হামলা চালিয়ে লোহিত সাগরে পণ্যবাহী একটি জাহাজ ডুবিয়ে দেওয়ার দাবি করেছে ইরান-সমর্থিত ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুথি। সোমবার ওই জাহাজটি লোহিত সাগরে ডুবে গেছে বলে সংগঠনটি দাবি করেছে।
ইয়েমেনি এই গোষ্ঠী বলেছে, রিমোট-নিয়ন্ত্রিত নৌকা থেকে গুলিবর্ষণ, রকেট ও বিস্ফোরক ব্যবহার করে চালানো হামলায় পণ্যবাহী ওই জাহাজটি লোহিত সাগরে ডুবে গেছে। এটি চলতি বছরে মাঝ-সাগরে হুথিদের হামরায় প্রথম কোনও জাহাজডুবির ঘটনা।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জাহাজটির গ্রিক পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান স্টেম শিপিং বলেছে, তাদের কাছে জাহাজটির ডুবে যাওয়ার নির্ভরযোগ্য কোনও প্রমাণ নেই। এছাড়া রয়টার্সও তাৎক্ষণিকভাবে জাহাজটির ডুবে যাওয়ার তথ্য যাচাই করতে পারেনি বলে জানিয়েছে।
রোববারের এই হামলার দায় স্বীকার করে হুথিরা বলেছে, লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী বাল্ক ক্যারিয়ার ম্যাজিক সিজের ১৯ নাবিককে নেমে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। স্টেম শিপিং বলেছে, জাহাজটির কাছ দিয়ে যাওয়া একটি বাণিজ্যিক জাহাজ নাবিকদের উদ্ধার করেছে এবং সোমবারের মধ্যেই তাদের জিবুতি পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
স্টেম শিপিংয়ের ওই জাহাজ চীন থেকে লোহা ও সার নিয়ে তুরস্কে যাওয়ার পথে আক্রান্ত হয়েছে। হুথিদের হামলার পর এতে পানি ঢুকতে শুরু করে এবং ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে বলে জানিয়েছিলেন কোম্পানির প্রতিনিধি মাইকেল বোডুরোগ্লু।
রয়টার্স বলছে, এই হামলার মধ্য দিয়ে লোহিত সাগরে প্রায় ছয় মাসের শান্ত পরিস্থিতির অবসান ঘটল। বিশ্বের ব্যস্ততম সামুদ্রিক রুটগুলোর একটি এই পথে ২০২৩ সালের শেষ থেকে গত বছরের শেষের দিক পর্যন্ত হামলা চালায় হুথিরা। তাদের হামলায় ইউরোপ ও এশিয়ার মাঝে চলাচলকারী পণ্যবাহী জাহাজের পরিবহনে ব্যাঘাত ঘটে।
চলতি বছরের এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ের পর থেকে ওই অঞ্চলে এটিই এ ধরনের প্রথম হামলার ঘটনা। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ এবং সম্প্রতি ১২ দিনের ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ও যুক্তরাষ্ট্রের ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর মাঝেই রোববার লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ আক্রান্ত হওয়ার খবর আসে।
ব্রিটেনের সমুদ্র নিরাপত্তাবিষয়ক সংস্থা ইউকেএমটিওও অ্যামব্রে বলেছে, ইয়েমেনের হোদাইদা বন্দর থেকে ৫১ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে রোববারের এই হামলার ঘটনা ঘটে।
ইরান-সমর্থিত ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত শতাধিক সামুদ্রিক হামলা চালিয়েছে। গোষ্ঠীটি বলেছে, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে এই হামলা চালাচ্ছে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মে মাসে ইয়েমেনে হুথিদের ওপর বিমান হামলা বন্ধ করার ঘোষণা দেন। ওই সময় তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পথে হামলা বন্ধ করতে রাজি হয়েছে হুথি বিদ্রোহীরা।
চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং হুথি—কোনও পক্ষই একে অপরকে লক্ষ্য করবে না বলে শর্ত দেওয়া হয়েছে। এমনকি লোহিত সাগর ও বাব আল-মান্দাব প্রণালীতেও হামলা বন্ধ রাখার শর্ত মেনে নিয়ে হুথিরা। সেই সময় এক বিবৃতিতে হুথিদের সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল ওমান।
তবে গত জুনে হুথিরা হুমকি দিয়ে জানায়, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র যদি অংশ নেয়, তাহলে তারা লোহিত সাগরে মার্কিন জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানাবে। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় গত মাসে হামলা চালানোর পর হুথিরা সেই হুমকি বাস্তবায়ন করবে কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
সূত্র: রয়টার্স।
এফপি/ টিএ