বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) কমিশনের উপপরিচালক বাদী রণজিৎ কুমার কর্মকার মামলাটি দায়ের করেন। সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আসামিরা হলেন- বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু, ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলাম, পরিচালক শুভাশিষ বোস, শ্যাম সুন্দর সিকদার, নিলুফার আহমেদ, কামরুন নাহার আহমেদ, এ কে এম রেজাউর রহমান, এ কে এম কামরুল ইসলাম (এফসিএ), মো. আনোয়ারুল ইসলাম (এফসিএমএ), আনিস আহমেদ, প্রতিষ্ঠানটির কোম্পানি সচিব মো. শাহ আলম ভুঞা, জেনারেল ম্যানেজার ও শাখা ব্যবস্থাপক শিপার আহমেদ, উপ-মহাব্যবস্থাপক ওমর ফারুক, ক্রেডিট ইনচার্জ এস এম জাহিদ হাসান, প্রোপ্রাইটর (ফোর এস স্টিল) – মো. মাসুদ রানা এবং সাধারণ গ্রাহক কামাল হোসেন সেলিমও তার স্ত্রী সাহিদা আক্তার শিমু।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, মেসার্স ফোর এস স্টিল” নামীয় একটি নামমাত্র প্রতিষ্ঠান ২০১৩ সালের মার্চ মাসে বেসিক ব্যাংকের গুলশান শাখায় একটি হিসাব খুলে মাত্র তিন দিনের মধ্যে ৫০ কোটি টাকার ঋণের আবেদন করে। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. মাসুদ রানা ২০১৩ সালের ২৫ মার্চ বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের গুলশান শাখায় হিসাব খুলেই মাত্র তিন দিন পর ২৮ মার্চ ঋণের আবেদন করেন। জামানত হিসেবে বাড্ডা মৌজার বিভিন্ন খতিয়ান ও দাগভুক্ত ১৮.১৫ কাঠা জমি মর্টগেজ দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। আর ওই প্রস্তাব প্রস্তাব শাখার ক্রেডিট কমিটির কাছে পাঠানো হয়। ওই কমিটি বিভিন্ন নেতিবাচক দিক, ঝুঁকি ও ঋণ প্রদানে প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরলেও শুলশান শাখা প্রধান শিপার আহমেদ তা উপেক্ষা করে নিজের একক ক্ষমতাবলে ঋণ প্রস্তাবটি প্রধান কার্যালয়ে পাঠায়। ওই বছরের ২৮ এপ্রিল ঋণ প্রস্তাবের নানা ত্রুটি ও আপত্তির কথা উল্লেখ করে ঋণ না দেওয়ার পক্ষে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তারপরও ১০ জুন ব্যাংকটির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলাম ৩২৩তম পরিচালনা পর্ষদের সভায় ঋণ প্রস্তাবটি উপস্থাপন করেন। যেখানে চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু এবং অন্যান্য ৯ জন পরিচালক উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রস্তাবিত শর্তসাপেক্ষে ৩০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করেন। অথচ দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায় ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংক নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেছে। তাই আসামিদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা অনুসারে অভিযোগ আনা হয়েছে।
এর আগে ২০২৩ সালের ১২ জুন বেসিক ব্যাংকের আলোচিত সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুসহ ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দেয় দুদক।সংস্থাটির দায়ের করা মোট ৫৯ মামলার চার্জশিটের মধ্যে ৫৮টি মামলার তদন্তে নতুন আসামি হিসাবে আলোচিত আবদুল হাই বাচ্চু ও কোম্পানি সচিব শাহ আলম ভূঁইয়াকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ ২০১৫ সালে দায়ের করা কোনো মামলাতেই বাচ্চুকে আসামি করা হয়নি। যে কারণে দুদককে বারবার বিভিন্ন প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছে। মামলার দীর্ঘ ৮ বছর পর চার্জশিটে আবদুল হাই বাচ্চুকে আসামি করা হয়।
এছাড়া গত বছরের এপ্রিলে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট বাজারের ৩০.২৫ কাঠা জমি ক্রয় দেখিয়ে লুটপাটকৃত প্রায় ৯৫ কোটি টাকা গোপন করার চেষ্টা ও সাড়ে ৮ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু, তার স্ত্রী-সন্তান ও ভাই এবং হোটেল লা মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়।
অন্যদিকে আলোচিত বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের আলোচিত সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ২৪৮ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে ৪ মামলা দায়ের করে গত ৯ ফেব্রুয়ারি। মামলায় অবৈধ সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি ৫৮ কোটি টাকা কানাডায় পাচারের অভিযোগ আনা হয়। চার মামলার মধ্যে তিনটি মামলায়ই বাচ্চুকে সহযোগী আসামি করা হয়েছে। মামলায় তাকে ছাড়াও আসামি করা হয় তার স্ত্রী মিসেস শিরিন আকতার, ছেলে শেখ ছাবিদ হাই অনিক, তার মেয়ে শেখ রাফা হাইকে।
এফপি /এসএন