উত্তরায় মাইলস্টোন কলেজের ওপর বিমান বিধ্বস্ত হয়ে বহু শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছে। কান্নায় ভেঙে পড়েছে পরিবার, আতঙ্কে দিশেহারা সহপাঠীরা। দেশের মানুষ শোকে বিহ্বল কিন্তু এমন এক ভয়াবহ রাতে সরকারের অগ্রাধিকার ছিল ভিন্ন—রাজনৈতিক বৈঠক, ‘ঐক্যের’ আলাপ আর ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধের বুলি। আসলে মানবিকতা কোথায়— প্রশ্ন রাখেন সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল।
সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এ নিয়ে তিনি বিশ্লেষণ করেছেন। মাসুদ কামাল বলেন, ‘মাইলস্টোন কলেজে ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরও সরকারের পক্ষ থেকে নির্ভরযোগ্য তথ্যের অভাব, সিদ্ধান্তহীনতা ও দেরিতে প্রতিক্রিয়ার কারণে মানুষের মধ্যে গভীর হতাশা ও সন্দেহ জন্ম নিয়েছে। অথচ সেই রাতে দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলো এবং সরকারের উপদেষ্টারা ব্যস্ত ছিলেন রাজনৈতিক ঐক্য ও ‘ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ’ নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে। এই রাজনৈতিক বৈঠক কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য ছিল না।
তিনি বলেন, ‘যখন সারা দিনজুড়ে মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও রাস্তায় রক্তাক্ত ছাত্রদের চিৎকার চলছিল ঠিক তখন রাত ৯টায় প্রধান উপদেষ্টা ডেকে বসালেন এক ‘সর্বদলীয় বৈঠক’। চারটি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল—বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি, ইসলামী আন্দোলন ও অনিবন্ধিত এনসিপি। বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা বললেন, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধ, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ।’
বৈঠক শেষে তাদের তোলা ছবি প্রসঙ্গে বলেন, ‘আটজন রাজনৈতিক নেতার মধ্যে ছয়জনের গলায় প্রবেশের 'পাস' ঝুলছে। শুধু এনসিপির দুই নেতার গলায় তা নেই। সরকারি দলের সঙ্গে এনসিপির সম্পর্ক থাকা নিয়ে যে প্রশ্ন ছিল, এই ছবি তার উত্তর দিয়ে দিয়েছে।’
শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ নিয়ে মাসুদ কামাল বলেন, ‘পরীক্ষার আগের রাতে সোয়া ২টার দিকে একজন উপদেষ্টা তার ফেসবুক পোস্টে পরীক্ষার স্থগিত হওয়ার খবর জানায়। এতো দেরিতে নেওয়া সিদ্ধান্তে অধিকাংশ শিক্ষার্থী তা জানতে পারেনি। তারা পরদিন সকালে পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়েই জানতে পারেন—পরীক্ষা স্থগিত।
এই চরম অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বহীনতার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে। তাদের আন্দোলন যুক্তি ছিল।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভের সময় তাদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়, লাঠিচার্জ করা হয়। একজন শিক্ষার্থীর প্রশ্ন—‘শিক্ষা উপদেষ্টা আর কত বড় ব্যর্থতার প্রমাণ দেবার পর পদত্যাগ করবেন?’ আমারও একই প্রশ্ন আর কত ব্যর্থতার পর তিনি পদত্যাগ করবেন।’
মাসুদ কামাল বলছেন, ‘আমরা এক ভয়াবহ সময় পার করছি। সরকার ব্যস্ত কীভাবে বিক্ষোভ দমন করা যায়, আর রাজনীতিবিদরা ব্যস্ত কীভাবে ঐক্যের ছবি তুলে ধরা যায়। অথচ বাস্তবতা হলো—ছাত্ররা লাশের পাশে দাঁড়িয়ে চিৎকার করছে, আর তাদের দাবির কোনো স্থান নেই জাতীয় আলোচনায়।’
ইউটি/টিএ