আপনারা কি শুধু চাঁদা চান : বিএনপিকে প্রশ্ন হাসনাতের

বিএনপির নেতাকর্মীরা সংস্কার, রাজনীতি বাদ দিয়ে দেশজুড়ে চাঁদাবাজি করতে আগ্রহী কি না— প্রশ্ন করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে খুলনা মহানগরীর শিববাড়ি মোড়ে এনসিপি আয়োজিত পথসভায় এ প্রশ্ন করেছেন তিনি।

সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন হাসনাত। নিজ বক্তব্যে এনসিপির এই নেতা বলেন, “আমাদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। আমাদের দেশের ভাগ্যাকাশে সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। আমরা দেখেছি আওয়ামী লীগ নিষেদ্ধে তারা ব্যাজার হয়েছে। তারা সংস্কার চায় না, তারা বিচার চায় না। তারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধও চায় না। তাহলে আপনারা চান কি ? শুধু কি চাঁদা চান ? যদি চাঁদা লাগে আমরা সবাই মিলে উঠিয়ে দেবো।”

 “টিভিতে, সিনেমায়, পত্রিকায় আমরা দেখেছি লগি-বৈঠার ঘটনা। লগি-বৈঠা শুরু করেছিল আওয়ামী লীগ, সেটার সিলসিলা এখন বহন করছে, যারা মুজিববাদের নতুন করে ঠিকাদার হয়েছে। যেদিন থেকে রুমিন ফারহানারা বত্রিশ ভাঙার জন্য মায়া কান্না জুড়ে দিয়েছে, সেদিন থেকেই বুঝে গিয়েছি এই দল চাঁদাবাজদের অভয়ারণ্যে পরিণত হবে।

হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “আজকে একজন বলছে- নেতা যদি অর্ডার দেয়, ১০ মিনিটে সরকার পতন করবে। এই ১৭ বছর কোথায় ছিলেন ? দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বাসার সামনে ট্রাক পর্যন্ত সরাতে আসেন নি।”

জনগনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আজকের ঘটনা আপনারা মোড়ে মোড়ে মানুষকে দেখান, তারপর সিদ্ধান্ত নিতে বলেন যে পরবর্তী বাংলাদেশটা কোন চাঁদাবাজদের হাতে তুলে দিবেন কি না। তারা বলছে যতোদিন পর্যন্ত না নির্বাচন হয়, তারা যদি সরকার গঠন না করে তাহলে নাকি এগুলো অব্যাহত থাকবে। প্রবাদটা হচ্ছে এমন- আমি চুরি করতে থাকব, না হয় বাসার চাবিটাই আমার হাতে তুলে দাও।”

হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “আপনারা জেল থেকে বেরিয়ে বলছিলেন মাসুম বাচ্চারা। আর আজকে আপনারা বড় বড় কথা বলেন ? আজকে আপনারা মুজিববাদের ঠিকাদার হয়েছেন। আমরা দেখছি বিএনপির আর এক জন রয়েছে- জয় বাংলার স্লোগান দেয় উনার প্রোগ্রামে। যদি বিএনপি করে জয় বাংলার স্লোগানই দেওয়া লাগে তাহলে বিএনপি করার কি দরকার আওয়ামী লীগই করা উচিত। এই বাটপারদেন জন্য বিএনপির ত্যাগী কর্মীরাই বঞ্চিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত। তারা এতোদিন ধানক্ষেতে ঘুমাতো, ঢাকায় এসে রিকশা চালাতো। আমার বিএনপির ভাইদেরকে, কর্মীদেরকে এই বাটপাররা প্রতারিত করেছে, প্রতারিত করছে, প্রতারিত করবে। অনেক নেতা রয়েছে বিএনপির, আমরা বর্তমানে দেখছি তাদের গাড়িতে আওয়ামী লীগের সময় শুধু পতাকাটাই ছিল না, না হয় একজন মন্ত্রীর সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছে। বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, প্রয়োজনে ফেস টু ফেস আমি ডিবেট করতে রাজি।”

হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “আমাদেরকে ভয়-ভীতি দেখানো হয়। আমরা যেই জীবনটা যাপন করছি এই জীবনটাই আমাদের বোনাস জীবন। আপনি কাকে ভয় দেখাবেন ?”

