ছাত্রশিবিরের সঙ্গে অন্য আদর্শিক জায়গা থেকে বিভেদ থাকতে পারে কিন্তু আমাদের জুলাই সহযোদ্ধাদের ওপর কোনো হুমকি এলে ছাত্রশিবির বসে থাকবে না। গতকালের গোপালগঞ্জের ঘটনা প্রমাণ করে বাংলাদেশ থেকে এখনো ফ্যাসিবাদ নির্মূল হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের মাঠে নবীনবরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
ছাত্রশিবির সভাপতি বলেন, আমরা জাতিগতভাবে এখনো আমাদের আদর্শ ঠিক করতে পারিনি। আমরা যখন সংবিধানে গণতন্ত্রের কথা বলছি ঠিক তখনি আবার সমাজতন্ত্রের কথাও বলছি। যার একটা আরেকটার সঙ্গে কনফ্লিক্টিং।
নবীন শিক্ষার্থীদের তিনি বলেন, পৃথিবীতে মানুষের যত অর্জন আছে সেটাই শেষ অর্জন নয়। প্রতিটি অর্জন নতুন কিছু অর্জনের দ্বার খুলে দেয়।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, আমরা ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে শুরু করেছি। আমরা চাই তোমরা যেন সবার আগে শেষ করতে পারো। আমরা রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন চাই। ছাত্রশিবির আজকে যেই উদ্যোগ নিয়েছে অন্যান্য ছাত্রসংগঠনকে এরকম কার্যক্রম আয়োজনের আহ্বান জানাই।
স্বাগত বক্তব্যে জবি শাখা শিবিরের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির শিক্ষার্থীদের শেখায় কীভাবে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। ভাইয়ের পেছনে স্লোগান দেওয়ার রাজনীতি ছাত্রশিবির শেখায় না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. বিলাল হোসাইন বলেন, আত্মপরিচয়হীন জাতি তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সবসময় সমস্যায় ভোগে। তাই আপনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন আপনি পরিচয় দেবেন আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ২৪ সালের বিপ্লব নিজের পরিচয় সাহসের সঙ্গে দেওয়াটাকে আরও সহজ করে দিয়েছে। আমাদের একইসঙ্গে আত্ম মর্যাদাবোধ ও জ্ঞান অর্জনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, বিগত সময়গুলোতে ছাত্ররাজনীতি বলতে আমরা দেখেছি চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, হলদখল। কিন্তু তার বিপরীতে একদল আদর্শবাদী ছাত্ররা শিক্ষার্থীদের কাছে ন্যায় আদর্শের কথা বলে যাচ্ছে তারা হলো ইসলাী ছাত্রশিবিরের ছেলেরা।
তিনি আরও বলেন, গতকাল গোপালগঞ্জে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা করে আবারও প্রমাণ করেছে এদেশে তাদের আর রাজনীতি করার অধিকার নেই। এছাড়াও আমরা অনেক দলকে দেখছি চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির দিকে ঝুঁকে পড়ছে। আমরা তাদের এহেন গর্হিত কাজ থেকে ফিরে আাসার আহ্বান জানাই।
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মির্জা গালিব বলেন, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে তরুণ প্রজন্ম যেই সাহসী ভূমিকা রেখেছে তা অবিস্মরণীয়। এদেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা আছে তার প্রভাব আমাদের সমাজে রাষ্ট্রে পড়বে বলে আমার বিশ্বাস। কোনো কিছু গড়া কঠিন ভাঙা সহজ। তাই আমরা যদি তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে এই সমাজকে পরিবর্তন করতে চাই তা রাতারাতি সম্ভব না। তাই প্রথম কাজ হলো ছাত্রদের পড়াশোনায় ফেরানো। শিক্ষার্থীদের কাজ শুধু রাজনীতি নিয়ে ভাবা না। শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিষয়েও দক্ষ হতে হবে।
জবি শিবিরের সাবেক সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, পাকিস্তানি হায়েনাদের থেকে মুক্ত হয়েছিলাম একাত্তরে। যখন পাকিস্তানিরা আমাদের অধিকার দিচ্ছিল না তখনই একাত্তর সংগঠিত হয়েছিল। আর গত ১৫ বছর হাসিনার দুঃশাসন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধেই ঘটেছিল জুলাই বিপ্লব। তাই একাত্তরকে বাদ দিয়ে যেমন বাংলাদেশ সম্ভব না তেমনি চব্বিশকে বাদ দিয়েও বাংলাদেশ সম্ভব না।
অনুষ্ঠানে অনুভূতি প্রকাশ করে বাংলা বিভাগের ২০২৩-২৪ সেশনের এক শিক্ষার্থী বলেন, ইতোপূর্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিবিরের নানা ভালো কাজ দেখেছি। জবিতে ভর্তি হওয়ার পর নিজ চোখে দেখার সুযোগ হয়েছে। আজ শিবিরের এই অনুষ্ঠান ও কিছুদিন আগে অনুষ্ঠিত ফল উৎসবের মতো সামনে শিবির আরও ভালো আয়োজন করবে বলে আশা করি।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২৩-২৪ সেশনের শিক্ষার্থী জয়নব হাসান বলেন, এরকম একটি সুন্দর অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে ধন্যবাদ। আমি ব্যক্তিগতভাবে অরাজনৈতিক কিন্তু রাজনীতি সচেতন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন- ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, জবি শিবিরের সদ্য সাবেক সভাপতি আসাদুল ইসলামসহ বর্তমান নেতৃবৃন্দ।
টিকে/