৯ জুলাইয়ের সময়সীমা পেরিয়ে নতুন বাণিজ্য চুক্তির পথে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ ঠেকাতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মার্কিন সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ আলোচনায় অগ্রগতি অর্জন করলেও, অনেক দেশের জন্য পরিস্থিতি এখনও জটিল রয়ে গেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১২টি দেশকে চূড়ান্ত শুল্ক হার উল্লেখ করে চিঠি পাঠাতে যাচ্ছেন। ট্রাম্প ইতিমধ্যে চিঠিগুলোতে স্বাক্ষর করেছেন এবং আগামী সোমবার এসব চিঠি পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন। 

যদিও কোন কোন দেশ চিঠি পাবে, তা তিনি প্রকাশ করেননি।বাংলাদেশের পক্ষে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। শুক্রবার প্রথম আলোকে বাণিজ্য উপদেষ্টা জানিয়েছেন, আগামী বুধবার (৯ জুলাই) মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিতীয় দফার বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এ বৈঠক থেকে শুল্ক বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি আশা করছেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর ভিত্তিমূল্য ১০ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির যুক্তি দেখিয়ে এসব শুল্ক আরোপ করা হয়, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। পরবর্তীতে ৯ এপ্রিল থেকে ৯০ দিনের জন্য পাল্টা শুল্ক কার্যক্রম স্থগিত রাখেন ট্রাম্প। সেই সময়সীমা শেষ হচ্ছে ৯ জুলাই।

রয়টার্স জানায়, শুক্রবার ওয়াশিংটন থেকে নিউ জার্সিতে যাওয়ার সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এয়ারফোর্স ওয়ানে ওঠার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, প্রথম দফায় চিঠি পাঠানোর তারিখ সোমবার নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব চিঠিতে ১০ থেকে ২০ শতাংশ, এমনকি ৬০ বা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের কথা জানানো হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের বক্তব্য অনুযায়ী, এই নতুন শুল্ক হার ২ এপ্রিল ঘোষিত সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশের চেয়েও বেশি। এর মানে হচ্ছে, অনেক দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা আশানুরূপ অগ্রগতি পায়নি। যেমন জাপানের ক্ষেত্রে—ট্রাম্প সম্প্রতি টোকিওর ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আলোচনা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। ইইউর এক কূটনীতিক সিএনএনকে জানিয়েছেন, ৯ জুলাইয়ের আগেই আলোচনা শেষ হওয়ার সম্ভাবনা কম। ইউরোপীয় কমিশনের মুখপাত্র ওলফ গিল বলেন, আলোচনা অত্যন্ত সংবেদনশীল অবস্থায় রয়েছে।

শুধু ইইউ নয়, ভারতসহ অন্যান্য দেশও এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি। ফলে ৯ জুলাইয়ের সময়সীমা পেরিয়ে আলোচনা চলতে পারে বলে ধারণা করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট বলেছেন, ৯ জুলাই কোনো ‘চূড়ান্ত সময়সীমা’ নয়। অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টও ফক্স বিজনেসকে জানিয়েছেন, ১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক দিবসের আগেই সব চুক্তি সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন তিনি।

এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র কেবল যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে, যা মে মাসে স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাজ্য থেকে আসা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর থাকবে এবং গাড়ি ও উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশে বিশেষ ছাড় দেওয়া হবে।


ভিয়েতনামের সঙ্গেও একটি চুক্তি হয়েছে বলে জানালেও, সেটিতে আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর হয়েছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এপ্রিল মাসে ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প, যা বর্তমানে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য ভিয়েতনামে শুল্কমুক্তভাবে প্রবেশ করতে পারবে।

 ৯ জুলাইয়ের সময়সীমার প্রাক্কালে যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে একাধিক দেশে উচ্চ শুল্ক আরোপের হুমকি দিচ্ছে, যার ফলে বাংলাদেশসহ অনেক দেশের জন্য বাণিজ্যিক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। আগামী সপ্তাহগুলোতে চূড়ান্ত আলোচনায় এসব দেশের কূটনৈতিক দক্ষতা ও আলোচনার অগ্রগতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।



 ইউটি/টিকে


Share this news on:

সর্বশেষ

img
ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ রেকর্ড আক্রান্ত বরগুনায় Jul 06, 2025
img
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচের আগে পর্যবেক্ষণে আছেন শান্ত Jul 06, 2025
ভারতীয় মিডিয়ার অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন প্রেস সচিবের Jul 06, 2025
img
প্রেমের টানে খুলনায় এসে বিয়ে করলেন চীনা যুবক Jul 06, 2025
দুদকের চিঠিতে ১ বছরেও সাড়া মেলেনি বেনজিরের Jul 06, 2025
মনের সব আশা পূরণে আশুরার দিনে হোসনি দালানে জনতার ভীড়! Jul 06, 2025
আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি, বিসিবি সভাপতি ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছে; মিরাজ Jul 06, 2025
img
একটি মহল পরিকল্পিতভাবে বিএনপিকে সংস্কারবিরোধী হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে: মির্জা ফখরুল Jul 06, 2025
img
থ্রেডস অ্যাপে মেসেজিং সুবিধা আনলো মেটা Jul 06, 2025
img
মুসিয়ালার ইনজুরিতে শোকাহত বায়ার্ন শিবির, কোচের ক্ষোভ Jul 06, 2025
img
বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি ও নতুন এক্সপোর্ট টার্মিনাল নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে : কৃষি উপদেষ্টা Jul 06, 2025
img
বাসায় ফিরলেন সেই 'নিখোঁজ' ব্যাংক কর্মকর্তা, ব্যক্তিগত কারণে গিয়েছিলেন কুয়াকাটায় Jul 06, 2025
img
ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে আগ্রহের পাশাপাশি হতাশাও রয়েছে: মির্জা ফখরুল Jul 06, 2025
img
রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় লাগামহীন লুটপাট আওয়ামী লীগ আমলের এক বড় নির্দেশক: আসিফ মাহমুদ Jul 06, 2025
img
মস্কোর দিকে আসা চারটি ড্রোন ভূপাতিত, বিমান চলাচল স্থগিত Jul 06, 2025
img
মালয়েশিয়া থেকে যাদেরকে ফেরত পাঠানো হয়েছে তারা কোনো জঙ্গি নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Jul 06, 2025
img
হজযাত্রা শেষে দেশে ফিরেছেন ৬৬ হাজারের বেশি হাজি Jul 06, 2025
img
জুনে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৪ হাজার কোটি টাকার বেশি Jul 06, 2025
img
"ভারতীয় গল্পকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দেওয়াই ‘রামায়ণ' নির্মাণের লক্ষ্য" Jul 06, 2025
img
বিয়ে না করেই মা হওয়ার সাহসী সিদ্ধান্ত দক্ষিণী অভিনেত্রীর! Jul 06, 2025