কেন ডিবি প্রধান হারুনকে জ্বীন বলে ডাকতেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন আদালতে দেয়া জবানবন্দীতে দাবি করেছেন, ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার থেকে গুলির সিদ্ধান্ত এবং মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশনা এসেছিল রাজনৈতিক পর্যায় থেকেই এবং এ নির্দেশ এসেছিল সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে।

২০১৮ সালের নির্বাচনের অনিয়ম, গুম, খুন ও আন্দোলন দমন প্রসঙ্গে ২৪ মার্চ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে পাঁচ পৃষ্ঠার জবানবন্দী দেন মামুন। এতে উঠে আসে, আন্দোলনের সময় প্রতিদিন রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বাসায় উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হতো, যেখানে উপস্থিত থাকতেন সচিব, ডিবি প্রধান হারুন, এসবি প্রধান মনিরুল, র‍্যাবের ডিজি, আনসারের ডিজি ও এনটিএমসির প্রতিনিধি জিয়াউল আহসানসহ অনেকে। এসব বৈঠকে গোপনে আন্দোলন দমন ও কৌশল নির্ধারণ করা হতো।

জবানবন্দীতে মামুন বলেন, একটি বৈঠকে ৬ আন্দোলন সমন্বয়কারীদের আটক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াতে মিডিয়ায় বিবৃতি দিতে বাধ্য করার পরিকল্পনা করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হারুনকে ‘জ্বীন’ নামে ডাকতেন, কারণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে তার ওপর আস্থা ছিল।

চাঞ্চল্যকরভাবে, মামুন জানান, হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর পরিকল্পনা এসেছিল র‍্যাবের তৎকালীন ডিজি হারুনুর রশিদের কাছ থেকে, যা ছিল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এসব ব্যবস্থায় অতিউৎসাহী ছিলেন তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, গোয়েন্দা প্রধান হারুন ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সরকার পতনের দিন, অর্থাৎ ৫ আগস্ট বিকেলে তিনি হেলিকপ্টারে পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে তেজগাঁও বিমানবন্দর হয়ে সেনানিবাসে আশ্রয় নেন বলে জানান মামুন।

জবানবন্দীর শেষাংশে তিনি গুলি চালিয়ে হতাহতদের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চান। তবে নিজের সম্পৃক্ততা নিয়ে সরাসরি কোনো দায় স্বীকার করেননি। বর্তমানে মামুন আসামি থেকে রাজসাক্ষী হয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার এই আবেদন মঞ্জুর করেছে সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশের শর্তে।

এফপি/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
অতীতের সব আইনমন্ত্রীই বিচার বিভাগের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে: আপিল বিভাগ Jul 30, 2025
img
কোহলিকে নেতৃত্ব থেকে সরাতে চেয়েছিলেন কারস্টেন, দাবি মঈন আলীর Jul 30, 2025
img
শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য রাশিয়ার হাতে ১০ দিন সময় আছে: ট্রাম্প Jul 30, 2025
img
চাঁদপুরে বিএনপির ৩ নেতা বহিষ্কার Jul 30, 2025
img
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক দুই ডিসিসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান Jul 30, 2025
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক কমাতে তৃতীয় দফায় আলোচনা শুরু Jul 30, 2025
img
ব্যারিস্টার আরমানকে বন্দি রাখার বিষয়টি জানতাম : সাবেক আইজিপির জবানবন্দি Jul 30, 2025
img
আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামিপক্ষের অভিযোগ গঠনের শুনানি আজ Jul 30, 2025
img
কমছে তিস্তার পানি, নদীপাড়ে ফিরছে স্বস্তি Jul 30, 2025
img
ফখরুলের ভাইয়ের গাড়িতে হামলার ঘটনায় বিএনপির ২ নেতা বহিষ্কার Jul 30, 2025
img
তামিমের বিপিএলে ফেরা নিয়ে ট্রেইনারের মন্তব্য Jul 30, 2025
img
সুনামির সতর্কতায় জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্র ছাড়ল সব কর্মী Jul 30, 2025
img
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি সবচেয়ে বেশি দায়ী : জাহেদ উর রহমান Jul 30, 2025
img
৩০ জুলাই লাল রঙে রাঙা প্রতিবাদে কাঁপে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম Jul 30, 2025
img
উরুগুয়েকে উড়িয়ে কোপা ফাইনাল-অলিম্পিকে ব্রাজিল Jul 30, 2025
img
শুল্কবিরোধ নিষ্পত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে প্যাকেজ প্রস্তাব দিল বাংলাদেশ Jul 30, 2025
হযরত আবু হুরায়রা রা এর কাহিনী | প্রতিদিনের ইসলামিক কার্টুন Jul 30, 2025
img
নিজের প্রশংসা শুনে যেমন ছিলো কঙ্গনার অনুভূতি Jul 30, 2025
img
জাপানে যুদ্ধের প্রস্তুতি? কুমামোতোয় দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের সিদ্ধান্ত Jul 30, 2025
img
আজ শুরু উচ্চমাধ্যমিক ভর্তির আবেদন, ৪৫ দিনে সম্পন্ন হবে প্রক্রিয়া Jul 30, 2025