আমরা সবাই নির্দোষ, রিয়াদের ডাকে গিয়ে ফেঁসে গেছি : জানে আলম অপু

সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের গুলশানের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগের মামলায় রিমান্ড শুনানিতে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপু বলেছেন, রিয়াদ বাদে বাকি আমরা সবাই নির্দোষ। রিয়াদের ডাকে গিয়ে ফেঁসে গেছি।

শনিবার (২ আগস্ট) বিকেল ৩টার দিকে একটি সাদা প্রাইভেট গাড়িতে করে আসামিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এনে হাজতখানায় রাখা হয়। এরপর বিকেল ৩টা ২৮ মিনিটের ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তারের আদালতে লিফটে তোলা হয়।

লিফটে তোলার সময় তিনি মাথা নিঁচু করে মুখ লুকিয়ে ছিলেন। এসময় পুলিশ সদস্যরা তার মুখের সামনে থেকে হেলমেটের কাঁচ সরিয়ে দেন। পুলিশ সদস্যরা বলেন, সোনার মুখটা দেখান সবাইকে। তখন সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করেন, চাঁদাবাজি করেছেন কিনা। এসময় তিনি কোনো উত্তর না দিলেও তাকে অঝোরে কাঁদতে দেখা যায়। পেছনে পিছমোড়া করে হাতকড়া দিয়ে বেঁধে তাকে এজলাসে তোলা হয়।

এরপর আসামিকে কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। তখন তার মাথা থেকে হেলমেট খুলে ফেলেন পুলিশ সদস্যরা। পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গুলশান থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান আসামির ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।

‘আমরা সবাই নির্দোষ, রিয়াদের ডাকে গিয়ে ফেঁসে গেছি’
গণতান্ত্রিক ছাত্র-সংসদের বহিষ্কৃত নেতা অপু আদালতে, কাঁদলেন অঝোরে

এসময় আসামিপক্ষের আইনজীবী সাজিদুল ইসলাম রুবেল জামিন চেয়ে বলেন, আসামি এ মামলায় মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার। যারা চাঁদাবাজি করেছে তারা গ্রেপ্তার হয়ে এখন পুলিশ কাস্টডিকে। আসামি জড়িত নয়। আসামিকে গতকাল বিকেলে আটক হয়েছে। ২০ ঘণ্টার বেশি আসামিকে আটক রেখে কিছু পাইনি পুলিশ। তাই তাকে রিমান্ডে নেয়ার যৌক্তিকতা নেই। তার রিমান্ড বাতিলসহ জামিন চাই।

আসামিপক্ষের আরেক আইনজীবী শাহ আলম অভি আদালতকে বলেন, আসামি জুলাই আন্দোলনের একজন সম্মুখ সারির যোদ্ধা। আসামি কিন্তু আন্দোলনে গুলিতে মারা যেতে পারতো। তিনি এনসিপির রাজনীতির সাথেও যুক্ত। বিভিন্ন মিডিয়া এনসিপির বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। তারা এনসিপিকে টার্গেট করেছে। এনসিপি তথা জুলাই যোদ্ধাদের হেয় করতে ও বিতর্কিত করতে আসামি মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার। এই মামলাটা সাজানো। এজাহারে তার নাম নেই। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার আসামি। তিনি আসামির জামিন চান।

অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর কাইয়ুম হোসেন নয়ন বলেন, আদালত, জুলাই আন্দোলনে দল মত নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণে গণআন্দোলনে রূপ নেয়। আসামি জুলাই আন্দোলনের চেতনা বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত। এ ঘটনায় আসামিদের বাসা থেকে টাকা পাওয়া গেছে। আসামি জুলাই আন্দোলনে অংশ নেয়ার কথা বলে এ অপরাধ মুক্ত হতে পারেন না। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আসামির ১০ দিনের ১০ দিনই রিমান্ড প্রার্থনা করছি।

আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শেষে আসামি জানে আলম অপু বিচারকের উদ্দেশ্যে উচ্চস্বরে বলেন, ‘আই ওয়ান্ট টু সে সামথিং (আমি কিছু বলতে চাই)। তখন বিচারক বলেন, আপনার আইনজীবীরা যা বলল তার সাথে কি আপনি একমত। নাকি এর বাইরে কিছু বলার আছে? তখন আসামি অপু বলেন, আরও বলতে চাই।

তখন আসামি অপু বলতে থাকেন, এ মামলায় ইতোমধ্যে ৫ জন গ্রেপ্তার আছে। তাদের মধ্যে রিয়াদ বাদে বাকি ৪ জন জড়িত না। আমিও জড়িত নই। রিয়াদ বিপদে পড়েছে বলে আমাদেরকে জানায়। রিয়াদ বলেছিল, তোরা দ্রুত আয়। আমরা সবাই গিয়ে ফেঁসে গেছি।

আসামি জানে আলম অপু আরো বলেন, রিয়াদ বাদে বাকি ৪ জন নাবালক। তাদের রিমান্ডে নিয়ে উল্টা পাল্টা স্বীকারোক্তি নিবে। আমাকেও এজন্য রিমান্ডে নিতে চাই। ঘটনার দিন আমরা বাসার নিয়ে যাই। তখন শুনি এই ঘটনা। পরে চাঁদাবাজির ঘটনা শুনে আমি চলে আসি।

আপু বলেন, আমাদের লোকেশন ট্র্যাকিং করে দেখেন। আমরা কোথায় ছিলাম। আমাকে কেন রিমান্ডে নেওয়া হবে। রিমান্ডের কোনো যৌক্তিকতা নেই।

শুনানি শেষে আদালত আসামির ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে তাকে ফের পুলিশের পাহারায় হাজতখানায় নেওয়া হয়। এসময় তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্ন বলেন, আমি তো ২২ জুলাই থেকে কিশোরগঞ্জে। আমি ঘটনাস্থলেই ছিলাম না। সরেন তো আপনারা। আপনারা আবার উল্টা পাল্টা লিখবেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান রিমান্ড আবেদনে বলেন, আসামিরা সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ দলের সদস্য। তারা দেশে বিরাজমান পরিস্থিতিতে ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে এ মামলার বাদীসহ বিভিন্ন মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চাঁদা নেয়। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে তাদের এরকম কার্যকলাপ প্রচারিত হচ্ছে। এছাড়া ভুক্তভোগী আরও কিছু মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে চাঁদা দাবি করেছে মর্মে বিভিন্ন থানায় অভিযোগ আছে বলে জানা যায়। এ আসামিকে ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ডে এনে নিবিরভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মামলার মূল রহস্য উদঘাটনসহ ঘটনার সাথে জড়িত অপরাপর আসামিদের ও তাদের গডফাডারদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে। এছাড়াও বাদীর কাছ থেকে গত ১৭ জুলাই গ্রহণ করা চাঁদার টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হবে।

এমামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক (বহিষ্কৃত) আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ, সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব, মো. ইব্রাহিম হোসেনের ২৭ জুলাই সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ওইদিন আরেক শিশুকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এর আগের দিন ২৬ জুলাই শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর বাদী হয়ে গুলশান থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করেন।

মামলার বিবরণী থেকে জানা গেছে, ১৭ জুলাই সকাল ১০টায় আসামি আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ, কাজী গৌরব অপু গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপি শাম্মি আহম্মেদের বাসায় যান। তখন তারা হুমকি ধামকি দিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণাংকার দাবি করেন। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যায়িত করে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানোর হুমকি দেন এবং টাকা চেয়ে চাপ দিতে থাকেন তারা। একপর্যায়ে সিদ্দিক আবু জাফর বাধ্য হয়ে নিজের কাছে থাকা নগদ পাঁচ লাখ টাকা ও ভাইয়ের কাছে থেকে নিয়ে আরও পাঁচ লাখ টাকা প্রদান করেন।

