ভারতে একটি সরকারি চিঠিতে বাংলাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলে উল্লেখ করায় তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। দিল্লির লোদী কলোনি থানার পুলিশ কর্মকর্তা অমিত দত্ত সম্প্রতি বঙ্গভবনের অফিসার-ইন-চার্জকে একটি চিঠি পাঠান। চিঠিতে বাংলাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস।
এ ঘটনাকে সরাসরি ভারতীয় সংবিধানের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘বাংলা শুধু ভাষা নয়, এটি আমাদের পরিচয়, সংস্কৃতি এবং অস্তিত্ব। বাংলাকে বিদেশি ভাষা বলা একটি গভীর চক্রান্ত, বাঙালিকে নিজেদের দেশেই বহিরাগত প্রমাণ করার চেষ্টা চলছে।’
তৃণমূল কংগ্রেস আরও অভিযোগ করে, এই চিঠি কোনো ‘ভুল’ নয়; বরং এটি একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক পদক্ষেপ। তাদের দাবি, বিজেপি বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে বিষ ছড়াচ্ছে এবং এখন দিল্লির পুলিশকে ব্যবহার করে এ চক্রান্তকে সরকারি স্বীকৃতি দেয়ার চেষ্টা করছে।
রোববার (৩ আগস্ট) তৃণমুল কংগ্রেসের এক্স অ্যাকাউন্টে ওই সরকারি চিঠি পোস্ট করে তার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। দলের তরফে বলা হয়েছে 'বিজেপি বাংলা বিদ্বেষের সব সীমা পার করে ফেলছে। বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোতে একের পর এক বাংলাভাষী শ্রমিকদের হেনস্থা ও গ্রেপ্তারের পর, এবার অমিত শাহের দিল্লির পুলিশ সব সীমা অতিক্রম করে আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে 'বাংলাদেশি ভাষা' বলে দাগিয়ে দিল।'
ইতোমধ্যেই এই ঘটনায় নিঃশর্ত ক্ষমা, অবিলম্বে সংশোধন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে তৃণমুল কংগ্রেস।
বিজেপি অবশ্য এ ঘটনায় কোনো ভুল মানতে নারাজ। রাজ্য সভাপতি শমিক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘বাংলাদেশি বাংলা ও পশ্চিমবঙ্গের বাংলা আলাদা। শুধু বাংলা বললেই কেউ ভারতীয় হয়ে যায় না। আমরা এটা মানি না যে ভাষা দেখে কারও নাগরিকত্ব নিশ্চিত হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নকল পরিচয়পত্র নিয়ে বহু বাংলাদেশি এখন সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়ছে। এটা রুখতেই এমন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
বিশ্বজুড়ে ২৫ কোটিরও বেশি মানুষ বাংলায় কথা বলেন। এটি ভারতের সংবিধান স্বীকৃত অন্যতম প্রাচীন ও মর্যাদাসম্পন্ন ভাষা। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এমন একটি ভাষাকে ‘বাংলাদেশি’ বলে অপমান করা হলে তা শুধু ভাষার নয়; বরং একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বের ওপরও আঘাত।
কেএন/টিএ