আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দাঁড়িয়ে থেকে শুধু বাঁশি বাজায় : আব্দুন নূর তুষার

সম্প্রতি একটি টক শোতে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রিয় উপস্থাপক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আব্দুন নূর তুষার এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির কোষাধ্যক্ষ ও যুগ্ম সদস্যসচিব সাইফ মোস্তাফিজ। অনুষ্ঠানে ফলমেলার শেষের দিনে ঘটে যাওয়া লুটপাটের একটি ভাইরাল ভিডিও নিয়ে আলোচনা হয় সেখানে।

শেষ পর্যন্ত আমাদের ফলমেলাতেও লুটপাট করতে হয়েছে, উপস্থাপকের এ প্রশ্নের জবাবে আব্দুন নূর তুষার বলেন, ‘গণমানুষের নৈতিকতা আসলে তৈরি হয় সমাজে বিরাজমান পরিস্থিতির ওপরে।’

তিনি বাটার দোকানে ঢুকে জুতা লুটপাটের ঘটনা মনে করিয়ে দিলে বলেন, ‘গণলুটপাটের একটা সংস্কৃতি কিছুদিন ধরে চালু হয়েছে।

এর কারণ হচ্ছে, ‘আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দাঁড়িয়ে থেকে শুধু বাঁশি বাজায়। কিন্তু এই লুটেরাদের কাউকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘এক টাকা লুট করলেও লুট, এক কোটি টাকা লুট করলেও লুট। চুরির অপরাধটি কী পরিমাণ আপনি চুরি করেছেন তার ওপরে নির্ভর করে না।

যেমন আপনি ৩১ পেয়েও ফেল করতে পারেন, আবার শূন্য পেয়েও ফেল করতে পারেন। যিনি ৩১ পেয়েছে তিনি যদি শূন্যকে এসে বলেন, আমি তোমার চেয়ে বেশি নম্বর পেয়ে ফেল করেছি। অতএব, আমি তোমার চেয়ে বেশি শিক্ষিত, ব্যাপারটা আসলে তা নয়। দুজনই ফেল করেছেন।

সে রকম এই লুটপাটের বিষয়টি এভাবে ছড়িয়ে পড়ছে ।’

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘এই লুটপাটের বিরুদ্ধে, এই গণসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, তার প্রতি আমি বলব যে, কর্তৃপক্ষ উদাসীনতা এবং এক ধরনের উপেক্ষা বা অবহেলা প্রদর্শন করেছেন।’

আব্দুন নূর তুষার আরো বলেন, পাঞ্জাবি পড়ে টুপি মাথায় দিয়ে অনেকে কিন্তু ফল লুট করছেন। এই দৃশ্যটা দেখতে আমাদের কারো ভালো লাগেনি। ফলমেলায় লুটপাট করেছেন সকল বয়সের, সকল জেন্ডারের এবং সব ধরনের পোশাকের লোকজন।

তারা যে পরিমানে লুট করেছেন, সেই ফলের মূল্য ২০০ থেকে ৫০০ টাকার বেশি না। ৫০০ টাকার লোভ সামলাতে পারছেন না যে লোকটা, তিনি ওখানে ১ হাজার টাকা উবার ভাড়া দিয়ে গিয়েছেন কিংবা ৬০০ টাকা ভাড়া দিয়ে গিয়েছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘এটা আমি মনে করি, আমাদের জাতীয় অবক্ষয়। জাতির লজ্জা এবং এই লজ্জা আমরা বাড়তে দিচ্ছি, কারণ আমরা এগুলোকে অবহেলা করছি। আমরা এ সকল ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি না। ওইখানে তাৎক্ষণিকভাবে বাঁসি না বাজিয়ে যদি ১০ জন লোককে গ্রেপ্তার বন্ধ হতো তাহলে এই লুটপাট চিরতরে বন্ধ হয়ে যেত। অবক্ষয় এমন একটা পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে এবং যারা এই অবক্ষয়ের শিকার, তারা কিন্তু ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দিবে এমন তরুণ। আমি মনে করি, কঠোর ব্যবস্থা এবং একই সঙ্গে নৈতিকতার উন্নতির জন্য একটা বিহেভিয়ারাল চেঞ্জ কমিউনিকেশন করা দরকার।’

এ ব্যাপারে জাতীয় নাগরিক পার্টির কোষাধ্যক্ষ ও যুগ্ম সদস্য সচিব সাইফ মোস্তাফিজ বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে সবারই একটা সামগ্রিকভাবে একটা ব্যর্থতার দায় অবশ্যই আছে। এনসিপির জায়গা থেকে আমরা এ ব্যাপারে খুবই স্ট্রিক্ট। যেন এই ব্যাপারগুলো সমাজে না ঘটে।

