নিবন্ধনের অপেক্ষায় ২ বছর ধরে আটকে ১ হাজার নতুন ওষুধ

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে নিবন্ধনের অপেক্ষায় এক হাজার নতুন ওষুধ। দুই বছরের বেশি সময় ধরে আটকে থাকা এসব ওষুধ আগামী নভেম্বর মাসের আগে উচ্চ হারে রয়্যালটি দিতে হবে, এতে বাড়তে পারে ওষুধের দাম।

শনিবার (২ আগস্ট) দুপুরে বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের এক মতবিনিয়মসভায় খাত সংশ্লিষ্টরা এসব কথা বলেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন ডেল্টা ফার্মা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ঔষধ শিল্প সমিতির মহাসচিব ডা. মো. জাকির হোসেন, ঔষধ শিল্প সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ইউনিমেড ইউনিহেলথের চেয়ারম্যান এম মোসাদ্দেক হোসেন, রেনাটার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ কায়সার কবির, বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সিইও মেজর জে. (অব.) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সিইও মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান।

ডা. মো. জাকির হোসেন বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়শীল দেশের তালিকায় বাংলাদেশ প্রবেশ করবে ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর। তখন থেকে বাংলাদেশকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বাণিজ্যবিষয়ক মেধাস্বত্ব আইন (ট্রিপস) চুক্তি পুরোপুরি মেনে চলতে হবে এবং ওষুধ কম্পানিগুলোকে উচ্চ হারে রয়্যালটি দিতে হবে। কিংবা পেটেন্ট নিতে প্রচুর বিনিয়োগ করতে হবে, যা কঠিন ও ব্যয়বহুল।

সৈয়দ কায়সার কবির বলেন, স্বল্পোন্নত দেশে প্রবেশ শুধু ওষুধ শিল্পের জন্য খারাপ তা নয়, এটা গোটা বাংলাদেশের জন্য খারাপ হবে।

প্রথমত ট্রিপস সুবিধা বঞ্চিত হবে। দ্বিতীয় স্বল্প সুদে ঋণ পাবে না। তৃতীয় ওষুধের ওষুধে পেটেন্ট সুবিধা মিলবে না। তাই স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়শীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার দাবি ব্যবসায়ীদের।

সভায় খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, কম্বোডিয়া ও সেনেগালের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে তারা গ্রাজুয়েশনে গেলেও অনেক লু ফলের কারণে ট্রানজিশন দেরি করেছে। বাংলাদেশে সে বিষয়ে আগ্রহ নেই। আমাদের এখন দরকার প্রথমে গ্রাজুয়েশনটা ঠেকানো।

তারা বলছেন, আমরা বুঝতে পাচ্ছি, আমেরিকা ও চীন এই শক্তিটা আমাদের কাছে থাকুক। আমাদের এখন বেশি প্রয়োজন উন্নয়শীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়া।

যদি এই সরকার না করে তাহলে নির্বাচিত সরকার আসার পর যেন এটা করে।

আরো বলেন, গ্যাস সংকট ও জায়গা সংকটে দাঁড়াতে পারছে না এপিআই পার্ক। সরকার ২০০৭ সালে ওষুধের মূল কাঁচামাল অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) শিল্প তৈরির উদ্যোগ নেয়। এ লক্ষ্যে ২০০৮ সালে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বাউসিয়া এলাকায় ২০০ একর জমি বরাদ্দ দেয়। এর নাম দেওয়া হয় ‘এপিআই শিল্পপার্ক’।

পার্কের জমি ২৭টি ওষুধ কম্পানিকে ৪২টি প্লটে ভাগ করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কোনো কম্পানি একাধিক প্লট বরাদ্দ নেয়। কিন্তু গত দেড় দশকে মাত্র চারটি প্রতিষ্ঠান সেখানে কাজ শুরু করেছে।

এ বিষয়ে ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব জাকির হোসেন বলেন, কম্পানিগুলো ২০১৭ সালে প্লট বরাদ্দ পাওয়ার টেকনোলজি আদান-প্রদানে ভারত, চীনসহ বেশ কিছু দেশে যোগাযোগ করে। চীনারা প্লট দেখে জানায় আকার খুবই ছোট। এছাড়া এপিআই রিঅ্যাক্টর, স্টোরেজ ও সলভেন্সির জন্য যে ক্যাপাসিটি (সক্ষমতা) দরকার পার্কে সব ধরনের সুবিধা নেই। সবচেয়ে বড় সমস্যা গ্যাস সরবরাহ নেই।

ফলে অনেক কম্পানি যায়নি। যারা যাচ্ছে না তাদের প্লটগুলো একসঙ্গে করে কয়েকটি কম্পানি কাজ শুরুর চেষ্টা করছে। সরকার নীতিমাল সংশোধন করে দিয়েছে। এখন বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের যাওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। আশা করা যায় ২০২৬ সালের মধ্যে ১০ থেকে ১২টা কম্পানি ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।

জাতীয় পর্যায়ে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা প্রণয়ন ও জনগণের জন্য তা সহজলভ্য করতে করণীয় নির্ধারণে একটি উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

এমআর/টিকে      


Share this news on:

সর্বশেষ

img
‘শাপলা কলি’ নয়, ‘শাপলা’ই চায় এনসিপি Oct 30, 2025
img
১৬ নভেম্বর পোস্টাল ব্যালটে ভোটের অ্যাপ উদ্বোধন : ইসি সচিব Oct 30, 2025
img

জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা

বিজয়ী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা বিনিময় Oct 30, 2025
img
সন্তানকে মত প্রকাশের সুযোগ দিন : হাসনাত আব্দুল্লাহ Oct 30, 2025
img
মোজাম্মেল হকের আয়কর নথি জব্দের অনুমতি পেয়েছে দুদক। Oct 30, 2025
img
ডাকসু নেতাদের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ Oct 30, 2025
img
ঐক্য কমিশনের প্রতিবেদনে অনৈক্যের সুর : শামা ওবায়েদ Oct 30, 2025
img
বিশ্ববাজারে ফের বেড়েছে সোনার দাম Oct 30, 2025
img
কাবুলের সার্বভৌমত্ব-অখণ্ডতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভারত Oct 30, 2025
img
ফুটবলার নিবন্ধনে ফিফার নিষেধাজ্ঞা পেল মোহামেডান Oct 30, 2025
img
যারা ফেব্রুয়ারির নির্বাচন চায় না, তারা জনগণের বিরোধী শক্তি : এম এ মালিক Oct 30, 2025
img

নারী বিশ্বকাপ ২০২৫

ভারতের সাবেক ও বর্তমান অধিনায়কের রেকর্ড ভাঙলেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটার Oct 30, 2025
img
চসিক সিইও অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ, ১৫ দিনের আলটিমেটাম Oct 30, 2025
img
যারা পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়, তারা গণভোট চায় না : মাসুদ Oct 30, 2025
img
সহ-শিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বাড়াতে হবে : এ্যানি Oct 30, 2025
img
ঐকমত্যে ব‍্যর্থ হলে ভয়ানক পরিস্থিতির ঝুঁকি দেখছে এবি পার্টি Oct 30, 2025
img
সচিবালয়ে তিন স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে সরকার Oct 30, 2025
img
আজ রাতেই গণভোটের তারিখ ঘোষণা করুন : আব্দুল্লাহ তাহের Oct 30, 2025
img
অক্টোবরের ২৯ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এলো ২৪৩ কোটি ডলার Oct 30, 2025
img
ফুল দিয়ে ছবি তোলার জন্য সৌজন্য সাক্ষাৎ আমরা করি না: লুৎফে সিদ্দিকী Oct 30, 2025