বেরোবিতে শহীদ দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি আবু সাঈদের বাবা

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন আবু সাঈদ। সেই শহীদের বাবা মকবুল হোসেন ‘জুলাই শহীদ দিবসের’ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বুধবার (১৬ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আয়োজনে দিনব্যাপী কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন তিনি।  এ ছাড়ও বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন রংপুরের ২১ জন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। আয়োজনে অতিথি হিসেবে থাকবেন অন্তর্বর্তী সরকারের ৪ উপদেষ্টা।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার ‘জুলাই শহীদ দিবস’ উদযাপনের আয়োজন চলছে। শহীদ পরিবারগুলোকে শ্রদ্ধা জানাতে মূলমঞ্চের আসনে বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আর অন্তর্বর্তী সরকারের চার উপদেষ্টাসহ রাষ্ট্রীয় অতিথিরা থাকবেন দর্শক সারিতে।

তারা হলেন- আইন ও বিচার উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মুক্তিযুদ্ধ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম (বীরপ্রতীক)। 

এ ছাড়াও থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফায়েজ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের এবং ইউজিসির সদস্য ড. তানজীমউদ্দীন খানসহ রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা।

শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ১৬ জুলাই সূর্য ওঠার আগেই স্মরণযাত্রা শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শহীদের কবর জিয়ারতের উদ্দেশে রওনা দেন পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে। সেখানে শ্রদ্ধা জানিয়ে ফিরে এসে সকাল পৌনে ৯টায় শহীদ আবু সাঈদ গেট থেকে শুরু হয় কালো ব্যাজ ধারণ ও শোকর‍্যালি। 

এরপর একে একে উদ্বোধন করা হবে স্মৃতির নানা চিহ্ন- শহীদ আবু সাঈদ তোরণ, মিউজিয়াম এবং স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর।

সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে মূল আলোচনা সভা। সেখানে অংশ নেবেন শহীদ পরিবারের সদস্য, শিক্ষক, প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় অতিথিরা। এই সভা চলবে দুপুর পর্যন্ত। বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। বাদ আসর কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, জুলাই শহীদ দিবস উপলক্ষে গঠন করা হয়েছে ১১টি উপকমিটি। গৌরবোজ্জ্বল এ দিনটিকে যথাযথ মর্যাদায় পালন এবং শহীদদের স্মৃতিকে সম্মানের সঙ্গে ধারণ করার লক্ষে প্রতিটি উপকমিটি নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। এই কমিটিগুলোর দায়িত্বে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা। কেউ দেখভাল করছেন কর্মসূচির সার্বিক সমন্বয়, কেউ তোরণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ, কেউবা অনুষ্ঠানের আলোকসজ্জা, প্রচার, নিরাপত্তা কিংবা মিলাদ মাহফিলের আয়োজন।

এবারের আয়োজনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে জুলাই আন্দোলনের দলিলীকরণে। সে লক্ষে তৈরি করা হচ্ছে একটি পূর্ণাঙ্গ ডকুমেন্টারি, যেখানে তুলে ধরা হবে আন্দোলনের পটভূমি, শহীদদের আত্মত্যাগ, সহপাঠীদের স্মৃতি, পুলিশের দমননীতি এবং ক্যাম্পাসজুড়ে ছাত্রদের প্রতিরোধ। সঙ্গে প্রকাশিত হবে একটি স্মরণিকা—যাতে থাকবে জুলাই আন্দোলনের সময়কার গুরুত্বপূর্ণ দলিল, ছবি, শহীদদের সংক্ষিপ্ত জীবনী এবং আন্দোলন পরবর্তী প্রেক্ষাপটের বিশ্লেষণ।

এ বিষয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শওকত আলী বলেন, শহীদ আবু সাঈদের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধা জানাতে আমরা দিনটি শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখছি না। আমরা চাই- এ দিনটি হোক ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর সাহসের প্রতীক। শহীদের বাবাকে আমরা প্রধান অতিথি করেছি, অন্যান্য শহীদ পরিবারের সদস্যরা বিশেষ অতিথি হিসেবে রয়েছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয় একদিন শহীদের রক্তে ভিজেছিল, আজ তা গৌরবের অক্ষরে ইতিহাস লিখছে। আমরা তার স্মৃতিকে সংরক্ষণ করছি তোরণ, মিউজিয়াম ও স্মৃতিস্তম্ভের মাধ্যমে; পাশাপাশি চেতনাকে ছড়িয়ে দিচ্ছি শিক্ষার্থী থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পর্যন্ত। আগামীর প্রজন্ম জানুক কীভাবে অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে গুলির সামনে দাঁড়িয়েছিল শহীদ আবু সাঈদ। 

এমকে/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
গ্রেপ্তার কুমিল্লার আ.লীগ নেতা তাজুল ইসলাম তাজ Oct 10, 2025
img
আমি আটটি যুদ্ধ থামিয়েছি, ওবামা নোবেল পেয়েছেন কিছু না করেই: ট্রাম্প Oct 10, 2025
img
বিশ্ব ডিম দিবস আজ Oct 10, 2025
img
আফ্রিদিকে দলে নিয়ে কোচ বললেন, ‘বয়স কোনো বিষয় না’ Oct 10, 2025
img
না ফেরার দেশে সাবেক নৌবাহিনী প্রধান সরওয়ার জাহান Oct 10, 2025
img
২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধবিরতি হচ্ছে গাজায় Oct 10, 2025
img
সিনেমা ছেড়ে সন্ন্যাসে, ধর্মপরায়ণ হল ঐশ্বরিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী Oct 10, 2025
img
বর্তমান সময়ের ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় দেশকে প্রস্তুত থাকতে হবে : জাহেদ উর রহমান Oct 10, 2025
img
সড়কে মাছ ছেড়ে প্রতিবাদ করলেন হাসনাত আবদুল্লাহ Oct 10, 2025
img
নাহিদ-সারজিসরা পালাতে পারবেন না: রনি Oct 10, 2025
img
অভিযোগ গঠনের মুহূর্ত থেকেই কেউ আর সংসদ নির্বাচন করতে পারবে না : জিল্লুর রহমান Oct 10, 2025
img
নতুন কমিটি নিয়ে দায়িত্বে বিসিসিসিআই, সভাপতি খোরশেদ আলম Oct 10, 2025
img
মেসিকে বাইরে রেখে নতুন ভাবনায় স্কালোনি Oct 10, 2025
img
ইয়ামালের পাশে দাঁড়িয়ে এমবাপ্পে বললেন, ‘এই বয়সে সবাই ভুল থেকেই শেখে’ Oct 10, 2025
img
হারের পর কাদলেন হামজা, জানালেন হৃদয়ের কথা Oct 10, 2025
img
যারা ভারতপন্থী শাসন চায়, তারাই দেশকে অস্থিতিশীল করছে : রুমিন ফারহানা Oct 10, 2025
img
বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলেন ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট Oct 10, 2025
img
গ্রেপ্তার হলেন ইউটিউবার ও অভিনেতা মনি মেরাজ Oct 10, 2025
img
হংকংয়ের কাছে হেরে এশিয়ান কাপের জটিল সমীকরণে বাংলাদেশ Oct 10, 2025
img
আগামী ৫ দিনের মধ্যে বিদায় নিতে পারে মৌসুমি বায়ু! Oct 10, 2025