জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) খুশি করতে জুলাই সনদ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন। তিনি বলেছেন, এনসিপিকে খুশি করতে জুলাই সনদ হচ্ছে। এনসিপি যা চায়, সেভাবেই সনদটা তৈরি হচ্ছে। ৭১ এর পর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বা সংবিধান এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে করে শেখ মুজিবকে খুশি করা যায় বা আওয়ামী লীগের কৃতিত্ব মানুষের কাছে জাহির করা যায়।
ঠিক একইভাবে এই জুলাই সনদ হতে যাচ্ছে। গণ অভ্যুত্থানের অন্যান্য স্টেকহোল্ডার, তাদের যে ১৪/১৫ বছরের লড়াই এবং আমরা যে কোটা সংস্কার আন্দোলন সফল করলাম, নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হলাম, ১৮ সাল থেকে ২৪ সাল পর্যন্ত লড়াই করলাম, গণ অভ্যুত্থানের একটা প্রেক্ষাপট তৈরি করলাম, সেই ইতিহাসকে গোপন করে বা লুকিয়ে একটা ইতিহাস বিকৃত করে জুলাই সনদ হতে যাচ্ছে।
একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে জুলাই সনদের খসড়া নিয়ে এসব কথা বলেন রাশেদ খাঁন।
গণ অধিকার পরিষদের এই নেতা বলেন, ১৪/১৫ বছরের আমাদের যে ধারাবাহিক লড়াই, সেই লড়াইয়ের শেষ পরিণতি লাভ করেছে এই জুলাই-আগস্ট মাসে।
অর্থাৎ যারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে বা এনসিপি যারা গঠন করেছে, তাদের যেমনভাবে অবদান আছে, ঠিক একইভাবে বিএনপির যারা গুম খুন হয়েছে, নিপীড়নের শিকার হয়েছে বা জামায়াতে ইসলাম বা গণ অধিকার পরিষদ বা অন্যান্য দলের অবদান ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু দেখলাম এই জুলাই সনদ হতে যাচ্ছে একটি এনসিপি মার্কা জুলাই সনদ। অর্থাৎ এনসিপিকে বড় হিসেবে দেখানো। এনসিপিকে একটি তৃতীয় শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।
সেই তৃতীয় শক্তির নমুনা এই জুলাই সনদে দেখতে পাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, যারা জুলাই আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃত্বে ছিলেন, তাদের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। অন্যান্য সমন্বয়ক যারা ছিলেন কেউ আত্মগোপনে, কেউ মাঠে নামছে না। তখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্লোগান ধরেছে তুমি কে? আমি কে? সমন্বয়ক সমন্বয়ক। অর্থাৎ এই গণঅভ্যুত্থানে কোনো একক কেন্দ্রীয় চরিত্র বা নেতৃত্বের জন্য আন্দোলনটা কখনোই থেমে থাকেনি।
ধারাবাহিকভাবে আন্দোলনটা চলেছে। ছাত্ররা যখন চুপ হয়ে গেছে, তখন শ্রমিকরা। যখন কারফিউ জারি করে সবাইকে ঘরে ঢুকিয়ে, তখন পেশাজীবীরা আন্দোলনটা নতুনভাবে শুরু করেছে। ৩১ জুলাই হাইকোর্টের সামনে আইনজীবীরা বের হয়ে এলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষকরা বের হয়ে আসলেন। তাদের মধ্যে বিএনপিপন্থী আইনজীবী ও শিক্ষকরাই বেশি ছিলেন। এই যে তারা বের হয়ে এলেন, এটাও কিন্তু একটা পরিকল্পনার অংশ ছিল। যারা পরিকল্পনা করেছে, তাদের একজন আমি নিজেও ছিলাম। এ জন্য আমি আন্দোলনের পুরো হিস্ট্রিটা জানি।
রাশেদ খাঁন বলেন, যখন সবাই আর মাঠে নামতে পারছেন না, তখন কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণ মানুষ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধটা করেছে। যতক্ষণ না পর্যন্ত পুলিশকে পরাভূত করা গেছে, ততক্ষণ পর্যন্ত হাসিনার পতনটা হচ্ছিল না। পুলিশ যখন পরাজয় বরণ করে নিয়েছে, যখন হাত জোড় করে বিভিন্ন জায়গায় মাফ চাওয়া শুরু করল, তখন মনে হচ্ছিল হাসিনার পতন আসলেই হতে যাচ্ছে। পুলিশ যতক্ষণ পর্যন্ত গুলি করে মানুষ মারছিল, ততক্ষণ পর্যন্ত কিন্তু মনে হচ্ছিল হাসিনায় হয়তো টিকে থাকবে। এই আন্দোলনে অনেকগুলো দৃশ্যায়ন রয়েছে।
পিএ/এসএন