ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো কি এক হতে পারবে? জিল্লুর রহমানের বক্তব্য

টিভি উপস্থাপক ও সাংবাদিক জিল্লুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন আমরা দুটো ধারা লক্ষ্য করছি। একটি ধারা হলো, মধ্যপন্থার রাজনীতি। এর নেতেৃত্বে বিএনপিকে দেখতে পাচ্ছি। একটা সময় পর্যন্ত বিএনপিকে ডানঘেঁষা মধ্যপন্থার দল বলা হতো।

আর আওয়ামী লীগ হচ্ছে, বামঘেঁষা মধ্যপন্থার দল। কিন্তু এখন আমরা লক্ষ্য করছি, বিএনপি পুরোপুরি একটা মধ্যপন্থার দলে পরিণত হয়েছে।

সম্প্রতি একটি ইউটিউবের আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, বিএনপির বেশ কিছু মৃত দল আছে।

কারো সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে। যেমন জামায়াতে ইসলামী অনেক আগেই সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে। আর বেশ কিছু রাজনৈতিক দল আছে ছোট ছোট, যারা বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী আন্দোলনে বিভিন্ন সময়ে কাছাকাছি ছিল। তাদের কেউ বাম।

কেউ ডান। কেউ কট্টর। ডান কেউ মধ্যপন্থার। ছোট ছোট দল এই দলগুলোর কেউ এখনো বিএনপির সঙ্গে আছে।

সাংবাদিক জিল্লুর রহমান জানান, বিএনপিকে কখনো কখনো অন্যদের সঙ্গে দেখা যায়।

অর্থাৎ বিএনপির বিপরীত শক্তির সঙ্গে দেখা যায়। বিপরীত শক্তিটা কারা? বিপরীত শক্তির মধ্যে রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রধান হচ্ছে জামায়াত ইসলামী। এবং এখন ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি বা এনসিপির নাম আছে। এনসিপি বা জাতীয় নাগরিক পার্টির নাম অনেকের মুখে মুখে আছে। এটা আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে পরিচিত ছিল যারা জুলাই আগস্ট অভ্যুত্থানে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। নেতৃত্ব বলতে সেই আন্দোলনের একক কোন নেতা ছিল না। প্রায় ১৬৫ জনের মতো সমন্বয়ক ছিল। তাদের মধ্যে সামনের সারিতে পরিচিত যারা তাদের কয়েকজন মিলে এই দলটা করেছেন। দলটা আলোচনায় আছে এই কারণে যে, যেহেতু ওই আন্দোলনের সময় এই মুখগুলো পরিচিত ছিল। অনেকেই তাদেরকে নানাভাবে সহায়তা করেছেন। সরকারের ওপর তাদের প্রচণ্ড রকম প্রভাব আছে এবং সরকারের একটা ব্লেসিংস এনসিবির ওপর আছে। এমনকি প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহম্মদ ইউনূস যে তাদেরকে সহায়তা করতে চান, সেটা তার কথাবার্তায় নানাভাবে প্রকাশিত হয়েছে। এটিকে সরকারি দল বললেও অত্যুক্তি হবে না।

জিল্লুর রহমান বলেন, আবার এনসিপি ও জামায়াতের মধ্যে এক ধরনের ঘনিষ্ঠতা আমরা দেখতে পাই। সেই সঙ্গে এনসিপি জামায়াত কেন্দ্রিক যে শক্তি তৈরি হচ্ছে, এটাকে মূলত তারা ফ্যাসিবাদবিরোধী বলছেন, স্বৈরাচারবিরোধী বলছেন। কিন্তু মূলত তারা আওয়ামী লীগবিরোধী ভারতবিরোধী একটা শক্তি হিসেবে নিজেদেরকে পরিচিত করতে চাইছেন। এটাই তাদের মূল লক্ষ্য এবং সেটা করতে করতে এখন তারা বিএনপির বিরুদ্ধে একটা কঠোর অবস্থা নিয়েছেন এবং বিএনপিকে যতভাবে আন্দারমাইন্ড করা যায় সেই চেষ্টাটা তাদের মধ্যে আছে। এবং এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অন্যান্য ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো।

তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী চেষ্টাটি দীর্ঘদিন যাবত করছে। তাদের আরেকটা উইং -অনেকে বলে, যদিও এটা ইন্ডিপেন্ডেন্ট আরেকটা পলিটিক্যাল পার্টি- এবি পার্টি। যাদের কথা এখন খুব বেশি শোনা যায় না। তারা যতটা লাইমলাইটে শেখ হাসিনার শাসনামলে ছিলেন বা গণঅভ্যুত্থান উত্তর ছিলেন। কিন্তু ধীরে ধীরে জামাত যত বেশি সামনে আসতে শুরু করেছে এবি পার্টি তত মৃয়মান হয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, হয়তো এনসিপিকেও এরকম একটা জায়গায় আগামী দিনগুলোতে চলে যেতে হতে পারে। না গেলে ভালো। জামায়াতের সঙ্গে আরেকটা বড় শক্তি হলো ইসলামী আন্দোলন। যাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত ইসলামীর বৈরীতা দীর্ঘকালের। ইসলামী আন্দোলনের বিএনপির সঙ্গে কিছুটা সক্ষতা একটা সময় ছিল। কিন্তু তারা এখন পুরোপুরি জামায়াতের সঙ্গে। জামায়াত এবং ইসলামী আন্দোলনের মধ্যে কিন্তু বৈরিতা অনেক পুরনো। এবং বেশ শক্ত বৈরিতা তাদের মধ্যে ছিল। তারাও এখন ওই প্লটফর্মে। তারা একই সুরে কথা বলছে।

হেফাজত ইসলাম একটা অরাজনৈতিক শক্তি। কিন্তু এই অরাজনৈতিক শক্তিকেও অনবোর্ড করেছে জামায়াত। আপনারা জানেন, হেফাজতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্কের কথা। শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে আওয়ামী লীগ সরকার ক্র্যাকডাউন চালিয়েছিল। সেখানে অনেক হেফাজত কর্মীর জীবনদান, মাদরাসা ছাত্রের জীবনদান, এই ইতিহাসগুলো আমরা জানি। কিন্তু সেই হেফাজত আবার একটা সময় পরে শেখ হাসিনাকে কওমি মাতা হিসেবে উপাধি দিয়েছে। এবং আমরা হেফাজতের প্রভাব আওয়ামী লীগ সরকারের ওপরও দেখেছি। সুপ্রিম কোর্টে স্ট্যাচু বানাতে দেওয়া হয়নি। আমরা দেখেছি, আমাদের বাচ্চাদের পাঠ্যপুস্তকে কীভাবে হেফাজতের ইনফ্লুয়েন্স বা তাদের চাওয়াগুলো পূরণ করা হয়েছে। সেই হেফাজতের মধ্যে আবার খেলাফত মজলিস কিছু রাজনৈতিক দলও আছে। সো এরা এখন সবাই মিলে বাংলাদেশে একটা ইসলামপন্থীদের ঐক্য করতে চাইছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটা মুসলিম প্রধান দেশ। দেশের ৯০ ভাগ মানুষ প্রায় মুসলিম। কাজেই ইসলামপন্থীদের দল শুনলেই মনে হয়, ইসলামকে রক্ষা করতে হলে এদের সঙ্গেই হাঁটতে হবে। এদের পেছনে যেতে হবে। ব্যাপারটা এরকমভাবে দেখবার কোনো সুযোগ নাই। ইসলাম একটা ধর্ম। আমরা যারা মুসলিম যারা প্র্যাকটিস করেন কিংবা করেন না সবাই কিন্তু ইসলামের অবমাননা কেউ সহ্য করতে পারেন না। এমন মুসলমানের সংখ্যাও কম নয়।

বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ মুসলিম কিন্তু যে চর্চাটা আমরা করি এবং সুফিজম থেকে বাংলাদেশের এই ইসলামের উৎপত্তি যেখানে সৌহার্দ্য সম্প্রীতি অন্যান্য ধর্মের সঙ্গে প্রতি সহিষ্ণুতা। ধর্মের মূল কথাও আসলে অন্য ধর্মের প্রতি সহিষ্ণতার বিষয়টা আছে। সব ধর্মেই আছে। ইসলামে তো আরো বিশেষভাবে আছে। তো ধর্মের চর্চা ধর্মের প্রতি বিশ্বাস এটা হচ্ছে ট্রাডিশনাল ইসলাম। আমরা যদি বলি, পলিটিক্যাল ইসলাম হচ্ছে ধর্মের নামে রাজনীতি করা। ধর্মকে ব্যবহার করা। রাজনীতি করা। মূল কথা হচ্ছে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে হবে। তারপরে আপনি ইসলামের পন্থায় ইসলামের অনুশাসন মেনে হয়তো দেশ শাসন করবেন। কতটা করবেন, কতটা করবেন না, কতটা কৌশলী আপনি হবেন, সেগুলো তাদের ব্যাপার।

এর মধ্যে অনেক উগ্রপন্থাও অনেক সময় যুক্ত হয়ে পড়ে। সেটাও আমরা দেখেছি। সেটাও কতটা ইসলামের সঙ্গে যায়। আবার এই যে আমি যখন কথা বলছি, আপনি নিচে কমেন্টগুলো দেখবেন, এই ইসলামপন্থী দলগুলোর অনেক অনেক সমর্থক সেখানে কমেন্টস করছেন। তাদের ভাষা যদি আপনি দেখেন, আপনি দেখবেন সেটা ইসলামের সঙ্গে কোন অবস্থাতেই যায় না। তো এই হচ্ছে প্যাটার্ন।

