বিএনপি ফাঁদে, তারেক রহমান ঝুঁকিতে : জিল্লুর রহমান

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও উপস্থাপক জিল্লুর রহমান বলেছেন, লন্ডন বৈঠকের পর ‘বিএনপি ফাঁদে পড়েছে আর তারেক রহমান একটা বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন’।

সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া এক বিশ্লেষণে জনপ্রিয় এই বিশ্লেষক বলেন, লন্ডনের বৈঠক প্রফেসর ইউনূস এবং তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক গোটা বাংলাদেশের কৌতূহল ছিল। বৈঠক শেষে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের উচ্ছ্বাস শুরু হয়েছে। অনেকে নির্বাচনী প্রচারণও শুরু করে দিয়েছেন।

কেউ কেউ এটাকে সংঘাত এড়ানোর ক্ষেত্রে একটা বড় অর্জন বলে দেখছেন।

তিনি বলেন, প্রফেসর ইউনূসের সরকারের দিক থেকে এই বৈঠকটির ক্ষেত্রে উৎসাহ প্রকাশ করা হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে বিশেষ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পক্ষ থেকে তাতে সাড়া দেওয়া হয়। দ্বিধা ছিল কিনা জানি না।

তবে এই সাড়া দিয়ে যে তারেক রহমান ভালো কাজ করেছেন সেটা আমি সম্ভবত আগেও বলেছি।

জিল্লুর রহমান বলেন, আলোচনায় তারেক রহমান যথেষ্ট সৌজন্যতা দেখিয়েছেন। প্রফেসর ইউনূসের জন্য উপহার নিয়ে গেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার সালাম তাকে পৌঁছে দিয়েছেন। কিন্তু যেখানটাতে সবাই খুশি সেখানটাতে আমি একটু ভীত সন্ত্রস্ত।

আমার কাছে পুরা বিষয়টাতে মনে হয়েছে বিএনপি ফাঁদে পড়েছে, আর তারেক রহমান একটা বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন। কেন বলি? বিএনপি বলছে যে ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হবে। অফিশিয়ালি ঘোষণা করা হয়নি। জয়েন্ট স্টেটমেন্টের মধ্যেও সেটা নেই।

এটা ধারণা করা গেছে যে, রোজার আগের সপ্তাহে মানে হচ্ছে রোজা ১৮ তারিখ থেকে শুরু হতে পারে।

নির্বাচনটা হবে ১২ তারিখে। যেটা পত্রপত্রিকার খবর। ভেতরের খবর তো আমরা জানি না।

তিনি বলেন, দুই নেতা একসঙ্গে প্রায় ৪০ মিনিট কথা বলেছেন আমরা শুনেছি। যৌথ প্রেস কনফারেন্সে দেখেছি। কিন্তু যেটা জানা গেছে যে সেটা হচ্ছে, বিএনপি বলেছে যে নির্বাচনটা রোজার আগে করার প্রস্তাব। আমরা একদিন জানতাম যে বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইছে এবং তারা মনে করতো এই নির্বাচনটা আরো আগেই করা সম্ভব।

বিএনপির অনেক নেতার বক্তব্য আমরা শুনেছি। প্রফেসর ইউনূস ডিসেম্বর থেকে জুন বলেছেন। ডিসেম্বর থেকে জুন বললে ডিসেম্বরও হতে পারে জুন মাসেও হতে পারে। ঈদের আগে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এটাকে এপ্রিলের প্রথমার্ধের কথা বলেছেন। এখন ধরা যাক বিএনপি যদি আন্দোলন সংগ্রাম বাদ দিয়ে এপ্রিলেও রাজি হয়ে যেত তাহলে দায় দায়িত্বটা সরকারের উপরে চাপতো। কিন্তু বিএনপি যখন রোজার আগে চাইছে এবং সেটা ডিসেম্বর থেকে সরে গিয়ে চাইছে এখন দায় দায়িত্ব অনেকখানি বিএনপিকেও নিতে হবে। কারণ এটা সমঝোতা দুপক্ষ মিলে এবং দুপক্ষ মিলেই প্রেস কনফারেন্স করেছে।

