বিএনপি গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ীদের দ্রুতবিচার এবং দেশের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন চায় বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনের ওপর জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা চাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার হোক। একই সঙ্গে দেশের যে জরুরি সংস্কারগুলো প্রয়োজন, সেগুলো বিলম্ব না করে দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক। তিনি বলেন, এটি ভুলে গেলে চলবে না যে, দেশের এখন এমন একটি সরকার প্রয়োজন যেটি সত্যিকার অর্থেই জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। কারণ জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে কাজ করার মধ্যে এবং ম্যান্ডেট ছাড়া কাজ করার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।’
তিনি আশা প্রকাশ করেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জনগণের কাছে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, অর্থাৎ একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তা তিনি বাস্তবায়ন করবেন। এ নির্বাচনের মাধ্যমেই একটি জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার ও সংসদ গঠিত হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে যেসব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ফ্যাসিবাদী শাসনের সময় ধ্বংস বা ভেঙে ফেলা হয়েছে, সেগুলোর পুনর্গঠন এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা দেশের সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করে ফেলেছিল কিংবা ধ্বংস করেছিল। এসব প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন করতে হবে। এটি সহজ কাজ নয়। সময় লাগবে, কষ্টসাধ্য হবে। আমাদের ধৈর্য ধরতেই হবে।
তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণার আহ্বান জানিয়ে সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐকমত্য গড়ে উঠেছে, তাকে স্বাগত জানান।
ফখরুল বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো সহনশীলতার অভাব। আমাদের এ সংকট অতিক্রম করতে হবে। আরও ধৈর্য ধরতে হবে। অতীতে আমরা যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছি, এটিও পারবো।
এত রক্ত ও আত্মত্যাগের পর দেশের জনগণকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি ‘গণতান্ত্রিক’ শব্দটির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, গণতন্ত্র এমন একটি ব্যবস্থা, যা ধীরে ধীরে আমাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে সক্ষম। হ্যাঁ, তা রাতারাতি হবে না, কোনো অলৌকিক পরিবর্তনও আসবে না। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, প্রকৃত পরিবর্তন আসবে কেবল গণতান্ত্রিক পথেই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এরই মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আজকের সংবাদপত্রে দেখে আমি খুশি হয়েছি যে, আমরা ১২টি মূল বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছি।
গত বছরের গণঅভ্যুত্থানের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের ‘নৃশংসতা’ নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, তার জন্য তিনি জাতিসংঘ ও তাদের মানবাধিকার কমিশনকে ধন্যবাদ জানান।
ইউটি/টিএ