ইরানে ফের সরকার পতনের ছক

ইসরায়েল-ইরান সামরিক উত্তেজনার মধ্যেই নতুন করে দানা বাঁধছে সরকার পরিবর্তনের আশঙ্কা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি হুমকি দিয়েছেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেয়েই ‘আমেরিকার জন্য সহজ লক্ষ্য’। খবর আল জাজিরা

মঙ্গলবার ট্রুথ সোশ্যাল-এ এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘আমরা তাকে (খামেনেয়েই) এখনই সরাচ্ছি না… অন্তত এখন না। তবে আমাদের ধৈর্য ফুরিয়ে আসছে।’

হোয়াইট হাউস লন থেকে বুধবার আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা যুদ্ধবিরতি চাই না, চাই নিরঙ্কুশ বিজয়। আর বিজয় মানে, ইরানের আর কোনো পারমাণবিক অস্ত্র থাকবে না।’

সরকার পরিবর্তনের ইঙ্গিত?

ট্রাম্প প্রশাসন যখন ইসরায়েলের ইরানবিরোধী অভিযানে সামরিক সহায়তা দেয়ার চিন্তা করছে, তখনই তার নিজ দলের অভ্যন্তরেও মতবিরোধ শুরু হয়েছে। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী টাকার কার্লসন ও স্টিভ ব্যানন এই অভিযানের উদ্দেশ্যকে ‘সরকার পরিবর্তন’ হিসেবে দেখছেন।

কার্লসন বলেন, ‘ইরানিরা আমার শত্রু নয়। এটা একেবারে অরওয়েলীয় পদ্ধতি, আমাদের বলা হচ্ছে কাকে ঘৃণা করতে হবে।’

‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’: ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?

ইসরায়েল গত শুক্রবার ইরানে হামলা শুরু করে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে একটি সামরিক অভিযানে। প্রতীকের দিক থেকেও এর তাৎপর্য গভীর-সিংহ ও তরবারি বহু শতাব্দী ধরে পারস্য সাম্রাজ্যের প্রতীক। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এক ভিডিও বার্তায় ইরানিদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমরা আশা করি এই অভিযান আপনাদের স্বাধীনতার পথ প্রশস্ত করবে।’

১৭ জুন ইসরায়েলের ফার্সি ভাষার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা একটি ছবিতে দেখা যায়-তরবারি হাতে সিংহ ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের বর্তমান পতাকাকে বিদ্ধ করছে। অনেকে একে ১৯৭৯-পূর্ব ইরানের প্রতি এক ধরনের ‘নস্টালজিক ডাক’ বলে মনে করছেন।

১৯৫৩: ইরানে প্রথম পশ্চিমা হস্তক্ষেপ

ইরানে সরকার পরিবর্তনের জন্য পশ্চিমা বিশ্ব প্রথম সক্রিয় হয় ১৯৫৩ সালে। জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক যখন দেশের তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য যৌথভাবে ‘অপারেশন আজাক্স’ চালায়। সিআইএ ও এমআই৬ মোসাদ্দেককে উৎখাত করে মার্কিনপন্থী শাহকে ক্ষমতায় বসায়। পরবর্তীতে সেই শাহের দমন-পীড়ন থেকেই জন্ম নেয় ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লব।

আজকের ইরান, খামেনির প্রতিক্রিয়া 

বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়েই বুধবারের ভাষণে ট্রাম্পের ‘নির্বিশেষ আত্মসমর্পণ’ দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘এই জাতি কখনোই আত্মসমর্পণ করবে না। যুক্তরাষ্ট্র যেন বুঝে রাখে, যেকোনো সামরিক আগ্রাসনের ফলাফল হবে ভয়াবহ।’ এর উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘তাহলে বলি, শুভ কামনা।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, একদিকে ইসরায়েল প্রতীকী বার্তা ও সামরিক চাপ বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ট্রাম্প ও তার সহযোগীরা ফের ইরানে সরকার পরিবর্তনের পুরনো পথেই হাঁটছেন। আন্তর্জাতিক কূটনীতি এখন এক নতুন স্নায়ুযুদ্ধের মুখোমুখি।

আরএম 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মুরাদ-তাইজুলের ঘূর্ণিতে ইনিংস ব্যবধানে জিতল বাংলাদেশ Nov 14, 2025
img
একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক : নুরুল হক নুর Nov 14, 2025
img

প্রেস সচিব শফিকুল আলম

পত্রিকা, টিভি চ্যানেল, অনলাইনগুলো ইচ্ছেমতো বানিয়ে বানিয়ে খবর ছাপিয়ে পার পেয়ে যায় Nov 14, 2025
img
মিরসরাইয়ে পদ ফিরে পেলেন বিএনপি-যুবদলের ৩ নেতা Nov 14, 2025
img
স্পটিফাই-এ এবার দেখা যাবে ভিডিও গানও! Nov 14, 2025
img

তিন উপদেষ্টার অপসরণের দাবি আট দলের

একই দিনে গণভোট-নির্বাচন সংস্কারকে গুরুত্বহীন করবে : ডা. তাহের Nov 14, 2025
img
পৃথিবী ও সূর্যের দিকে ধেয়ে আসছে রহস্যময় ধূমকেতু Nov 14, 2025
img
জুলাই সনদ যেভাবে স্বাক্ষরিত হয়েছে বিএনপি অক্ষরে অক্ষরে সেটি পালনে প্রস্তুত: সালাহউদ্দিন আহমদ Nov 14, 2025
img
গাজার দিকে ধেয়ে আসছে ভয়াবহ ঝড়, বড় ঝুঁকিতে ৯ লাখ ফিলিস্তিনি Nov 14, 2025
img
রচনা ব্যানার্জি নয়, এবার ‘দিদি’দের সামলাবেন মীর আফসার! Nov 14, 2025
img
ফ্যামিলি ম্যান ৩: মনোজের ২২ কোটি, সহঅভিনেতাদের পারিশ্রমিক কত? Nov 14, 2025
img
লকডাউন নয়, ভাষণ শোনার জন্য রাস্তা ফাঁকা : মাসুদ কামাল Nov 14, 2025
img
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন আর নিরপেক্ষ নেই: তাহের Nov 14, 2025
img
পর্দায় আসতে চলেছে নরেন্দ্র মোদীর মায়ের বায়পিক Nov 14, 2025
img
শোয়েব মালিকের সাথে বিচ্ছেদের পর প্যানিক অ্যাটাকে ভুগতেন সানিয়া মির্জা Nov 14, 2025
img
আজ ঘোষণা করা হবে শাকসু নির্বাচনের তারিখ ও তফসিল Nov 14, 2025
img
সমালোচিত হয়েও রাশমিকার ‘দ্যা গার্লফ্রেন্ড’ সিনেমায় মুগ্ধ দর্শক Nov 14, 2025
img
লাঞ্চে গেছে আয়ারল্যান্ড, দীর্ঘ হল বাংলাদেশের জয়ের অপেক্ষা Nov 14, 2025
img
স্থগিত করা হলো জেমস-আলী আজমতের কনসার্ট Nov 14, 2025
img
নিরপরাধ আওয়ামী লীগের সঙ্গে জুলুম করব না : রাশেদ খান Nov 14, 2025