তিনি বলেন, ৯০ এর সময়ে বা ২০০০ সালে আমাদের যে টিভি চ্যানেলগুলো ছিল সেখানে তরুণ বা শিশু কিশোরদের জন্য কিন্তু আলাদা করে প্রোগ্রাম ডিজাইন করা হতো। আমাদের ডিবেটের প্রোগ্রাম থাকতো। কিন্তু দিন দিন একটি দলীয় কেন্দ্রিক কালচারের একটা ন্যারেটিভ তৈরি করা হয়েছে এবং সবকিছুই একটা মুজিবীয় সংস্কৃতির বলয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। তখন যে শিশু কিশোররা বড় হচ্ছিল, তারা কিন্তু নতুন করে কোন শিশুতোষ, কোন সিনেমা বা শিশুতোষ কোন নাটক দেখেনি। আগে সুন্দর প্রোগ্রাম হতো সেখানে কিন্তু শিশুদের তরুণদের মনস্তাত্বিক একটা বিকাশ সুযোগ থাকতো। যেটা আমি মনে করি, গত আওয়ামী রেজিমে এটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোরও একটা ভূমিকা আছে। সামগ্রিকভাবে আমাদেরও একটা বিশাল দায় আছে। এখনকার কিছু উৎশৃঙ্খল তরুণ সমাজ এরকম লুটপাটের ভিতর দিয়ে যেতে চাচ্ছে। পাঁচ আগস্টের পরে অনেক মৌলিক সংস্কারের কথা আমরা বলছি, তার পাশাপাশি আমাদের শিল্প চর্চার এই জায়গাগুলোরও একটা বিকাশ ঘটা উচিত। আমাদের যে তরুণ সমাজ এবং শিশু কিশোররা আছে তাদেরকে দেয়ার মত পর্যাপ্ত কন্টেন্ট প্রতিটা সেক্টর থেকে দেয়া উচিত।


পিএ/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
পদ্মায় ধরা পড়ল ৫০ কেজির বাঘাইড়, নিলামে উঠল ৭৭ হাজারে Jun 28, 2025
img
আগের চেয়ে খেলায় উন্নতি করেছে বাংলাদেশ, দাবি শান্তর Jun 28, 2025
img
পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী ঘাঁটি পুনর্গঠনের দাবি Jun 28, 2025
নেতৃত্ব ছেড়ে বোর্ডকে জবাব দিলেন শান্ত! Jun 28, 2025
img
ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশে জামায়াত ও এনসিপি প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ Jun 28, 2025
img
রোববারও অব্যাহত থাকবে কমপ্লিট শাটডাউন ও ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি Jun 28, 2025
img
ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে ১৬ দফা ঘোষণা Jun 28, 2025
img
টঙ্গীতে বিএনপি-স্বেচ্ছাসেবক দলের সংঘর্ষে আহত ১০ Jun 28, 2025
img
ওপেনিং পজিশনে বিজয়কে না নেয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না : শান্ত Jun 28, 2025
img
টানা ব্যর্থতায় সিয়াটলে নেতৃত্বে রদবদল Jun 28, 2025
img
২০২৬ সালে জিৎ-এর দুই বিপরীত রূপে চমক Jun 28, 2025
img
গুড়া দুধ আমদানি আমাদের জন্য লজ্জার বিষয় : ফরিদা আখতার Jun 28, 2025
img
আসছে মৌসুমি বৃষ্টিবলয় ‘নির্ঝর’ Jun 28, 2025
img
এনবিআরের অচলাবস্থায় বড় ক্ষতির শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা Jun 28, 2025
img
কারিগরি শিক্ষায় জোর দেওয়ার পরামর্শ গণশিক্ষা উপদেষ্টার Jun 28, 2025
img
ন্যাড়া বেলতলায় একবারই যায় আর যাওয়ার ইচ্ছে নেই: জয়া Jun 28, 2025
img
জামায়াতের যুব নেতার বিএনপিতে যোগদান Jun 28, 2025
img
বিএনপিতে নতুন সদস্য বাড়াতে হবে : মিন্টু Jun 28, 2025
img
‘গোরখোদক’ মনু মিয়ার মৃত্যুতে শোক জানালেন খায়রুল বাসার Jun 28, 2025
img
পাকিস্তানে প্রবল বন্যায় নিহত ২৫, নিখোঁজ ১৭ Jun 28, 2025