জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহব্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ করার জন্য এক বছর পর আবারও দেশ গড়তে মাঠে নেমেছি। আমরা টানা ৩০ দিন জুলাই পদযাত্রা করেছি দেশের বিভিন্ন স্থানে, আমাদের বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। নানা প্রোপাগান্ডা হয়েছে, আমাদের এই পদযাত্রায় যে জনস্রোত নেমে এসেছিল সেই জনস্রোতে ঈর্ষান্বিত হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। আমাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় বাধা দেওয়া হয়েছে, হামলা করা হয়েছে, কিন্তু আমরা থেমে যাইনি, এই পদযাত্রাকে থামানো যায়নি।
এই জনস্রোতকে থামানো যায়নি। ইনশাআল্লাহ আগামীর বাংলাদেশে এনসিপির দিকে আসা এই জনস্রোতকে থামানো যাবে না।
বুধবার (৩০ জুলাই) রাতে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় আয়োজিত এক সমাবেশে উপস্থিত থেকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম আরো বলেন, আমরা সারা দেশ ঘুরে শুনেছি কৃষক চায় তার ফসলের ন্যায্য দাম, শ্রমিক চায় তার ন্যায্য মজুরি, তরুণরা চায় কর্মসংস্থান, মেধার মূল্যায়ন এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব।
মধ্যবিত্ত চায় মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপন, শিক্ষার অধিকার, স্বাস্থ্যের অধিকার, সাধারণ মানুষ চায় একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ, আলেম সমাজ চায় ধর্মীয় মূল্যবোধ সম্পন্ন সমাজ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় চায় নাগরিকের সমান অধিকার এবং নিরাপত্তা। চরাঞ্চলের মানুষ চায় ভূমির অধিকার, আমাদের সীমান্তে আমাদের ভাই-বোনেরা চায় জীবনের নিরাপত্তা, নদী পাড়ের মানুষেরা চায় নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন থেকে রক্ষা পেতে চায় তারা। সমগ্র বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ চায় সংস্কার এবং বিচার।
আমাদের গণ-অভ্যুত্থানের আহত যোদ্ধারা শহীদ পরিবারের সদস্যরা চায় গণ-অভ্যুত্থানের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, গণহত্যাকারীদের বিচার। আমরা নতুন বাংলাদেশের জন্য রাজপথে নেমেছি, লড়াই করে যাচ্ছি, সংগ্রাম করে যাচ্ছি। আমরা চাই বাংলাদেশের মানুষ যেই সমতা, যেই ন্যায্যতা, যেই মানবিক মর্যাদা এবং ইনসাফ চায় তার ভিত্তিতেই আমরা এই বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তুলব, নতুন সংবিধান তৈরি করব। এই বাংলাদেশে আমাদের সকল লড়াইয়ে জনগণের আকাঙ্ক্ষা ছিল সমতা, ন্যায্যতা, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায় বিচার। আমরা তার ভিত্তিতেই এই নতুন বাংলাদেশ নতুন সংবিধান গড়তে চাই।
আমরা এই পদযাত্রার মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টি কেমন বাংলাদেশ চায় সেটা আমরা বলেছি, আমরা আগ্রাসন মুক্ত বাংলাদেশ চাই, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চাই, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ চাই। আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বহু সংস্কৃতিভিত্তিক বাংলাদেশ চাই, আমরা ধর্মীয় মূল্যবোধ সম্পন্ন বাংলাদেশ চাই। আমরা এমন বাংলাদেশ চাই যেখানে সকল নাগরিকের মর্যাদা নিশ্চিত হবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা জানি গণ-অভ্যুত্থানের সময় আশুলিয়ার বাইপাইলে আমাদের ছাত্র-জনতা বুক চিতিয়ে লড়াই করেছিল ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে। আন্দোলনের হট স্পট ছিল এই আশুলিয়া-সাভার। আপনারা প্রতিরোধ করেছিলেন বিধায় ঢাকা সুরক্ষিত ছিল, ঢাকার মানুষ রাজপথে নামতে সাহস পেয়েছিল। যেভাবে আওয়ামী লীগের দোসররা এখানে ছাত্র-জনতাকে নির্মমভাবে গুলি করে মেরে আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিল। সেই শেখ হাসিনাকে ১০ বার ফাঁসি দিলেও তার অপরাধ কমবে না, ক্ষমা হবে না। বাংলাদেশের মানুষ কোনোদিন ক্ষমা করবে না শেখ হাসিনাকে। কোনোদিন ক্ষমা করবে না আওয়ামী লীগকে, কোনোদিন ক্ষমা করবে না কোনো রিফাইন আওয়ামী লীগকে।
নাহিদ ইসলাম আরো বলেন, সারা দেশে আমরা ঘুরলাম আমাদের কি অর্জন হয়েছে, আমরা মানুষের কথা শুনতে গিয়েছিলাম, গণ-অভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এখন কেমন আছে। আমাদের শহীদ পরিবাররা কেমন আছে, আমাদের আহত যোদ্ধারা কেমন আছে। আমরা দেখেছি তারা ভালো নাই, এটা আমাদের কষ্ট দিয়েছে। এটা আমাদেরও ব্যর্থতা যে, গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পরেও আমরা আমাদের দেশকে আমাদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী পরিবর্তন করতে পারি নাই। কিন্তু আমরা আমাদের আকাঙ্ক্ষা থেকে সরি নাই। গণ-অভ্যুত্থান ছিল নতুন বন্দোবস্ত তৈরির আন্দোলন, মানুষের গণ-বিস্ফোরণ। আমাদের নারীরা চায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ এবং ক্ষমতায়ন। ব্যবসায়ীরা চায় চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে নিরাপত্তা।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমাদের জুলাই পদযাত্রায় আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছিলেন সার্জিস আলম, সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেছিলেন অনেক রায়। এত অল্প সময়ের মধ্যে নিজেদের খরচে, জনগণের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পদযাত্রাকে সফল করতে পারায় এবং বাংলাদেশের মানুষকে একটা নতুন আশা এবং স্বপ্ন দেখাতে পারায় জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানান।
আয়োজিত পথসভায় ঢাকা জেলার প্রধান সমন্বয়কারী রাসেল আহাম্মেদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম আন্দোলনকারী ঢাকা জেলার যুগ্ম সদস্য সচিব মেহরাজ সীফাতসহ কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় নেতাকর্মীসহ শহীদ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত পহেলা জুলাই থেকে দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা শুরু করেছিল এনসিপি। আজকে সাভারের সমাবেশের মাধ্যমে জুলাই পদযাত্রা শেষ হচ্ছে। আগামী ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে ইশতেহার ঘোষণার মাধ্যমে পদযাত্রার পূর্ণাঙ্গ সমাপ্তি ঘটবে।
ইউটি/টিএ