প্রবল বেগে চীনের হংকং ও ম্যাকাওয়ের দিকে এগিয়ে আসছে শক্তিশালী টাইফুন উইফা। এরই মধ্যে এই অঞ্চলে প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এদিকে এর মোকাবিলায় হংকংয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। হংকং কর্তৃপক্ষ স্কুলে ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করে দিয়েছে। হংকং ও চীনে বাতিল করা হয়েছে শত শত ফ্লাইট। অন্যান্য পরিবহন সেবাও বন্ধ করা হয়েছে।
মার্কিন আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ সংস্থা এনওএএ এবং জাপানের হিমাওয়ারির সর্বশেষ উপগ্রহ প্রতিবেদন অনুসারে, টাইফুন উইফা রোববার (২০ জুলাই) দুপুর ১টা নাগাদ হংকংয়ের ৬০ কিলোমিটার (৩৭ মাইল) দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল এবং এটা দ্রুতই দক্ষিণ চীনের উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
হংকংয়ের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ সংস্থা হংকং অবজারভেটরি ১০ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করেছে। সংস্থাটি বলেছে, ‘এই মুহূর্তে টাইফুনটির বাতাসের গড় গতি ঘণ্টায় ১১৮ কিলোমিটার যা আরও বাড়তে পারে এবং হংকংয়ের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে। এর শক্তিশালী ঝড়ো বাতাস হংকংয়ের দক্ষিণ অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’
রয়টার্স জানিয়েছে, উইফার প্রভাবে হংকং দ্বীপের পূর্ব উপকূলে বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে। এদিকে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, চীনের হাইনান ও গুয়াডং প্রদেশেও উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আজ রোববার দিনের শেষ দিকে এই দুই প্রদেশের মাঝামাঝি স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
দুর্যোগ মোকাবিলা এবং উদ্ধার ব্যবস্থা নিয়ে হংকং প্রশাসন সর্বোচ্চ প্রস্তুতিতে রয়েছে। হংকংয়ে শত শত ফ্লাইট ও গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি উত্তাল সমুদ্রের কারণে ফেরি চলাচলও স্থগিত রাখা হয়েছে। নগরজুড়ে ঝড়ের প্রভাব স্পষ্ট- বাতাসে কেঁপে উঠছে ভবন, রাস্তাঘাট জনশূন্য হয়ে পড়েছে।
রোববার হংকংয়ের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রায় ৫০০টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে এবং ৪০০টি ফ্লাইট উড্ডয়ন বা অবতরণ পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।
এদিকে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, আগাম প্রস্তুতি হিসেবে দক্ষিণ চীনের লক্ষ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। রোববার চীনের শেনজেন, ঝুহাই ও ম্যাকাও শহরগুলোতে দিনের সমস্ত ফ্লাইট বাতিল বা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।
চীনের জাতীয় আবহাওয়া বিভাগ গত শনিবারই (১৯ জুলাই) ‘ইয়েলো অ্যালার্ট’ জারি করে, যা চার-স্তরের ঘূর্ণিঝড় সতর্কতা ব্যবস্থার মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ তীব্র সতর্কতা।
টাইফুন উইফার প্রভাবে শনিবার ভিয়েতনামের হা লং উপসাগরে একটি পর্যটকবাহী নৌকা উল্টে যায়। এতে অন্তত ৩৮ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ফিলিপিন্সে আবহাওয়াবিদরা এক পূর্বাভাসে বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় উইফা (ফিলিপিন্সে ক্রাইসিং নামে ডাকা হচ্ছে) দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর কারণে আরও তীব্রতর হয়ে উঠছে। এমন অবস্থায় বাসিন্দাদের উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত এবং সম্ভাব্য তীব্র আবহাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ফিলিপিন্সের আবহাওয়া বিভাগ পাগাসা ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের বাসিন্দাদের আগামী ৭২ ঘন্টার জন্য বিশেষ করে শহরাঞ্চল বা নিম্নাঞ্চলে সম্ভাব্য বন্যা এবং ভূমিধসের জন্য সতর্ক থাকতে বলেছে।
এমকে/এসএন