পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) কারাবন্দি নেতা ইমরান খানের মুক্তির আন্দোলনে যোগ দিতে দেশে ফেরার পরিকল্পনা করছেন তার দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলেমান খান। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সরকার হুমকি দিয়েছে, তারা যদি দেশে ফিরে আন্দোলন শুরু করেন, তাহলে তাদের গ্রেফতার করা হবে।
কারাবন্দি ইমরান খান দেশব্যাপী আবারও আন্দোলনের পরিকল্পনা করছেন। গত মঙ্গলবার(৮ জুলাই) রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে দলের নেতার সাথে সাক্ষাতের পর পিটিআইয়ের অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গহর আলী খান জানান, আগামী ৫ আগস্ট থেকে শুরু হবে এই আন্দোলন। আর আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবেন কাসিম ও সুলেমান।
বুধবার (৯ জুলাই) ইমরান খানের বোন আলিমা খান জানান, ইমরান খানের ছেলে কাসিম খান ও সুলেমান খান পিটিআই-এর রাজনৈতিক প্রচারণায় যোগ দিতে শিগগিরই যুক্তরাজ্য থেকে পাকিস্তানে আসবেন। তার আগে তারা তাদের বাবার আটকাবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন।
আলিমা খান আরও বলেন, ইমরান খান আলোচনার সম্ভাবনা সম্পূর্ণভাবে উড়িয়ে দিয়েছেন এবং পরিবর্তে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবাদ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। যার চূড়ান্ত পর্যায়ে আগামী ৫ আগস্ট তিনি পৌঁছাতে চান। ওইদিনই তার কারবাসের দুবছর পূর্ণ হবে।
কাসিম ও সুলেমানের দেশে ফেরার খবরের পরই হুমকি-ধমকি দেয়া শুরু করে সরকার। এক টিভি সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের রাজনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা রানা সানাউল্লাহ বলেন, ‘যদি ইমরান খানের ছেলেরা পাকিস্তানে এসে আন্দোলনে যোগ দেয়, তাহলে তাদের গ্রেফতার করা হবে।’
এরপর পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের গভর্নর ফয়সাল করিম কুন্দি বলেন, ‘ইমরান খানের সন্তানরা আইনের ঊর্ধ্বে নন। যদি তারা আইনের সীমা লঙ্ঘন করে নিজে থেকে আইন হাতে তুলে নেন, তবে অন্য নাগরিকদের মতো তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সরকারের এমন হুমকির কঠোর সমালোচনা করেছেন ইমরান খানের সাবেক স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথ। এক এক্স পোস্টে তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানদের তাদের বাবা ইমরান খানের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না। তিনি প্রায় ২ বছর ধরে কারাগারে নির্জন কারাগারে বন্দি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের সরকার এখন বলছে, যদি তারা তাকে দেখতে কারাগারে যায়, তাহলে তাদেরও গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হবে। গণতন্ত্র বা কার্যকর রাষ্ট্রে এমনটা ঘটে না। এটা রাজনীতি নয়। এটা ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা।’
সরকারের এই হুমকির সমালোচনা করেছেন ইমরান খানের ছেলে কাসিমও। এক এক্স পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমার বাবা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ৭০০ দিনেরও বেশি দিন ধরে কারাগারে- নির্জন কারাগারে বন্দি।’
তিনি আরও লেখেন, ‘তাকে তার আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না, পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। আমাদের সঙ্গেও (তার সন্তানদের) যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে, এমনকি তার ব্যক্তিগত ডাক্তারকেও প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘এটা ন্যায়বিচার নয়। এটা আইনের শাসন, গণতন্ত্র এবং পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়ে থাকা একজন মানুষকে বিচ্ছিন্ন এবং ভেঙে ফেলার ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা।’
আরআর/টিকে