তো এই শক্তিগুলো একত্রিত হবার একটা চেষ্টা করছে। কিন্তু হিস্ট্রি যেটা বলে, বাংলাদেশে এখন এই মুহূর্তে নিবন্ধিত রাজনৈতিক ইসলাম বা ইসলামী দলের সংখ্যা হচ্ছে ১০। এর বাইরে অনিবন্ধিত কিছু ছোট দলও রয়েছে। এরা মূলত তিনটে ধারায় বিভক্ত। একটা হচ্ছে, জামায়াত ইসলাম যারা বেসিক্যালি স্ট্রং একটা পলিটিক্যাল ইসলামিস্ট ফোর্স। যাদের ইতিহাস আমরা জানি। একাত্তরের পরের খুবই রেজিমেন্টেড একটা ফোর্স। বাট এ কথাও ঠিক যে জামাতের রাজনীতির ইতিহাস তার জন্ম থেকে এ পর্যন্ত ভুলের ইতিহাসে ভরা। তারা অধিকাংশ সময় কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়নি। এর বাইরে কওমি মাদরাসাভিত্তিক দেওবন্দ দলের একটা ধারা আছে। এবং আরেকটা হচ্ছে ইসলামী আন্দোলনের মতো দলগুলো। এরকম তিনটা ধারা।

১৯৭১ সালেও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় ইসলামী দলের সংখ্যা ছিল ১০। এখনো নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ১০। আমি যেটা আগেই বলেছি। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ওপর কখনো নিষেধাজ্ঞা এসছে। কখনো সেটা তুলে নেওয়া হয়েছে। ১৯৭৯ সাল থেকে যত নির্বাচন বাংলাদেশে হয়েছে, আমরা দেখি, ইসলামী দলগুলো কিন্তু সব একসঙ্গে কখনোই হতে পারেনি। তাদের মধ্যে বিভেদ বিভাজন আমরা সবসময় দেখেছি। সব নির্বাচনে একটা চেষ্টা হয়েছে তাদেরকে একত্রিত করবার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা হয়নি।

টিকে/

Share this news on:

সর্বশেষ

img
৬ মাস আগেই এক মিলিয়নের বেশি হজযাত্রীর নিবন্ধন সম্পন্ন: সৌদি আরবের হজ ও ওমরা মন্ত্রী Nov 13, 2025
img

প্রধান উপদেষ্টা

শিশুদের প্রযুক্তি, খেলাধুলা ও উদ্যোক্তা প্রতিযোগিতায় আনতে হবে Nov 13, 2025
img
আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিচ্ছেন পুলিশ Nov 13, 2025
img
২৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা সেন্টের মুদ্রা উৎপাদনের ইতি টানবে যুক্তরাষ্ট্র Nov 13, 2025
img
পদ্মার ১ কাতল ৬৬ হাজার টাকায় বিক্রি! Nov 13, 2025
img
তরুণদের শুধু দেশে নয়, বিশ্বেও সেরা হতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা Nov 13, 2025
img
২৫ বছরের টেস্ট ইতিহাসে রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ Nov 13, 2025
img
অস্কার মনোনীত অভিনেত্রী স্যালি কার্কল্যান্ড আর নেই Nov 13, 2025
img
পঞ্চগড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস Nov 13, 2025
img
এবার ঢাকায় আসছেন আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তি Nov 13, 2025
img
এবার গোপালগঞ্জে গণপূর্ত অফিসে দুর্বৃত্তদের হামলা Nov 13, 2025
img
ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মামলা, অপেক্ষায় দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকর্মীরা Nov 13, 2025
img
অতিপ্রাকৃত প্রেমের সম্ভাবনা, ম্যাডক সিনেমার নতুন মোড় Nov 13, 2025
img
আরমান মালিকের জীবনে সালমানের অবিস্মরণীয় প্রভাব Nov 13, 2025
img
ক্রিকেটার ইমরুল কায়েসের ডাকঘরে চাকরি, বেতন ৪৪৯০ টাকা Nov 13, 2025
img

মাহফুজ আলম

বিটিভি যেন কোনো রাজনৈতিক শক্তির স্বার্থের হাতিয়ার না হয়ে ওঠে Nov 13, 2025
img
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ১১ এজেন্ডা নিয়ে সংলাপে ইসি Nov 13, 2025
আইসিসির মাস সেরা ক্রিকেটার দুই দক্ষিণ আফ্রিকান Nov 13, 2025
বিশ্বকাপে দলের বোঝা হতে চায় না মেসি Nov 13, 2025
img
নারীর জীবন নানা শর্তে বাঁধা, পুরুষের শুধু চাকরির চাপ: অনু ইমানুয়েল Nov 13, 2025