ঈদ যাত্রা: মহাসড়কে যানজট, ট্রেনে শিডিউল বিপর্যয়

প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদুল আজহা উদযাপন করতে রাজধানী ছাড়ছেন অসংখ্য মানুষ। শুক্রবার সকাল থেকেই কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের ছাদের উপরে হাজার হাজার যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

আর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। বাসগুলোর ছাদেও যাত্রীদের উপস্থিতি দেখা গেছে। এছাড়া রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের লঞ্চের ছাদেও যাত্রীদের ভীড় লক্ষ্য করা গেছে।

এবার প্রায় ৯ দিনের ছুটির ফাঁদে পড়ছে দেশ। তবে এর মাঝে আগামী ১৪ আগস্ট বুধবার অফিস-আদালত খোলা। ঈদযাত্রা লম্বা করার জন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই ওইদিন ছুটি নিয়েছেন। মাঝখানে বুধবার অফিস-আদালত খোলা থাকলেও পরদিন বৃহস্পতিবার ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সরকারি ছুটি। পরের দুই দিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। অর্থাৎ বুধবার একদিনের ছুটি নিলে ৯ দিনের ছুটি পাচ্ছেন।

শুক্রবার থেকেই বাস-ট্রেন-লঞ্চে ঘরমুখো মানুষের ভিড় বেড়েছে। পরিবারের মধ্যে যাদের কাজ রয়েছে তারাই শুধু রাজধানীতে থাকছেন। আর অন্যরা আগেই চলে গেছেন ও যাচ্ছেন।

শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড় বেশি। সব ট্রেনই নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ঘণ্টা দু’এক দেরি করে ছাড়ছে।

বেসরকারি একটি কোম্পানিতে কর্মরত আসাদুল হক ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ যাবেন। তার শ্যামলী পরিবহনের বাসটি রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে আটকে থাকায় নির্ধারিত সময় ঢাকাতেই পৌঁছাতেই পারেনি।  দীর্ঘ ৮ ঘণ্টা ঘাটে আটকে থাকার পর শুক্রবার সকাল সাতটায় বাসটি ঢাকায় আসে। এর আধা ঘণ্টা পর বাসটি গোপালগঞ্জের উদ্দেশে গাবতলী ছেড়ে যায়।

এদিকে সিরাজগঞ্জ মহাসড়কে গাড়ি ধীর গতিতে চলছে। সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কে যানজট কমলেও এখনো গাড়ির চাপ রয়েছে।  শুক্রবার সকালে এ মহাসড়কে উত্তরবঙ্গমুখী লেনে তীব্র যানজট থাকলেও দুপুরের দিকে তা কমতে থাকে।

এবার ঘরমুখো যাত্রীদের দুর্ভোগ কিছুটা কম হলেও স্বস্তি নেই তাদের। হাজারও যানবাহনের চাপে স্বাভাবিক গতিতে যেতে পারছে না কোনো গাড়িই। ফলে বিড়ম্বনা ও অস্বস্তি নিয়ে ঘরে ফিরতে হচ্ছে ঈদে ঘরমুখো মানুষদের।

সিরাজগঞ্জের মহাসড়কের নলকা মোড় এলাকায় হানিফ পরিবহনের সুপার ভাইজার আব্দুল খালেক বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে ১টার মধ্যে ঢাকা থেকে গাড়ি ছেড়েছি। বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড় পুরো যানজটের মধ্য দিয়ে আসলেও সেতু পার হওয়ার পর যানজট কিছুটা কম। তবে একেবারেই ধীর গতিতে চলছে গাড়ি।

বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ শহীদ আলম ও হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, সকাল থেকেই এ মহাসড়কে যানবাহনের প্রচুর চাপ রয়েছে। এ কারণে থেমে থেমে যানজট দেখা দিলেও পুলিশি প্রচেষ্টায় সেটা দ্রুত নিরসন করা হচ্ছে। তবে যান চলাচলে কিছুটা ধীরগতি রয়েছে।

এদিকে রাজধানীর কমলাপুর থেকে যেসব ট্রেন শুক্রবার বিভিন্ন গন্তব্যে রওয়ানা হয়েছে তার প্রত্যেকটিই বিলম্বে ছেড়ে গেছে। ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার নির্ধারিত সময় সকাল ৬টা। কিন্তু ট্রেনটি সকাল ১১টার পর এসে কমলাপুর এসে পৌঁছায়। পরে দুপুর ১২টার দিকে ট্রেনটি ছেড়ে যায়।

চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ৮টায় ছাড়ার কথা থাকলেও এ ট্রেনটির ছাড়ার সম্ভব্য সময় দেয়া হয়েছে সকাল সাড়ে ১০টা। রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস সকাল ৯টায় ছাড়ার কথা থাকলেও সকাল ১০টা পর্যন্ত স্টেশনেই এসেই পৌঁছায়নি। দিনাজপুর- পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ১০টায় কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি সম্ভব্য ছাড়ার সময় ১১টা ১০ মিনিট দেয়া হয়েছে।

কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ আমিনুল হক বলেন, অগ্রিম টিকিট বিক্রির দিনই আমরা ধারণা করেছিলাম ৯ আগস্ট যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় হবে। এরমধ্যেই আমরা চেষ্টা করছি সিডিউল ঠিক রাখতে। তারপরও কয়েকটা ট্রেনের বিলম্ব হয়েছে।

এদিকে ঈদ যাত্রায় মহাসড়কে কোনো সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

শুক্রবার তিনি বলেন, ‘এবারের ঈদ যাত্রায় সড়ক-মহাসড়ক বিশেষ করে হাইওয়েতে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে। ওখানে নদীতে প্রবল স্রোত। প্রচন্ড স্রোতে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে আজকে পরিস্থিতি ভালো। দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ছাড়া রাস্তা খারাপের বিষয় কোথাও নেই। সারা দেশ থেকে আমি খবর রাখছি এবং খবর নিচ্ছি।’

শুক্রবার রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে মোবাইল কোর্ট কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

বৈরী আবহাওয়া কিছুটা কেটে যাওয়ায় পাটুরিয়া দৌলতদিয়া নৌ রুটের ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। তবে ঈদে ঘরমুখো যানবাহন ও যাত্রীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন বাস যাত্রীরা। শুক্রবার সকাল থেকেই ফেরি পারাপারের দীর্ঘ লাইন চোখে পড়েছে।

শুক্রবার সকাল থেকে মোট ১৯টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে বলে জানান বিআইডাব্লিউটিসি কর্মকর্তারা।

 

টাইমস/টিআর/এসআই

Share this news on:

সর্বশেষ