রাজবাড়ীতে গ্রেফতার যুবদলের বহিষ্কৃত নেতা

রাজবাড়ীতে চাঁদাবাজির মামলায় রায়হান খান (৩০) নামে এক বহিষ্কৃত যুবদল নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার (১৩ জুলাই) দুপুরে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

এর আগে শনিবার (১২ জুলাই) বিকেলে তাকে সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের উদয়পুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

রায়হান বসন্তপুর ইউনিয়নের মহারাজপুর গ্রামের আজিজ ড্রাইভারের ছেলে। তিনি বসন্তপুর ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। মামলার বাদী মিলন সরদার (৩৫) মহারাজপুর গ্রামের ওহাব সরদারের ছেলে।

মিলন সরদার বলেন, ‘রায়হান এলাকার অস্ত্রধারী সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্রের মূল হোতা। সে তার দলের লোকজন নিয়েএলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করে আসছে। সে তার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আমার কাছে দীর্ঘদিন ধরে এক লাখ ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় সে আমাকে হুমকি দিয়ে আসছিল।

গত ৮ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫ দিকে আমি উদয়পুর হাটে লুৎফরের মুদিখানার দোকানের সামনে রাস্তার ওপর এলে রায়হান তার সহযোগী শরিফ ও সাব্বিরসহ অজ্ঞাতনামা ৫ থেকে ৬ জনকে সঙ্গে নিয়ে আমার পথরোধ করে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। আমি তাদের গালিগালাজ করতে নিষেধ করলে তারা আমাকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি, লাথি মেরে টানা হেচড়া করে জিল্লু সরদারের মোটরসাইকেলের দোকানে নিয়ে যায়। সেখানে রায়হান আমার কাছে আবারো এক লাখ ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তারা আমাকে আবারও এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি, লাথিসহ কাঠের বাটাম দিয়ে মারপিট করো আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে নিলাফুলা রক্তজমাট জখম করে।

তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারের লোকজন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে তাদের হাত থেকে আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে তারা আমার পরিবারের লোকজনের কথা না শুনে আমাকে আবারো টানা হিজড়া করতে করতে বসন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে জাহিদ মেম্বারের ফ্লেক্সিলোডের দোকানের সামনে নিয়ে যায় এবং সেখানে তারা আমাকে আবারও প্রকাশ্যে মারপিট করে। তখন আশেপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে এগিয়ে এসে তাদের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করে। তখন তারা আমাকে বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে যায়। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল গিয় চিকিৎসা গ্রহণ করি। এরপর তারা দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আমার এলাকায় মহড়া দেয় এবং পরবর্তীতে সুযোগ পাইলে আমাকে আবারও মারপিট করবে মর্মে এলাকায় বলে বেড়ায়।’

রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘মিলন সরদারের দায়ের করা চাঁদাবাজির মামলায় শনিবার বিকেলে রায়হানকে উদয়পুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। রোববার দুপুরে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজবাড়ী সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, সিডিএমএস যাচাই করে রায়হানের বিরুদ্ধে পূর্বের চুরি, ডাকাতি, বিস্ফোরক আইন, মারামারি ও হত্যাচেষ্টার মোট ৮ টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। আদালতে তার রিমান্ডের জন্য আবেদন করা হয়। তবে বিচারক রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

উল্লেখ্য, বসন্তপুরের দুই ইউপি সদস্যকে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগে ২০২৪ সালের ১২ অক্টোবর রায়হান খানের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী সদর থানায় মামলা দায়ের করেন নির্যাতনের শিকার নারী ইউপি সদস্য। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৪ থেকে ৫ জনকে আসামি করা হয়। ওইদিনই রাজবাড়ী সদর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন সম্রাট ও সদস্য সচিব মামুনুল রনি স্বাক্ষরিত যুবদলের প্যাডে রায়হান খানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

বহিষ্কারাদেশে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুষ্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বসন্তপুর ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রায়হান খানকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত নেতাদের অপকর্মের কোনো দায় দল নেবে না। সেই সঙ্গে বসন্তপুর ইউনিয়ন যুবদলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরকে তার সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখতে বলা হয়।

কেএন/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মাদারীপুরে বজ্রপাতে প্রাণ গেল ১ জনের Jul 14, 2025
img
ফরিদপুরে পাসপোর্ট করতে এসে আটক ৩ রোহিঙ্গা নাগরিক Jul 14, 2025
img
মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শেকৃবি শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, আহত ৩ Jul 14, 2025
img
গাজীপুরে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলায় বিএনপি নেতা কারাগারে Jul 14, 2025
img
ঐশ্বরিয়ার গুণের প্রশংসা করেছিলেন শাশুড়ি জয়া বচ্চন Jul 14, 2025
img
দিলজিতের ‘পাঞ্জাব ৯৫’ ছবি ঘিরে নতুন বিতর্ক! Jul 14, 2025
img
আরও ২ দিনের কর্মবিরতি ঘোষণা দিলেন মিটফোর্ডের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা Jul 14, 2025
img
পিএসজিকে ৩-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতল চেলসি Jul 14, 2025
img
ক্যারিয়ার বাঁচাতে অনৈতিক কাজে অভিনেত্রী! গ্রেফতার হয়েছিলেন হোটেল থেকে Jul 14, 2025
img
উইম্বলডনে প্রথমবারের মতো শিরোপার স্বাদ পেলেন সিনার Jul 14, 2025
img
পুলিশের পরিচয় দিয়ে খাদ্য কর্মকর্তাকে অপহরণ, ৫ ঘণ্টা পর উদ্ধার Jul 14, 2025
img
নড়াইলে আওয়ামী লীগের ৩৫ নেতাকর্মী কারাগারে Jul 14, 2025
img
জমে উঠেছে লর্ডস টেস্ট, শেষ দিনে কে হাসবে বিজয়ের হাসি? Jul 14, 2025
img
'খারাপ ব্যাটিং ও বাংলাদেশের দারুণ ফিল্ডিংয়ের কারণে আমরা হেরেছি' Jul 14, 2025
img
তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে বিএনপির নতুন প্রস্তাব Jul 14, 2025
img
ভারতের বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হচ্ছিল কি না, জানালেন শেহবাজ Jul 14, 2025
img
বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি আগের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে: বিশ্বব্যাংক Jul 14, 2025
img
আমি সবসময় ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করি: শামীম Jul 14, 2025
img
বর্তমান সরকারের সময়ে এখন পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক চলছে: মির্জা ফখরুল Jul 14, 2025
img
প্রতীক হিসেবে থাকছে ‘নৌকা’, তালিকায় যুক্ত হচ্ছে না ‘শাপলা’ Jul 14, 2025