তিনি আরো বলেন, যারা এতো উচ্ছ্বাস আনন্দ প্রকাশ করছেন তারা এই যৌথ স্টেটমেন্ট ভালো করে পড়েছেন কিনা? বা ইন বিটুইন দ্য লাইনস কি আছে সেটা বোঝার চেষ্টা করেছেন কিনা। যেমন ধরা যাক বলা হয়েছে স্টেটমেন্টে, নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি শেষ হলে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচনটা হতে পারে। প্রথম কথা ১২ তারিখ হচ্ছে সেটা বলা হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলেই যে ওই তারিখে নির্বাচন হতে হবে সেটাও কিন্তু কোথাও নেই। বাংলাদেশে রেকর্ড আছে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার পরেও সেই তারিখে নির্বাচন না হওয়ার।

জিল্লুর রহমান বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান স্টেটমেন্টটা পড়েছেন। পাশে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বসা ছিলেন। সেখানে বলা হয়েছে, সংস্কার এবং বিচারকার্যে যথেষ্ট অগ্রগতি হলে এই নির্বাচন হতে পারে। আমার প্রশ্ন এই ১০ মাসে কি সংস্কার হয়েছে? আর পরের ১০ মাসে যে হবে তার গ্যারান্টিটা কোথায়? বিচারকার্যে কি এমন গতি দেখলাম আমরা যে পরের ১০ মাসে সেটা হবে? আমার প্রশ্ন বিএনপি নেতাদের কাছে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের যে দাবি সেটাকে আসলে বিএনপি যে মোমেন্টামটা তুলেছিল এর মধ্যে সেনাপ্রধানের বক্তব্য আছে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের চাওয়া আছে, আমিও অনেকবার বলেছি, আমার মতো অনেকেই বলেছেন বিএনপির এই চাওয়াটাকে। বিএনপি যে একটা মোমেন্টাম তুলেছিল সেটাকে আসলে রিফিউজ করে দেওয়া হলো।

এসএম   

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বিশ্বকাপ বাছাইয়ের শেষ ম্যাচের আগে রোনালদোর আবেগঘন বার্তা Nov 16, 2025
img
শুটিংয়ে দুর্ঘটনার কবলে অভিনেত্রী তিয়াসা Nov 16, 2025
img
মূলপর্বে খেলার আশা নিয়ে চীন যাচ্ছে বাংলাদেশ Nov 16, 2025
img
সৌদি প্রিন্সের যুক্তরাষ্ট্র সফর ; সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত Nov 16, 2025
img
ময়মনসিংহে এনসিপি নেতার পদত্যাগ Nov 16, 2025
img
ময়মনসিংহ বোর্ডে এইচএসসিতে ফেল থেকে পাস করেছে ২২৫ জন Nov 16, 2025
img
মধ্য বাড্ডায় বাসে আগুন, ঘটনাস্থলে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস Nov 16, 2025
img
এনসিপির যুব সংগঠনের নেত্রী ঐশীর পদত্যাগ Nov 16, 2025
img
জীতু ও দিতিপ্রিয়ার মনোমালিন্যের ঝুঁকিতে ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ Nov 16, 2025
img
এনএসসিতে পাঠানো চিঠিতে নকল স্বাক্ষর, দাবি নারী ক্রিকেটারের Nov 16, 2025
img
মিরপুরে মেট্রো স্টেশনের নিচে ককটেল বিস্ফোরণ Nov 16, 2025
img
উগান্ডাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করতে চায় বাংলাদেশ Nov 16, 2025
img
আন্দোলনে আহত শিক্ষিকার মৃত্যু, সোমবার কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচি Nov 16, 2025
img
বাড্ডায় বাসে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ Nov 16, 2025
img
চট্টগ্রামে যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার Nov 16, 2025
img
নেভেস ও ফের্নান্দেসের হ্যাটট্রিক, আর্মেনিয়াকে ৯-১ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপে পর্তুগাল Nov 16, 2025
img
হাসিনার রায় দেশব্যাপী উদযাপন করব : সাদিক কায়েম Nov 16, 2025
img
এনসিপি কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ Nov 16, 2025
img

মানবতাবিরোধী মামলা

আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত দাবি রাষ্ট্রপক্ষের Nov 16, 2025
img
ভারত এজেন্ডা বাস্তবায়নে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বারবার হস্তক্ষেপ করে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী Nov 16, 2025