ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তির ফরমে অনুমতি ছাড়াই স্বামীর নামের জায়গায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারের নাম বসানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সাবেক নেত্রী নীলা ইস্রাফিল।
নীলা ইস্রাফিলের এমন অভিযোগের বিষয়ে এবার মুখ খুলেছেন সারোয়ার তুষার।
শনিবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক আইডিতে দেয়া এক পোস্টে সারোয়ার তুষার লেখেন, ‘নীলা ইস্রাফিল মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আমাদের অফিসে এসেছিলেন। আমরা পুলিশ ও মানবাধিকারকর্মী লেনিন ভাইকে ডেকে তাদের উপস্থিতিতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি।’
ইন্টার্ন ডাক্তাররাই ফরম পূরণ করেছেন দাবি করে এনসিপির এ নেতা বলেন, ‘ভর্তি ফরমে সে সময় কী লেখা হচ্ছে, সেটা খেয়াল করার সুযোগ ছিল না। এখন দেখা যাচ্ছে এটা সোশ্যাল মিডিয়ায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সার্কুলেট করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী নারীর ক্ষেত্রে স্বামী বা পিতার নাম বা যিনি রোগীকে নিয়ে এসেছেন, তার নাম দেয়া হয়। ওই ফরমে C/O (care of) লেখা ছিল, যেটি লাল দাগ দিয়ে ঢেকে তা বিকৃতভাবে প্রচার করা হচ্ছে যেন আমি নিজেই স্বামীর স্থানে নিজের নাম লিখেছি।’
বিস্ময় প্রকাশ করে তুষার লেখেন, ‘আমি কি পাগল? বাটপারির একটা সীমা থাকা দরকার!’
পরিশেষে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানিয়ে তিনি লেখেন, এসব প্রতারণা ও বাটপারি বন্ধ করতে হবে।
উল্লেখ্য, শনিবার (৯ আগস্ট) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তির ফরমে অনুমতি ছাড়াই স্বামীর নামের জায়গায় সারোয়ার তুষারের নাম বসানো হয়েছে বলে অভিযোগ নীলা ইস্রাফিল।
নীলা ইস্রাফিলের ভর্তি ফরম। সারোয়ার তুষারের ফেসবুক আইডি থেকে নেয়া।
পোস্টে নীলা লেখেন, ‘আমি নীলা ইস্রাফিল। ওই দিন আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম, সম্পূর্ণ অজ্ঞান অবস্থায়। আমার নিজের নাম, পরিচয়, জীবনের সিদ্ধান্ত সবকিছুর ওপর তখন আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। আর ঠিক সেই সুযোগেই সারোয়ার তুষার আমার স্বামীর নামের জায়গায় নিজের নাম বসিয়ে দিয়েছে। এটা কোনো “ভুল” নয়, এটা আইনগতভাবে জালিয়াতি।’
বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪৬৮ ও ৪৭১ ধারায় স্পষ্টভাবে বলা আছে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহারযোগ্য নথি মিথ্যা তথ্য দিয়ে তৈরি করা এবং তা ব্যবহার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ছাড়া বাংলাদেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে অনুমতি ছাড়া কারো ব্যক্তিগত তথ্য পরিবর্তন করাও অপরাধ।’
‘আমার অনুমতি ছাড়া আমার পারিবারিক পরিচয় বিকৃত করা মানে শুধু আমার সামাজিক সম্মানকে আঘাত করা নয় এটা আমার মানবাধিকার লঙ্ঘন। UDHR-এর (Universal Declaration of Human Rights) ধারা ৩, ৫, ১২ ও ২২ অনুযায়ী আমার ব্যক্তিগত মর্যাদা, গোপনীয়তা এবং আইনি নিরাপত্তার অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে। হাসপাতালের নথিতে এই ভুয়া তথ্য ভবিষ্যতে আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার হতে পারে, আমার সামাজিক ও আইনগত নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।’
‘আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং দাবি করছি, অবিলম্বে ঘটনার তদন্ত করা হোক। দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনের সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
নীলা আরও বলেন, ‘আমার প্রকৃত তথ্য পুনঃস্থাপন করা হোক এবং রোগীর অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়ে যারা এমন অপরাধ করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করা হোক এটা শুধু আমার লড়াই নয়, এটা প্রতিটি মানুষের নিজের পরিচয়, মর্যাদা এবং অধিকারের জন্য লড়াই।’
এফপি/টিএ