শেরপুরের লছমনপুরে ‘লায়ন’ নামে শাহীওয়াল জাতের বিশাল আকৃতির একটি গরু কোরবানির বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এটি এখন জেলার সবচেয়ে বড় আকর্ষণে পরিণত হয়েছে।
লছমনপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মতিন ও তার স্ত্রী ঝর্ণা বেগমের খামারে জন্ম ও বেড়ে ওঠা প্রায় ৩২ মণ ওজনের এই গরুটির দাম চাওয়া হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা।
ঝর্ণা বেগম বলেন, মেয়ের জমানো ২২ হাজার টাকা দিয়ে একটি গাভি কেনা হয়েছিল। সেখান থেকেই কয়েক ধাপে প্রজননের মাধ্যমে শাহীওয়াল জাতের এই গরুটির জন্ম। শুরু থেকেই বিশেষ যত্ন আর প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে বড় করে তোলা হয়েছে লায়নকে। প্রতিদিন প্রায় ৭০০ টাকার খাবার খাওয়ানো হয় এটিকে।
লায়নের স্বভাব অত্যন্ত শান্ত। প্রতিদিন তিনবার গোসল, সময়মতো খাবার, খোলামেলা পরিবেশে রাখা এবং কাঁচা ঘাস, খড়, ভুসি, ফলমূলসহ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাদ্যই তার বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে বলে জানান গৃহকর্তা মতিনের ছেলে মিলন।
গরুটি দেখতে প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে উৎসুক জনতা ও সম্ভাব্য ক্রেতারা ভিড় করছেন। বাজিতখিলা গ্রামের ফজলু মিয়া বলেন, এত বড় গরু আমি জীবনে দেখিনি।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলার পাঁচ উপজেলায় ছোট-বড় ১৩ হাজার ৬৬২ জন খামারি রয়েছেন। এ ছাড়া অনেকে ব্যক্তি উদ্যোগে গরু, ছাগল ও মহিষ পালন করছেন। চলতি বছর ঈদুল আজহা উপলক্ষে জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা ৬১ হাজার ২৪০টি হলেও প্রস্তুত রয়েছে ৮৫ হাজার ৭৬৩টি পশু। চাহিদার তুলনায় ২৪ হাজার ৫২৩টি বেশি গরু-ছাগল আছে।
পশুগুলোর মধ্যে গরু ৫৩ হাজার ৯২৫টি, ছাগল ২৫ হাজার ৯৫১টি, ভেড়া ৪ হাজার ৫৫৭টি এবং মহিষ ১ হাজার ৩২০টি। অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণে জেলার বাইরে পশু সরবরাহের সুযোগও তৈরি হয়েছে।
পশুদের নিরাপদ পরিবহন, বাজার ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে জেলায় একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। চলতি বছর প্রস্তুত থাকা কোরবানির পশুগুলোর সম্ভাব্য বাজারমূল্য ৫০০ কোটি টাকার বেশি ধরা হয়েছে।
গত বছর জেলার কোরবানির পশুর চাহিদা ছিল ৫৫ হাজার ২৩০টি এবং উৎপাদন ছিল ৮৩ হাজার ২৮৩টি। এ বছর চাহিদা ও উৎপাদন দুটোই বেড়েছে। জেলায় ২৬টি অনুমোদিত হাটে ২৪টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
শেরপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ফজলুল হক বলেন, লায়ন শেরপুরের সবচেয়ে বড় গরু। প্রকৃতিক খাদ্যের মাধ্যমে এই গরুটি মোটাতাজা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কোরবানির পশুকে অসদুপায়ে মোটাতাজা না করতে আমরা বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করেছি। পাশাপাশি, ভেটেরিনারি ফার্মেসিগুলোতে নিম্নমানের ওষুধসামগ্রী না রাখার বিষয়টি তদারকি করা হচ্ছে। কয়েক দফায় গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ কিছুটা বেড়েছে। আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি, যাতে জেলার জনগণ স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদভাবে কোরবানি সম্পন্ন করতে পারেন।
এমআর/টিএ