জুলাইয়ের শিক্ষা এখনও তাজা রয়েছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, মাঝে মাঝে ভয় হয়, জুলাইয়ের শিক্ষা ক্ষয়ে যাবে।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জুলাই বিপ্লবের ১ বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়ন শীর্ষক অনুষ্ঠানে এই কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আয়না ঘরের প্রতিটি কক্ষ যদি দেখাতে পারতাম, তাহলে জাতি বুঝতে পারতো ১৬ বছর ধরে কী কাণ্ডটা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশকে একেবারে নতুন করে বানিয়ে আনতে হবে। ওপরে একটি প্রলেপ দেয়ার মতো নয়, গভীর থেকে পরিবর্তন আনতে হবে। যদি তা না করি, যে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আজ আমরা কথা বলছি আবার ঘুরেফিরে তারাই আসবে। যে সংস্কার দরকার, সে সংস্কার আরও আরও গভীরের সংস্কার।’
‘আমাদের জাতির ভেতরে এমন কিছু রয়ে গেছে— যত শাস্তিই দিই, সেটার বীজ বোধয় আমাদের মধ্যে থেকে যাবে। সেই বীজ থেকে কীভাবে আমরা মুক্তি পাই, এটাই আমাদের জানার বিষয় এবং চ্যালেঞ্জর বিষয়। কাগজে-কলমে সংস্কার নয়, দরকার গভীরতম সংস্কার। মানুষ হিসেবে নিজেদের পরিচিত করা,’ যোগ করেন ড. ইউনূস।
তিনি বলেন, ‘জুলাই আমাদের পুনর্জন্মের মাস, এটি শুধু স্বৈরাচার-মুক্তির মাস নয়। এখনও আমাদের সামনে সুযোগ আছে। জুলাইয়ের শিক্ষা এখনও তাজা আছে। মাঝেমধ্যে ভয় হয়, এই শিক্ষা ক্ষয়ে যাবে, ভুলে যাব। আবার অতীতের মতো ভাষা রপ্ত হয়ে যাবে। আবার সেই ভাষা ব্যবহার করবো। সেইদিকে যাতে আমাদের যেতে না হয় আর কোনোদিন। এই পথ একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে। আমাদের নতুন পথ রচনা হবে। সেই পথের দিকে যাবো, এটাই আমাদের কমিটমেন্ট।’
লিখিত বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সংস্কার কর্মসূচির পাশাপাশি আমরা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ীদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করছি। কিন্তু বিচার মানে শুধু শাস্তি নয়—বিচার মানে এই নিশ্চয়তা প্রদান করা যে, রাষ্ট্রক্ষমতা আর কখনো জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার হবে না।’
রাজনৈতিক ব্যবস্থা গঠনের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য গড়ার চেষ্টা করা হচ্ছে—উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই ঐকমত্য এমন একটি ব্যবস্থাকে নিশ্চিত করবে যা অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করে। আমাদের লক্ষ্য একটাই—একটি বাংলাদেশ গঠন করা, যেখানে প্রতিটি নাগরিক শান্তিতে, মর্যাদায়, গর্বে ও স্বাধীনতায় বাঁচতে পারে।’
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা সংকট পর্যন্ত, এমনকি গত বছরের জুলাই-আগস্টের সংকটকালীন সময়েও জাতিসংঘ সবসময় বাংলাদেশের পাশে ছিল বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
এফপি/এসএন