আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে আন্তরিক ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ সরকার: প্রধান উপদেষ্টা

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণরত যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, রোগীদের সর্বোত্তম চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে আমরা আন্তরিক ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

শনিবার (২৬ জুলাই) রাত ৯টা ১০ মিনিটে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে যান তিনি। সেখানে পৌঁছে প্রধান উপদেষ্টা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিনের কাছ থেকে ওইদিনের ঘটনার বর্ণনা শোনেন এবং আহত রোগীদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান।

এ ঘটনায় নিহতদের পরিবার ও আহতদের মানসিক সুস্থতা নিশ্চিতে ও ট্রমা কাটিয়ে উঠতে কাউন্সিলিংয়ের প্রতি জোর দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেন তিনি। এ কার্যক্রমে সকল নিহতের পরিবার, আহত ও আহতের পরিবার এবং মাইলস্টোন স্কুলের প্রত্যেককে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

এর পাশাপাশি, দগ্ধ রোগীদের নিকটাত্মীয়দের হাসপাতালে অবস্থানের সময়ে তাদের প্রতি যত্নশীল হওয়ার বিষয়ে পরিচালককে নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, 'রোগীদের সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিত করতে আমরা আন্তরিক ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।'

বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত সকল চিকিৎসক, নার্সসহ সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা একইসঙ্গে, বিদেশ থেকে যারা এ বিপদের সময়ে বাংলাদেশের পাশে এসে দাড়িয়েছেন তাদেরকেও ধন্যবাদ জানান।

পরিচালক অধ্যাপক নাসির প্রধান উপদেষ্টাকে অবগত করেন যে, বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের মাল্টিডিসিপ্লিনারি কনসালটেশন বোর্ডের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। রোগীদের আন্তর্জাতিক প্রটোকল অনুযায়ী মূল্যায়ন করা হয়েছে এবং সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের পাশাপাশি বিদেশি বিশেষজ্ঞদেরও পরামর্শ গ্রহণ করা হচ্ছে।

তিনি জানান, সবার সম্মিলিত মূল্যায়নে বর্তমানে বার্ন ইনস্টিটিউটে ৪ জন ক্রিটিক্যাল, ৯ জন সিভিয়ার এবং ২৩ জন ইন্টারমিডিয়েট ক্যাটাগরির রোগী আছেন। এই মূল্যায়ন রোগীর অবস্থা অনুযায়ী সময়ে সময়ে পরিবর্তন হতে পারে বলেও জানান তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা চিকিৎসার জন্যে কোনো ধরনের যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম, ওষুধ বা অন্যকিছুর প্রয়োজনীয়তা আছে কি না জানতে চান।

পরিচালক বলেন, এই মুহূর্তে চিকিৎসাধীন রোগীদের জন্যে প্রয়োজনীয় সকল কিছু সরকারের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। এর বাইরে যে দুয়েকটি সরঞ্জামের প্রয়োজন ছিল সেগুলো সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদল সাথে করে নিয়ে এসেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা হতাহতের বিস্তারিত জানতে চাইলে বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান ঘটনার বিশদ বর্ণনা দেন।

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি হাসপাতালগুলোতে দগ্ধ রোগীদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে হাসপাতালের চিকিৎসকরা অতিদ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে প্রায় সবাইকে বার্ন ইনস্টিটিউটে এবং কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। ঘটনার পরপরই মন্ত্রণালয় থেকে বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালককে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছিল। চিকিৎসক, নার্সসহ সকল সেবাদানকারীরা প্রস্তুত ছিলেন এবং একসাথে জরুরি বিভাগে আগত প্রায় ৩০ জন দগ্ধ রোগীকে দ্রুত চিকিৎসাসেবা দিতে সক্ষম হয়েছেন।

তিনি আরও জানান, প্রায় ১০টি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে পরবর্তীতে অন্য হাসপাতালে রোগীদের দ্রুত স্থানান্তরিত করার কারণে প্রথমদিকে নিহত ও আহত রোগীর সংখ্যা নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল। এছাড়া বেশ কয়েকটি দেহাবশেষ ছিল যেগুলো ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করতে হয়েছে, যার ফলে কিছু সময় লেগেছে।

অধ্যাপক সায়েদুর জানান, রোগীদের স্থানান্তরের সময়ে অ্যাম্বুলেন্সের অভাব প্রকটভাবে বোঝা গেছে। এই দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশের জরুরি স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতাগুলো দৃশ্যমান হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা অবিলম্বে এ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠানোর নির্দেশ দেন এবং দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।

হাসপাতাল পরিদর্শনকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম উপস্থিত ছিলেন।

এমআর  
 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দীর্ঘ বিরতির পর আবার বড় পর্দায় ফিরছেন তানিয়া বৃষ্টি Nov 01, 2025
img
হাসপাতালে ভর্তি বর্ষীয়ান অভিনেতা ধর্মেন্দ্র Nov 01, 2025
img
প্রাণ বাঁচাতে ঘর ছাড়ছে হাজারো সুদানি নাগরিক Nov 01, 2025
img
জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই বিএনপির রাজনীতি: কফিল উদ্দিন Nov 01, 2025
img
৭৫ আসনে প্রাথমিক প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ লেবার পার্টি Nov 01, 2025
img
বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর একটি দল জুলাই আন্দোলন নস্যাৎ করার চেষ্টা করছে : জিন্নাহ কবির Nov 01, 2025
img
ইউক্রেনে যুদ্ধ থামাতে একসঙ্গে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র-চীন : ট্রাম্প Nov 01, 2025
img
ট্রাম্পের বৈশ্বিক শুল্কনীতি বাতিলের দাবিতে মার্কিন সিনেটে রেজোল্যুশন পাস Nov 01, 2025
img
বামপন্থি গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের আহ্বান Nov 01, 2025
img
প্রতারণার কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গেছে এই সরকার: মান্না Nov 01, 2025
img
চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে না দেওয়া অপমানজনক: এহছানুল হক মিলন Nov 01, 2025
আইকনিক সড়ক ভাঙার পরিকল্পনা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা Nov 01, 2025
গণভোট প্রসঙ্গে জামায়াত আমিরের স্পষ্ট বার্তা Nov 01, 2025
কোনো চটকদারিত্বের কাজ-কর্মে আমরা নাই: মেঘমল্লার বসু Nov 01, 2025
"১০ হোন্ডা, ২০ গুন্ডা, ইলেকশন ঠান্ডা" Nov 01, 2025
বিমানবন্দরে নেমে এ কি দেখলেন বনি আমিন! Nov 01, 2025
সংস্কার প্রশ্নে উভয়সংকটে বিএনপি : মানলে পরাজয়, প্রত্যাখ্যান করলে সংস্কারবিরোধী Nov 01, 2025
১০ মিনিটে গোটা বিশ্বের সারাদিনের সর্বশেষ আলোচিত সব খবর Nov 01, 2025
চাকরি হারিয়ে রাস্তায়! ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্র'তিবাদ! Nov 01, 2025
img
পথচারীকে চাপা দিয়ে পালানোর সময় ৪ গাড়িতে ধাক্কা বাসের, আহত ১০ Nov 01, 2025