তিনি বলেন, অনেক নেতাকে আমরা দেখেছি, এখন ব্যক্তিগতভাবে চিনি। এই ১৭ বছরে তাদের সম্পদ তো কমেই নাই, তাদের ফ্লাট বেড়েছে, সম্পদ বেড়েছে, তাদের ব্যাংক হয়েছে। উল্টা দিকে কর্মীরা রাস্তায় মার খেয়েছে, মামলা খেয়েছে, বাড়ি যেতে পারেনি, সন্তানদের দেখতে পারেনি। এই প্রতারণার রাজনীতির অবসান ঘটাতে হবে। আপনাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আপনারা কাদের হাতে দেশ তুলে দিবেন। পাড়া-মহল্লায়, অলিতে-গলিতে আপনাদের প্রোটেকশন দিয়ে আজকে যেভাবে নৃশংস কায়দায় এই চাঁদাবাজরা যেভাবে মানুষকে হত্যা করেছে সেই ভিডিও আপনারা মানুষকে দেখাবেন।”

তিনি বলেন, “বিএনপি নেতৃবৃন্দকে আমি সম্মান রেখে বলব আপনাদের অনেক রাজনীতিবিদের বয়স আমার বয়সেরও তিনগুণ। আমরা আপনাদেরকে বিনয়ের সাথে অনুরোধ করব আপনারা এই তরুণ প্রজন্মকে বুঝুন। আওয়ামী নেতৃবৃন্দ, আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ক্লোজ হয়েছে কারণ তারা আমাদেরকে বোঝেনি। এই তরুণ প্রজন্মের ভাষা বোঝেনি।”

সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী প্রমুখ। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারাসহ এনসিপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। 

ইউটি/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
পাশবিক এই হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হবে: আসিফ নজরুল Jul 12, 2025
img
অনুমতি ছাড়া মাছ ধরায় সৌদিতে বাংলাদেশি আটক Jul 12, 2025
img
ঠাকুরগাঁও সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ গেল ১ বাংলাদেশির Jul 12, 2025
img
গাজাকে শিশুদের কবরস্থান বানাচ্ছে ইসরাইল: জাতিসংঘ Jul 12, 2025
img
মিটফোর্ডে হত্যাকাণ্ড নিয়ে রাষ্ট্রদূত মুশফিকের আবেগঘন প্রতিক্রিয়া Jul 12, 2025
img
উইম্বলডন থেকে বিদায় নিলেন সার্বিয়ান তারকা জোকোভিচ Jul 12, 2025
img
বিচ্ছেদের গুঞ্জনে মুখ খুললেন নয়নতারা Jul 12, 2025
img
ডোমিনিকান উপকূলে নৌকা ডুবে প্রাণ গেল ৪ জনের, নিখোঁজ ২০ Jul 12, 2025
img
বছর না ঘুরতেই রাজনীতি নিয়ে মত বদলালেন কঙ্গনা Jul 12, 2025
img
কিসাসই এসব কসাইয়ের সমাধান: আহমাদুল্লাহ Jul 12, 2025
img
মেঘলা আকাশ, শুষ্ক পরিবেশে রাজধানীতে বাড়ছে গরম Jul 12, 2025
img
নয়াদিল্লিতে ধসে পড়ল ৪ তলা ভবন, অনেকে আটকা পড়ার আশঙ্কা Jul 12, 2025
img
অপরাধী যেই হোক, তার স্থান কখনোই আইনের ঊর্ধ্বে নয়: মির্জা ফখরুল Jul 12, 2025
img
সহশিল্পীর সঙ্গে রোম্যান্টিক ভঙ্গিমায় জয়া, ছবি ঘিরে চমক Jul 12, 2025
img
সুনামগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ গেল ১ বাংলাদেশির Jul 12, 2025
img
গাইবান্ধায় পৃথক দুই ঘটনায় প্রাণ গেল ২ জনের Jul 12, 2025
img
বিএনপির ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল গঠন Jul 12, 2025
img
ডব্লিউএইচও থেকে অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল Jul 12, 2025
img
হজ শেষে দেশে ফিরলেন ৮৭ হাজার ১০০ হাজি Jul 12, 2025
img
প্রেসিডেন্টকে টিভিতে দেখতে না চাওয়ায় ৬ মাসের কারাদণ্ড Jul 12, 2025