থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে ফের বড় ধাক্কা। প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার সঙ্গে কম্বোডিয়ার সাবেক নেতা হুন সেনের একটি গোপন ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সরকার চরম সংকটে পড়েছে। এরই মধ্যে প্রধান জোটসঙ্গী ভূমজাইথাই পার্টি সরকার থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। খবর আল জাজিরা
জোট ভেঙে যাওয়ায় মাত্র ১০ মাসের মাথায় পেতংতার্ন সরকারের টিকে থাকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। নতুন নির্বাচনের জোরালো গুঞ্জন চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
১৫ জুনের ওই ফোনালাপে পেতংতার্ন কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনকে ‘চাচা’ বলে সম্বোধন করেন এবং সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনের অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘থাই সেনা কর্মকর্তারা শুধু কুল দেখাতে চান।’
এই মন্তব্যে থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনীর মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়। রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয় তীব্র প্রতিক্রিয়া।
এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে পেতংতার্ন বলেন, ‘আমার উদ্দেশ্য ছিল শান্তিপূর্ণ সমাধান, ফাঁস হয়ে যাবে ভাবিনি। এখন থেকে আরও সতর্ক থাকব।’ তিনি জানান, আর কখনো হুন সেনের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলবেন না।
বুধবার রাতে ভূমজাইথাই পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ত্যাগ করে। দলটির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে দেশের মর্যাদা ও সেনাবাহিনীর সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে।’
তাদের ৬৯ জন এমপি চলে যাওয়ায় এখন পেউ থাই পার্টির নেতৃত্বাধীন জোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই।
বিরোধী পিপলস পার্টির নেতা নাট্থাফং রুয়েংপন্যাউয়াত বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জনগণের আস্থা হারিয়েছেন। সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচনের ডাক দেয়া হোক।’
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাজধানী ব্যাংককে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সামনে শত শত বিক্ষোভকারী জমায়েত হয়ে পদত্যাগ দাবি জানায়।
থাই সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল পানা ক্লাওপ্লদতুক বলেন, ‘গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
থাইল্যান্ডে অতীতে ১২ বার সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে। তাই নতুন করে অভ্যুত্থানের আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশ্লেষকরা।
ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ান রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানায়। থাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ‘এটি কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন।’
হুন সেন জানান, তিনি ফোনালাপ রেকর্ড করে ৮০ জনের সঙ্গে শেয়ার করেছিলেন ‘ভুল বোঝাবুঝি এড়ানোর জন্য।’
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী ‘এমেরাল্ড ট্রায়াঙ্গেল’ এলাকায় মে মাসে সংঘর্ষে এক কম্বোডিয়ান সৈন্য নিহত হয়। এরপর থেকেই উত্তেজনা বাড়তে থাকে।
পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা, যিনি দেশটির রাজনৈতিক প্রভাবশালী তাকসিন পরিবার থেকে উঠে এসেছেন, এবার তার প্রথম মেয়াদেই চাপে পড়েছেন।রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সেনাবাহিনীর অসন্তোষ একত্রে জটিল পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে।
আগামী কয়েক দিনেই স্পষ্ট হয়ে যাবে, থাইল্যান্ড নতুন নির্বাচনের পথে হাঁটছে, না কি আবারও সামরিক হস্তক্ষেপের মুখে পড়বে।
আরএম