ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, অন্য ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাদের আক্রমণাত্মক বক্তব্যে নষ্ট হচ্ছে জুলাই ঐক্য। এ জায়গা থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। অন্যথায় ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগই এর বেশি সুবিধা নেবে। আমরা এখনও পর্যন্ত তিক্ততা তৈরি করে এমন কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি দিয়েছি এটা কেউ দেখাতে পারবে না। কিন্তু অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা ১০ মিনিট বক্তব্য রাখলে সেখানে ৯ মিনিট শিবিরকে নিয়ে কথা বলে।
রোববার (১০ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রামের একটি কমিউনিটি সেন্টারে শিবির চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর আয়োজিত এসএসসি ও দাখিলে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
জাহিদুল ইসলাম বলেন, পতিত ফ্যাসিস্টরা বসে নাই। সবাইতো হেলিকপ্টারে পালাতে পারেনি। বড় একটা অংশ দেশে এবং বড় একটা অংশ বাইরে আছে। তারা লুটপাটের অর্থ অরাজকতার কাজে ব্যবহার করছে।
গোপালগঞ্জে প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাসহ সাবেক এমপিরা বিনিয়োগ করে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আমাদের মধ্যে যত অনৈক্য তৈরি হবে তারা ততো সুযোগ নেবে।
তিনি বলেন, অন্য দলগুলোর কিছু নেতার উদাসীনতা, শিশু সুলভ আচরণ, অপরিপক্বতা, অভিজ্ঞতার ঘাটতি, রাজনীতিকে যেভাবে ধারণ করার কথা সেভাবে না করায় জুলাইয়ের পক্ষের শক্তির মধ্যে এসব অনৈক্য তৈরি করছে।
ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিনের এক বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার মনে হয় তিনি শিবিরের রাজনীতি দেখতে হলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হবে এটা উনি ভালো পরামর্শ দিয়েছেন। কেননা ছাত্র রাজনীতি করতে হলে আমাদের সারাদেশে ভ্রমণ করতে হয়। যত বেশি ভ্রমণ করা যাবে ততো বেশি শেখা যাবে, শিবির সম্পর্কে আরও বেশি জানা যাবে, ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। ছাত্রদলসহ অন্য সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার ও সৌহার্দ্যপূর্ণ।
শিবির সভাপতি বলেন, রাজনীতি নিয়ে শিক্ষার্থীরা ট্রমায় ভুগছেন। আমরা একটি ইন্টারনাল সার্ভে করেছি ঢাবিতে। সেখানে দেখা গেছে শতকরা ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী রাজনীতি চায় না। কেননা বিগত দিনে ছাত্রলীগ এই হল রাজনীতি করেই শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতন চালিয়েছে। বৈষম্য করেছে। টর্চার সেল বানিয়েছে। তাই আমরা শিক্ষার্থীদের এই মতামতকে সম্মান জানিয়ে বলতে চাই আমরা হল রাজনীতি করব না। আমরা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্যাম্পাস রাজনীতি করব।
তিনি বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে যেই বক্তব্য দিয়েছেনে সেটাতে আমরা অবাক হয়েছি, আশাহত হয়েছি। একজন ছাত্র নেতা ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতে দেবেন না। আমরা আশা করি নিরপেক্ষ, অবাধ, সুষ্ঠু ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন।
শিবির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, শিবির মাত্র ১০ শতাংশ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করে। বাকি ৯০ ভাগ কাজ অ্যাকাডেমিক। আমরা শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গাইডলাইন দিয়ে থাকি। সৎ, আদর্শ, দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরিতে আমরা কাজ করি। আজকে ৫ আগস্টের পর আমরা ভেবেছি সবাই ভালো হয়ে যাব। কিন্তু আসলে হইনি। এটার কারণ হলো সৎ নাগরিকের অভাব।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা এমন ব্যবসায়ী হইয়ো না যেই ব্যবসায়ী এস আলম হয়ে শতশত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে। দেশের সুনামধন্য ইসলামী ব্যাংক ধ্বংস করে। তোমরা হারুণের মতো পুলিশ অফিসার হইয়ো না, হাসিনার মতো প্রধানমন্ত্রী হইয়ো না, প্রশান্ত কুমারের মতো বিতর্কিত শিক্ষক হইয়ো। তোমরা মাহরীন চৌধুরির মতো শিক্ষক হও।
মহানগর উত্তর শিবিরের সভাপতি তানজীর হোসেন জুয়েলের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন, ইউরোপিয়ান কমিশনের এশিয়ান প্রতিনিধি আশিকুর রহমান, শিবিরের কেন্দ্রীয় মাদ্রাসা বিষয়ক সম্পাদক আলাউদ্দিন আবীর, মহানগর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির নজরুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ১ হাজার ২০০ এসএসসি ও দাখিল শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দেয় শিবির।
কেএন/এসএন