বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আইজাক নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রটিকে ভুল দাবি করেছেন বাংলাদেশের একজন বিজ্ঞান গবেষক ও যন্ত্রবিদ। একই সঙ্গে নিউটনের গতির তিনটি সূত্রের মধ্যে প্রথমটিকে অসম্পূর্ণ, দ্বিতীয়টিকে সঠিক এবং তৃতীয়টিকে কাল্পনিক বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি।
নিউটনের সূত্রকে ভুল দাবি করা ওই ব্যক্তির নাম আফসার আলী (৬৫)। তার বাড়ি পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার আজিজনগর গ্রামে।
তিনি পেশায় একজন যন্ত্রবিদ। একসময় কাজ করতেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনে। বর্তমানে তিনি পেশায় একজন যন্ত্রবিদ।
নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রে বলা হয়েছে, ‘এই মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণা একে অপরকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে এবং এই আকর্ষণ বলের মান বস্তু কণাদ্বয়ের ভরের গুণ ফলের সমানুপাতিক এবং এদের মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক এবং এই বল বস্তুদ্বয়ের কেন্দ্র সংযোজক সরলরেখা বরাবর ক্রিয়া করে।’
আফসার আলী দাবি করেন, ‘নিউটনের মহাকর্ষবিষয়ক সূত্রটি ভুল। শুধু তা-ই নয়, তার গতির ৩টি সূত্রের মধ্যে কেবল দ্বিতীয়টি পরিপূর্ণভাবে সঠিক। প্রথমটি সঠিক হলেও অসম্পূর্ণ। আর তৃতীয় সূত্রটি কাল্পনিক যুক্তি ছাড়া আর কিছুই নয়।’
খরচবিহীন ইঞ্জিন আবিষ্কার করতে গিয়ে নিউটনের সূত্রগুলোতে ভুল খুঁজে পেয়েছেন বলে জানান আফসার আলী। তিনি বলেন, ‘আমি বহুদিন ধরে চেষ্টা করছিলাম যেন তাপশক্তি ছাড়া, জ্বালানি ছাড়া বিনা খরচে ইঞ্জিন চালানো যায়। এক পর্যায়ে আমি এ বিষয়ে গবেষণা শুরু করি। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে যাই।’
আফসার আলী বলেন, ‘যেখানে বায়ুমণ্ডলের চাপ প্রতি বর্গ সেন্টিমিটারে ১০ নিউটন বা এক কেজি ওজনের সমান এবং অভিকর্ষ বল ক্রিয়াশীল; সেখানে জ্বালানি, বিদ্যুৎ বা অন্য কোনো শক্তি ছাড়া ইঞ্জিন চলবে, এটা কাল্পনিক।’
তিনি বলেন, ‘গবেষণার এক পর্যায়ে আমি মহাকর্ষ বল বিশেষত নিউটনের গতিসূত্র, বায়ুচাপ সমন্ধীয় বর্ণনা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। এক পর্যায়ে আমার নজরে বিজ্ঞানী নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রটি কাল্পনিক বলে ধরা পড়ে। আর নিউটনের গতির প্রথম সূত্র সঠিক, তবে অসম্পূর্ণ।’
তিনি বলেন, গতির প্রথম সূত্রে বলা হয়েছে, ‘বাহ্যিক বল প্রয়োগে বস্তুর অবস্থা পরিবর্তন করতে বাধ্য না করলে স্থির বস্তু স্থিরই থাকবে এবং গতিশীল বস্তু সমদ্রুতিতে সরলরৈখিক পথে (অর্থাৎ সমবেগে) চলতে থাকবে।’ এই সূত্রে বাহ্যিক বল প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু এই বাহ্যিক বল কোথায় থেকে আসবে বা কে প্রয়োগ করবে, তা ওই সূত্রে বলা নেই। এ জন্য আমি এটাকে অসম্পূর্ণ মনে করি।’
দুই নম্বর সূত্রে বলা হয়েছে, ‘বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার তার ওপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যেদিকে ক্রিয়া করে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনও সেদিকে ঘটে।’ তিনি বলেন, ‘এই সূত্রটি পূর্ণতা পেয়েছে এবং সঠিক।’
তৃতীয় সূত্রে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া আছে।’ আফসার আলী বলেন, ‘তিন নম্বর সূত্রটি যুক্তিমাত্র। প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি ঘর্ষণ, বাধা অথবা প্রতিক্রিয়া আছে। ঘর্ষণ, বাধা বা প্রতিক্রিয়া সমান হলে বস্তু স্থিতিবস্থা ফিরে পায়। এটি আমার ব্যাখ্যা।’
জানা যায়, ১৯৭৫ সালে এসএসসি পাস করেন আফসার আলী। ১৯৭৮ সালে ঠাকুরগাঁও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে দুই বছর মেয়াদি একটি কোর্স করেন। তিনি চাকরিতে যোগদান করেন ১৯৭৯ সালে। ১৯৮৯ সালে তিনি ইঞ্জিন চলাচলের সূত্র আবিষ্কার করেন। তিনি মনে করেন তার সূত্রগুলো সঠিক। যেগুলো তিনি প্রমাণ করতে পারবেন। আফসার আলী বিজ্ঞানের বেশ কিছু প্রবন্ধ ও বই লিখেছেন। তবে সেগুলো প্রকাশিত হয়নি। তিনি তার সূত্রগুলো প্রকাশ করা এবং তার দাবি মতো নিউটনের ভুলগুলো সংশোধনের আহ্বান জানিয়েছেন।
এফপি/ টিএ