৩৭ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ

এই সপ্তাহে মার্কিন কংগ্রেসে তার ‘বিগ বিউটিফুল বাজেট বিল’ পাস হওয়ায় উল্লসিত ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গেই আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বহুদিনের একটি পুরনো প্রশ্ন- এই বিপুল ঋণের ভার যুক্তরাষ্ট্র কতদিন বহন করতে পারবে? ট্রাম্পের এই ট্যাক্স-কর্তন বাজেট বিলটি যুক্তরাষ্ট্রের ঋণের বোঝায় কমপক্ষে ৩ ট্রিলিয়ন ডলার যুক্ত করবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

বর্তমানে দেশটির মোট সরকারি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৭ ট্রিলিয়ন ডলার। এ নিয়ে সমালোচনারও অভাব নেই।

এমনকি ট্রাম্পের সাবেক ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইলন মাস্ক একে বলেছেন ‘জঘন্য ও বিকৃত’ পরিকল্পনা।

বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে— যুক্তরাষ্ট্রকে ঋণ দিতে তাদের ধৈর্যের সীমা কোথায়? এই সন্দেহ প্রতিফলিত হচ্ছে ডলারের দরপতন ও মার্কিন সরকারের ঋণের সুদের হার বৃদ্ধিতে। চলতি বছরের শুরু থেকে ডলারের মান ব্রিটিশ পাউন্ডের তুলনায় ১০ শতাংশ এবং ইউরোর তুলনায় ১৫ শতাংশ কমেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে যে বিশাল ফারাক, তা পূরণ করতেই বারবার নতুন করে ঋণ নিতে হচ্ছে দেশটিকে।

আর এই ঋণের বিপরীতে দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি সুদের হারের ব্যবধানও বেড়েছে, যা অর্থনীতিতে ‘ইয়িল্ড কার্ভ স্টীপেনিং’ নামে পরিচিত। এটি ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ শোধের সক্ষমতা নিয়ে সংশয় বাড়িয়ে তুলছে।
বিষয়টি আরো উদ্বেগজনক, কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র সুদের হার কমানোর বিষয়ে অনেক বেশি ধীর গতিতে এগোচ্ছে। সাধারণত এতে ডলার আরো শক্তিশালী হওয়ার কথা, কারণ ব্যাংকে ডলার জমা রাখলে উচ্চ সুদ মেলে কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।

বিশ্বের বৃহত্তম হেজ ফান্ডের প্রতিষ্ঠাতা রে ডালিও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন একটি চূড়ান্ত মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। বর্তমান ধারায় চললে শিগগিরই দেশটি বছরে ১০ ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ ও সুদ পরিশোধে খরচ করবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যদি এখনই ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে এমন এক পর্যায় আসবে, যেখানে এই ঋণ আর নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে না এবং ভয়ংকর আর্থিক বিপর্যয় দেখা দেবে।’

রে ডালিও তিনটি সম্ভাব্য ‘ভয়ঙ্কর পরিণতির’ দিক তুলে ধরেছেন। সেগুলো হলো, সরকারি ব্যয় ব্যাপকভাবে কমানো, অথবা বড় আকারে কর বৃদ্ধি—অথবা দুটোই একসঙ্গে।

মুদ্রা ছাপিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দিয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়া—যেটি ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের সময় দেখা গিয়েছিল। তবে এতে মূল্যস্ফীতি ও আয়বৈষম্য বাড়ে। সরাসরি ঋণ খেলাপি হওয়া—যুক্তরাষ্ট্র যদি তার সরকারি ঋণ শোধ না করে, তাহলে বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থা মারাত্মক ধাক্কা খাবে। এই মুহূর্তে এসব বিপর্যয়ের সম্ভাবনা খুব বেশি নয়। তবে এর কারণ কিন্তু আশ্বস্ত হওয়ার মতো কিছু নয়। বাস্তবতা হলো, ডলারের বিকল্প খুব কম।

বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ এল-ইরিয়ান বিবিসিকে বলেন, ‘বিশ্ব এখন ডলার কমানোর চেষ্টা করছে। এ কারণেই সোনার দাম, ইউরো ও পাউন্ডের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু ডলার বাদ দিয়ে চলার মতো বিকল্প বিশ্বে এখনো তৈরি হয়নি। এটি এখনো সবচেয়ে পরিষ্কার ‘নোংরা জামা’, যেটা পরেই সবাই চলতে বাধ্য।’ তবুও, মার্কিন ডলার ও সরকারের বন্ডের ভবিষ্যত নিয়ে এখন উচ্চপর্যায়ে আলোচনা চলছে।

ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর বলেন, ‘মার্কিন ঋণের পরিমাণ ও ডলারের অবস্থান (যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি) বেসেন্ট-এর অন্যতম প্রধান উদ্বেগের বিষয়।’ এই বিপুল ঋণের পরিমাণ কল্পনাতীত। কেউ যদি প্রতিদিন ১০ লাখ ডলার করে জমাতে থাকে, তাহলে এই পরিমাণ সঞ্চয়ে সময় লাগবে এক লাখ বছর। তবে কোনো দেশের মোট জাতীয় আয়ের তুলনায় ঋণের হার দিয়ে বিষয়টি বিচার করা উত্তম।

যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক আয় প্রায় ২৫ ট্রিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে দেশটির ঋণের বোঝা অনেক বেশি হলেও, জাপান বা ইতালির চেয়ে এখনো কম। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি বিশ্বের সবচেয়ে উদ্ভাবনী ও প্রবৃদ্ধিশীল—এই শক্তি এখনো তাদের পক্ষে।

সূত্র : বিবিসি

পিএ/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
কার বিরুদ্ধে মাঠে নামছে জামায়াত, প্রশ্ন জাহেদ উর রহমানের Sep 16, 2025
img
টিকটক নিয়ে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সমঝোতা! Sep 16, 2025
img
পুলিশের ৯ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর Sep 16, 2025
img
আমাদের সার্বিক মূল্যস্ফীতি মোটামুটি স্থিতিশীল : অর্থ উপদেষ্টা Sep 16, 2025
img
আমার ধারণা জামায়াত একাত্তরের ভুল স্বীকার করে বিবৃতি দেবে : মাসুদ কামাল Sep 16, 2025
img
কাতারের সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তি করার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের Sep 16, 2025
img
বিচারপতির উপস্থিতিতে ৬ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ৯ জনের ভার্চুয়ালি হাজিরা Sep 16, 2025
img
এনবিআরে বড় রদবদল, দপ্তর বদলালো ১৮২ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার Sep 16, 2025
img

নুরাল পাগলার মাজারে হামলা

আদালতে স্বীকারোক্তি দিল ৮ আসামি Sep 16, 2025
img
ক্রীড়া কর্মসূচি প্রকল্পে বরাদ্দের টাকা বেহাত, দুদকের অভিযান Sep 16, 2025
img
দুই কোটি রুপি ও স্বর্ণসহ সরকারি কর্মকর্তা গ্রেপ্তার Sep 16, 2025
img
২৬৬ কোটি টাকার ফাঁকিতে চাকরিচ্যুত ২ কর কর্মকর্তা Sep 16, 2025
img
কোনো ধর্মকে আলাদা করে দেখা যাবে না : প্রধান উপদেষ্টা Sep 16, 2025
img
মালদ্বীপে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ভ্রাম্যমাণ কনস্যুলার সেবা চালু করল হাইকমিশন Sep 16, 2025
img
দুর্যোগের আগে সবার কাছে সতর্কবার্তা পৌঁছাতে কাজ করছে সরকার: উপদেষ্টা Sep 16, 2025
img
বাংলাদেশকে টপকে জাহাজ ভাঙা শিল্পের শীর্ষে উঠতে চায় ভারত Sep 16, 2025
img

জোহরান মামদানি

‘পেনশন তহবিলের টাকা ইসরায়েলি বন্ডে বিনিয়োগ করা উচিত নয়’ Sep 16, 2025
img
ভাঙ্গায় সড়ক ও রেলপথে যান চলাচল স্বাভাবিক Sep 16, 2025
img
মবের মুল্লুক নামে আরো একটি কুখ্যাত বাগধারার কবলে পড়েছে দেশ: গোলাম মাওলা রনি Sep 16, 2025
img
নিউইয়র্ক টাইমসের বিরুদ্ধে বিশাল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ মামলা করলেন ট্রাম্প Sep 16, 2025