ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের চলমান অবলাবস্থা নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
আজ বুধবার (১৮ জুন) সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতির উন্নতির জন্য আমরা সর্বোচ্চ ধৈর্য নিয়ে পরিপক্ব আচরণ করছি।’
এদিন একজন সাংবাদিক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে প্রশ্ন করেন, ‘সিটি করপোরেশন মিলনায়তনে ইশরাক হোসেন মিটিং করছেন। তিনি আপনাকে দায়ী করেছেন।
সার্বিক বিষয়ে কী বলবেন?
এর জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আপনারা জানেন, রিটের কারণে প্রায় এক মাস বিষয়টি বিচারাধীন ছিল। আমাদের স্থানীয় সরকার বিভাগকে ওই রিটের পক্ষভুক্ত করা হয়েছিল। প্রথম দফায় রিটটি আদালত খারিজ করে দেওয়ার পর আপিল বিভাগে আবার আবেদন করেন বাদী। তখন বিষয়টি আবার বিচারাধীন হয়ে যায়।
বিচারাধীন কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার সুযোগ আমাদের নেই। এতে আদালত অবমাননার আশঙ্কা থাকে। সেই সময় এ বিষয়ে আমাদের কোনো উদ্যোগ নেওয়ার সুযোগ ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী ২৬ মে ছিল শপথ প্রদানের শেষ দিন।
একটি ফাইলও উত্থাপন করা হয়েছিল শপথের বিষয়ে। ফাইলটি আমার টেবিল পর্যন্ত এসেছিল। তখন আমরা অনানুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত জানতে চাই। আইন মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, যেহেতু বিষয়টি বিচারাধীন, সেহেতু শপথ দেওয়ার সুযোগ নেই। এতে আদালত অবমাননা হতে পারে।
সেই জায়গা থেকে গেজেটের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ১ জুন সিটি করপোরেশনের মেয়াদও শেষ হয়। এরপর আমাদের আর শপথ প্রদানের সুযোগ নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘আপিল বিভাগ থেকে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছিল যে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন আর নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। কিন্তু তার পরবর্তীতে সিটি করপোরেশনকে এক ধরনের অবরুদ্ধ করে নাগরিক সেবা বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। এখন সিটি করপোরেশন দখল করে ফেলার কারণে নাগরিক পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণে প্রায় এক কোটি মানুষের বসবাস। তাদের দৈনন্দিন অপরিহার্য সেবাগুলো বন্ধ হয়ে গেলে এটা আমার জন্য এবং সরকারের জন্য বড় ধরনের ব্যর্থতা। আমাদের আহ্বান, ইশরাক হোসেন আইনি বিষয়টিকে বিবেচনা করবেন। যেহেতু বিএনপির সঙ্গে সরকারের ভালো বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে, এই সৌহার্দ্য পরিবেশ আমরা ধরে রাখতে চাই। সেটা ধরে রাখার জন্য সব পক্ষকেই দায়িত্বপূর্ণ আচরণ করতে হবে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিকে নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। আমি তাকে গণ-অভ্যুত্থানের একজন হিসেবে মনে করি। যে কারণে আমি তাকে টার্গেট করে কোনো বক্তব্য দিইনি। আমরা আরো দায়িত্বপূর্ণ আচরণ প্রত্যাশা করি।’
তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন তালাবদ্ধ করে সরকারি কাজে বাধা, কর্মকর্তাদের কাজে বাধা প্রদান, মেয়রের চেয়ারে বসা—এগুলো আমাদের প্রচলিত আইনের চোখে অপরাধ। প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমি কখনো একা কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি, এটা নেওয়ার সুযোগও আমার নেই।’
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘ইশরাক ভাই নিজেও জানেন এ বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা হয়েছে। তাহলে কেন আমাকে টার্গেট করা হচ্ছে? আমার মনে হয়, এ বিষয়টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এর কিছু প্রমাণও আমরা পেয়েছি। আমার এলাকার স্থানীয় বিএনপির নেতা এ বিষয়টি নিয়ে উসকাচ্ছেন। এটাকে কেন্দ্র করে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিও উঠেছিল। এ নিয়ে জাতীয় ঐক্যও বিনষ্ট হয়েছিল। ৫ আগস্টের পর এ বিষয়টি নিয়ে আমরা বড় একটি পরিস্থিতি পার করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ইশরাক হোসেনকে গণ-অভ্যুত্থানের অংশীজন এবং তরুণ প্রজন্মের একজন আইডল। আমরা অতীতে তার সাহসী কার্যক্রম দেখেছি। সেই জায়গা থেকে আমার মনে হয় কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য তাকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। সেটা এখনো করা হচ্ছে। আমরা আলোচনার ভিত্তিতে এর সমাধান করতে চাই।’
স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে আর কিছু না হলেও শুধু সিটি করপোরেশনগুলোতে নির্বাচন দেওয়ার আলোচনা করেছি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে কয়েক দফায় আলোচনা হয়েছে।
তবে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। আর রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ছাড়া এ সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। আমরা যেহেতু জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ পেয়েছি; এখন জনগণের কথা চিন্তা করে সিটি করপোরেশনগুলোতে নির্বাচনের বিষয়ে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে একটা জায়গায় আসা উচিৎ। এটা নির্বাচন কমিশনের জন্যও প্রস্তুতি হতে পারে।
জনগণ একমাস ধরে সেবা পাচ্ছে না। এক ধরনের ক্ষোভ জন্ম নিচ্ছে? আপনারা আর কতদিন এমন পরিস্থিতি দেখবেন?- এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, নাগরিক সেবা যেকোনোভাবেই হোক চালু রাখার চেষ্টা করছি। তবে আমাদের ৪০ শতাংশ সেবা কমে গেছে। আমাদের আহ্বান, জনগণের নিরাপত্তা ও জনসেবার প্রয়োজনে সকলকে দায়িত্বশীল আচরণ করা প্রয়োজন। সেটার জন্য আমরা সর্বোচ্চ ধৈর্য ও পরিপক্ব আচরণ করার চেষ্টা করছি। আবেগের বশবতি না হয়ে কিংবা ব্যক্তিগত লাভের কথা চিন্তা না করে বৃহৎ ফোরামে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে এ ধরনের কার্যক্রমে নিরুৎসাহিত করার কথা বলা হয়েছে। আমরা এটাকে সাধুবাদ জানাই। তবে একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতি দল হিসেবে এটাকে বন্ধ করা বিএনপির দায়িত্ব। আমরা আশা করছি বিএনপি সেটা করবে। যে জনভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে সেটাও দ্রুত সমাধান হবে।
তিনি আরো বলেন, দক্ষিণ সিটি প্রসঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে প্রথম থেকেই আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনটা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। কারণ অনেক বড় বড় সিদ্ধান্ত হচ্ছে আলোচনার ভিত্তিতে। সে তুলনায় এই ছোট বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যাবে না- এটা আমি বিশ্বাস করি না। তবে প্রথমদিকে আন্দোলনটাকে আলোচনার পথে না নিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।
এসএম/এসএন