চলছে পাল্টাপাল্টি হামলা, বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতি

ইরান-ইসরাইল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত হবে কি না এই বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জবাবে তেহরান বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র সংঘাতে যোগ দিলে নরকে পরিণত হবে পুরো অঞ্চল। আর নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, শাসক পরিবর্তন নয়, ইরানের পরমাণু ও ব্যালিস্টিক কর্মসূচি ধ্বংস করাই তাদের মূল লক্ষ্য। এদিকে, সপ্তম দিনেও সামরিক স্থাপনায় পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে ইরান-ইসরাইল। এতে ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে দুপক্ষেরই।

পাল্টপাল্টি হামলা অব্যাহত রেখেছে ইরান ও ইসরাইল। ইসরাইলি ড্রোন ও বিমান একযোগে আঘাত হেনেছে তেহরানের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটিতে। ইরানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা শাখার বিশেষ বাহিনীর সদর দফতর, সম্প্রচার কেন্দ্র ও গুরুত্বপূর্ণ ভবনে চালানো হয়েছে হামলা। ইসরাইল বলছে, এসব স্থাপনাই তাদের জন্য কৌশলগত হুমকি। প্রতিটি হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানকে দুর্বল করে দেয়া এবং পরমাণু কর্মসূচির সক্ষমতা ধ্বংস করা।

তেহরানে হামলার পর একাধিক জায়গায় অনুষ্ঠিত হয় নিহতদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আহভাজ শহরে কফিন বহন করে শোকমিছিলে অংশ নেন শত শত মানুষ। ইরান দাবি করছে, সাধারণ মানুষের ওপরও হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। যদিও এসব হামলাকে 'সুনির্দিষ্ট সামরিক অভিযানের' অংশ বলেই দাবি করছে নেতানিয়াহু বাহিনী।

ইসরাইলি হামলার জবাবে ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ধরনের ড্রান দিয়ে পাল্টা আঘাত হেনেছে ইরানও। ইসরাইলের একটি হাসপাতাল লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। ইসরাইলি বাহিনী দাবি করেছে, ইরানের হামলায় সামরিক ঘাঁটি ছাড়াও বেসামরিক স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এসব ভবন ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে বলে দাবি ইরানের।

যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের হামলায় যোগ দিলে পুরো অঞ্চলে নেমে আসবে নরক, এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ নয়। তার মতে, যদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এতে জড়ান, তবে ইতিহাসে তিনি চিহ্নিত হবেন এমন এক নেতা হিসেবে, যিনি এমন একটি যুদ্ধে পা রেখেছিলেন, যার সঙ্গে তার দেশের স্বার্থের কোনো মিল ছিল না।

এদিকে, ইরানে হামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে হামলা শুরুর বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি তিনি। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ইরানের বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প। এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত স্টিভ ওইটকফ ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির মধ্যে কয়েক দফা ফোনালাপ হয়েছে।

ইরান বলছে, যদি ইসরাইল হামলা বন্ধ না করে, তারা পরমাণু আলোচনায় ফিরবে না। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরমাণু কর্মসূচি থামানোই ট্রাম্পের প্রধান লক্ষ্য। তবে প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগে পিছপা হবেন না তিনি।

ইসরাইলি সামরিক গোয়েন্দা প্রধানের মতে, ইরান এখন আর দূরবর্তী হুমকি নয়, বরং সরাসরি সংঘাত উপযোগী শক্তি। সে অনুযায়ী হামলার গতি আরও বাড়াতে যাচ্ছে তেল আবিব। এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে নিরাপত্তা জটিল হয়ে পড়েছে। আকাশপথ বন্ধ থাকায় নৌপথে সাইপ্রাসে পৌঁছেছে শত শত ইসরায়েলি নাগরিক। লারনাকা ও লিমাসোলে ক্রুজ জাহাজে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে তাদের।

তীব্র হামলার মধ্যেও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, শাসক পরিবর্তন নয়, বরং পরমাণু ও ব্যালিস্টিক কর্মসূচি ধ্বংস করাই তাদের মূল লক্ষ্য। তবে এর ফলস্বরূপ ইরানি সরকার দুর্বল হয়ে পড়লেও তা হবে কেবল একটি 'ঘটনাপ্রবাহ', কোনো নির্ধারিত উদ্দেশ্য নয়।

আরআর/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আগামীকাল প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে এনসিপি Nov 14, 2025
img
রাতে পার্টি দেয়ার চুক্তিতে বাসে আগুন দিতে রাজি হন ৩ কলেজ শিক্ষার্থী Nov 14, 2025
img
মাগুরায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রাণ গেল ২ জনের Nov 14, 2025
img
ওসমান হাদিকে কল ও টেক্সটে হত্যার হুমকি Nov 14, 2025
img
কোটাসহ বেশ কিছু পরিবর্তন এনে স্কুলে ভর্তির নতুন নীতিমালা প্রকাশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের Nov 14, 2025
img
নিউমুরিং টার্মিনাল চুক্তি প্রক্রিয়ার রুল শুনানি ১৯ নভেম্বর Nov 14, 2025
img
মাত্র ২৯ দিনের ব্যবধানে চট্টগ্রামের নতুন ডিসি জাহিদুল Nov 14, 2025
img
দুর্নীতির অভিযোগে ২ মন্ত্রীকে বরখাস্ত করলেন জেলেনস্কি Nov 14, 2025
img
আবার মঙ্গল অভিযানে নাসার দুই মহাকাশযান Nov 14, 2025
img
আজ বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা, গণনা শুরু Nov 14, 2025
img
বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস আজ Nov 14, 2025
img
পোড়া জিনিস বারবার পুড়িয়ে কি আ. লীগকে দমানো যাবে : মোস্তফা ফিরোজ Nov 14, 2025
img
বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে দিল্লি, দ্বিতীয় ঢাকা Nov 14, 2025
img
মেঘনায় ট্রলার ডুবির ঘটনায় দুই যুবক নিখোঁজ Nov 14, 2025
img
এনসিপির মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের সময় বাড়ল Nov 14, 2025
img
ট্রাম্পের কাছে তথ্যচিত্রের জন্য ক্ষমা চেয়েছে বিবিসি Nov 14, 2025
img
কুড়িগ্রামের নতুন ডিসি অন্নপূর্ণা দেবনাথ Nov 14, 2025
img
পঞ্চগড়ে শীতের তীব্রতা বাড়ছে, তাপমাত্রা নামলো ১৪ ডিগ্রিতে Nov 14, 2025
img
গাজায় ধ্বংস প্রায় ৩ লাখ বাড়ি, শীতে তাঁবুতেই আশ্রয় নিচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা Nov 14, 2025
img
রাজধানীতে হালকা শীতের আমেজ, সকাল শুরু ১৯ ডিগ্রি তাপমাত্রায় Nov 14, 2025