এ ঘটনার পর গত ১৯ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে আসামি রিয়াদ ও অপু বাদীর বাসায় প্রবেশ করে তার ফ্ল্যাটের দরজায় স্বজোরে ধাক্কা মারেন। বিষয়টি গুলশান থানা পুলিশকে মোবাইল ফোনে অবহিত করলে আসামিরা চলে যায়। পরে ২৬ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টায় আসামি রিয়াদের নেতৃত্বে অপরাপর আসামিরা বাদীর বাসার সামনে এসে তাকে খুঁজতে থাকেন। বাসার দারোয়ান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাকে বিষয়টি জানান। তখন আসামিদের দাবি করা বাকি ৪০ লাখ টাকা না দিলে তাকে পুলিশে ধরিয়ে দিবেন বলে হুমকি দিতে থাকেন। পরে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করলে তাৎক্ষণিক গুলশান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পাঁচজনকে হাতেনাতে আটক করে এবং ওই সময় এজাহারনামীয় আসামি কাজী গৌরব অপু দৌড়ে পালিয়ে যান।

এমকে/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
তোমার বাবা কিংবা বলি তারকা কাউকেই ভয় পাই না, জাহ্নবী বিতর্কে উত্তর ধ্রুব রাঠির! Dec 28, 2025
img
মানবিক হলেই অনেক কিছু বদলে যেতে পারে: পিয়া জান্নাতুল Dec 28, 2025
img
জামায়াতের ৩ জানুয়ারির মহাসমাবেশ স্থগিত Dec 28, 2025
img
বন্ধুর মেয়ের জন্মদিনে উরুগুয়েতে মেসি Dec 28, 2025
img
বিভাগীয় শহরে রাত ৮টায় অবরোধ সমাপ্তের ঘোষণা ইনকিলাব মঞ্চের Dec 28, 2025
img
নিষিদ্ধ দলকে অর্থায়নের অভিযোগে ইতালিতে গ্রেপ্তার ৯ Dec 28, 2025
img
বিপিএলে পারফর্ম করে পাকিস্তানে পরিচিতি পেয়েছি: খাজা নাফে Dec 28, 2025
img

রুমিন ফারহানা

সবাই যেহেতু হাঁস চাচ্ছে, তাই আমারও আপত্তি নেই Dec 28, 2025
img
বিএনপিতে যোগ দেওয়া নিয়ে কী বললেন তাসনিম জারা? Dec 28, 2025
img

জকসু নির্বাচন

শিক্ষার্থীদের টাকা দেওয়ার অভিযোগ ছাত্রদলের বিরুদ্ধে Dec 28, 2025
img
'কারও সংবর্ধনায় শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দাঁড় করানো যাবে না' Dec 28, 2025
img
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন কবির আহমেদ ভুইয়া Dec 28, 2025
img

জাপা কো-চেয়ারম্যান মোস্তফা

‘কমপক্ষে ১০০ আসনে জয়ের লক্ষ্যে কাজ করছে জাতীয় পার্টি’ Dec 28, 2025
img
জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে এনসিপি Dec 28, 2025
img
ডিসেম্বরের প্রথম ২৭ দিনে প্রবাসী আয় ৩৩ হাজার কোটি টাকা Dec 28, 2025
img
সিলেট টাইটান্সে যোগ দিলেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই Dec 28, 2025
img
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, নিরাপত্তা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডসহ ৮ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি Dec 28, 2025
img
নুরের গণ অধিকার পরিষদে যোগ দিলেন মেঘনা আলম Dec 28, 2025
img
শহীদ ওসমান হাদির আসনে এনসিপির হয়ে লড়বেন কে? Dec 28, 2025
img
এবার ‘প্রলয়’ ঘটাবেন রণবীর-আলিয়া Dec 28, 2025