেকে হাউজ অব রিপ্রেজেনটিটিভ এর সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন তাকে জাতিসংঘে রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করেন। ১৯৭৩ সালে রিপাবলিকান জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন বুশ সিনিয়র।

পরের বছরই প্রেসিডেন্ট গেরাল ফোর্ড তাকে চীনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেন। পরে সেখান থেকে চলে এসে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র পরিচালকের দায়িত্ব নেন তিনি। ১৯৮০ সালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের অধীনে ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান এবং ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি এ পদে ছিলেন।

১৯৮০ সালি তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৮৮৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার পরপরই তিনি পানামা ও পারস্য উপসাগরে সেনা অভিযান পরিচালনা করেন। তার সময়ে ১৮৮৯ সালে বার্লিন দেয়াল ভেঙ্গে দুই জার্মানি এক হয়। এর কিছু দিন পরই ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয় এবং স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হয়। এসব ঘটনায় প্রেসিডেন্ট বুশ সিনিয়রের পররাষ্ট্রনীতির প্রভাব রয়েছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন।

১৯৯০ সালে ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন কুয়েত দখল করেন। বুশ সিনিয়রের নির্দেশে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনী সেখানে অভিযান চালায় এবং কুয়েত দখলমুক্ত করে। তিনি উত্তর আমেরিকায় একটি পৃথক মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯২ সালে ‌‌‘নাফটা চুক্তি’ স্বাক্ষর করেন, যা ছিল তার অন্যতম একটি সফলতা।

১৯৯২ সালে ডেমোক্রেট প্রার্থী বিল ক্লিন্টনের কাছে তিনি পরাজিত হন। অতিরিক্ত করারোপ, অর্থনৈতিক মন্দা, ধারবাহিক বাজেট ঘাটতি ও স্নায়ুযুদ্ধোত্তর দূর্বল পররাষ্ট্রনীতিকে তার পরাজয়ের প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়। ১৯৯৩ সালে অবসরের পর তিনি বিভিন্ন মানবসেবামূলক কাজে জড়িয়ে পড়েন। এসময় হারিকেন ক্যাটরিনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার লক্ষ্যে তিনি ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের সঙ্গে মিলে ‘বুশ-ক্লিন্টন ক্যাটরিনা ফান্ড’ গঠন করেন।

মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই এ তহবিল ১শ’ মিলিয়ন ডলার অর্থ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। ২০০০ সালের নির্বাচনে তার ছেলে জর্জ বুশ জুনিয়র ৪৩তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এক্ষেত্রে বুশ সিনিয়রের ব্যক্তিগত কার্যক্রমের প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা হয়। ২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর ৯৪ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ সিনিয়র মারা যান। আর তিনিই ছিলেন সবচেয়ে দীর্ঘজীবী মার্কিন প্রেসিডেন্ট। 

 

টাইমস/এএইচ/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ঢালিউডের মেগাস্টারদের দাপট ও নতুন প্রজন্মের উত্থান Dec 24, 2025
img
ওসমান হাদিকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন নিলুফার মনি Dec 24, 2025
img
লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন তারেক রহমান Dec 24, 2025
img
বিয়ের আগে শেষবার ‘ব্যাচেলর হানিমুনে’ রাশমিকা- বিজয়! Dec 24, 2025
img
নাহিদ মুস্তাফিজের প্রশংসায় খুশদিল Dec 24, 2025
img
নাক ও ঠোঁটের গড়ন নিয়ে কটাক্ষ, ভেঙে পড়েছিলেন মাধুরী! Dec 24, 2025
img
বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত : প্রধান উপদেষ্টা Dec 24, 2025
img
পাপারাজ্জিদের বিতর্কে জয়া বচ্চনের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন বিকাশ পাঠক Dec 24, 2025
img
‘থ্রি ইডিয়টস’ সিক্যুয়েলে ‘রাজু রাস্তোগি’র চরিত্রে থাকছেন না শারমান জোশি Dec 24, 2025
img
নিজ বাড়ির সামনে ছাত্রদল নেতাকে হত্যা Dec 24, 2025
img
মধুর ক্যান্টিনে ভাঙচুর, গ্রেপ্তার ১ Dec 24, 2025
img
হাদির খুনিদের গ্রেফতার করতে না পারার খেসারত সিয়ামকে দিতে হয়েছে: জামায়াত আমির Dec 24, 2025
img
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে শুভশ্রীর শান্তির বার্তা Dec 24, 2025
img
ইতিহাস গড়লো স্বর্ণের দাম, রুপা-প্ল্যাটিনামেও ঊর্ধ্বগতি Dec 24, 2025
img
মনোনয়ন না দিলে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবো, আগেই হাইকমান্ডকে জানিয়েছি: রুমিন Dec 24, 2025
img
ধুরন্ধরের সাফল্যের আড়ালে আদিত্য ধরের নীরব লড়াই Dec 24, 2025
img
সাইফের সঙ্গে কারিশমার ছবি শেয়ার করে মশকরায় মাতলেন কারিনা! Dec 24, 2025
img
খেজুর গাছের মধ্যেই ধানের শীষ খুঁজে নিতে হবে: মনির হোসাইন কাসেমী Dec 24, 2025
img
বড়দিন উপলক্ষে জ্যাকুলিনকে ফের চমকে দিলেন সুকেশ! Dec 24, 2025
img
বিশ্বের সকল খ্রিষ্টান ধর্মালম্বীদের বড় দিনের শুভেচ্ছা জানালেন তারেক রহমান Dec 24, 2025