শৈশবের গণ্ডি পেরিয়ে বার্সেলোনার সিনিয়র দলেও একসঙ্গে খেলা শুরু করেছিলেন দুই বন্ধু পাবলো গাভি ও ফারমিন লোপেজ। কিন্তু দুজনের প্রেমিকাদের মাঝে বিবাদ নাকি সেই সম্পর্কে চিড় ধরিয়েছে। এবার নতুন মোড় নিতে যাচ্ছে গাভি-ফারমিনের তিক্ত সম্পর্কের ঘটনায়। দুজন নাকি শারিরীক লড়াইয়েও জড়িয়েছেন। পরবর্তীতে বার্সেলোনা কর্তৃপক্ষের কাছে ফারমিনকে বেচে দেওয়ার দাবিতে হাজির হন গাভি!
এই দুই স্প্যানিশ ফুটবলারই কাতালানদের স্কোয়াডে দারুণ প্রতিভা। মিডফিল্ডে গাভি এবং আক্রমণভাগের খেলোয়াড় ফারমিন স্পেন জাতীয় দলেও জায়গা করে নেন একই সময়ে। স্প্যানিশ গণমাধ্যমের বরাতে গোলডটকম বলছে, বার্সার একাডেমি লা মাসিয়া থেকে গড়ে ওঠা বন্ধুত্ব এখন অতীত হতে চলেছে। ক্ষুব্ধ গাভি-ফারমিনের ঝগড়া গড়িয়েছে হাতাহাতি পর্যন্ত। এরপরই নাকি ফারমিনকে ট্রান্সফার লিস্টে রাখার দাবি জানান গাভি।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম স্পোর্ত এক প্রতিবেদনে বলছে, এক সময়ের ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক শেষ হতে যাচ্ছে, যা সম্ভবত পুরোনো পথে ফেরার সুযোগ নেই! দুজনের বিবাদমান সম্পর্কের জেরে বার্সেলোনা সভাপতি হুয়ান লাপোর্তার উপদেষ্টা আলেহান্দ্রো এচেভারিয়ার কাছে যান গাভি। ওই সময় তিনি ফারমিনকে দলবদলের তালিকায় রাখতে বলেন। যা ফারমিনের কানে পৌঁছাতে সময় লাগেনি এবং ইনস্টাগ্রামে নিজের একটি পোস্টের সূত্র ধরেই দুজনের সম্পর্ক এই মোড়ে এসেছে সেটিও শিকার করেন। এখন একমাত্র বার্সা কোচ হ্যান্সি ফ্লিকই গাভি-ফারমিনের এই বিবাদ মেটাতে পারবেন বলে উল্লেখ করেছে সংবাদমাধ্যমটি।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নিজেদের দুই তারকার মাঝে বিবাদ ক্লাবের অভ্যন্তরীণ আবহ–ও নষ্ট করছে। সেটি আরও খারাপ পরিস্থিতি থেকে বাঁচাতে পারেন বার্সেলোনার জার্মান টেকটেশিয়ান ফ্লিক। তিনি যদি গাভি-ফারমিনের সঙ্গে বসে কথা বলেন, সমস্যা সমাধানের পথ মিলতে পারে। এই দুজনই ফ্লিকের স্কোয়াডের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। গাভি আগেই মাঝমাঠে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন। ফারমিনও প্রতিভা কাজে লাগাচ্ছেন যথাযথভাবে, গোল করছেন চলমান প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতিতেও।
আরেক সংবাদমাধ্যম ‘কোপ হেলেনা কনডিস’ তাদের আলোচনায় বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ফারমিন দলবদলের বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে না থাকলেও, ক্লাব কর্মকর্তারা জানেন তিনি তাদের অল্প কয়েকজন খেলোয়াড়ের একজন যাকে বিক্রি করে মোটা অঙ্কের অর্থ আনা সম্ভব। গ্রীষ্মকালীন ট্রান্সফারে বড়সড় সাইনিংয়ের জন্য অর্থ জোগাড়ের চাপে থাকা বার্সার জন্য যদি ভালো প্রস্তাব আসে, তবে ফারমিনকে ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অন্যদিকে, দল ছাড়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন ফারমিন। কাতালানদের হয়ে তিনি নিজের জার্সির জন্য লড়াই অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন।
এর আগে দুই তরুণ ফুটবলারের বিবাদের বিষয়টি সামনে এনেছিল ইতালিয়ান ক্রীড়া দৈনিক কোরিয়েরে দেল্লো স্পোর্ট। তাদের মতে, ফারমিনের বান্ধবী বার্টা গ্যালার্দো ও গাভির প্রেমিকা আনা পেলায়োর বিবাদের বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রে। দুজনের মাঝে বাদানুবাদও হয়েছে সেখানে। এরই মাঝে গাভির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি নিয়ে আলোচনায় হাওয়া লাগে ফারমিনের একটি পোস্টে। নাটকীয়ভাবে কিছুক্ষণ বাদেই তিনি সেটি মুছে ফেলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বার্টা-আনা’র কথার লড়াই এবং তারই ফল হিসেবে গাভি-ফারমিনের বন্ধুত্বে তিক্ততা এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। যার অংশ হিসেবে সম্ভবত গাভির জন্মদিনে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠাননি ফারমিন।
ইনস্টাগ্রামে মুছে দেওয়া পোস্টে ফারমিন লেখেন, ‘খারাপ মানুষেরা কখনও জেতে না, যারা অন্য পথ অবলম্বন করে, তারাও নয় এবং যারা নিজেদের জীবনধারার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে এবং আদর্শের প্রতি কাপুরুষোচিত হয়। এটা শুধুই সময়ের ব্যাপার। তারা প্রতিদিনই হারে। কারণ, প্রতিদিন সকালে তারা যে ছদ্মবেশ ধারণ করে এবং দ্রুত হোক কিংবা দেরিতে বিশ্বের সামনে তাদের আসল চেহারাটা বেরিয়ে আসে।’ ওই বার্তায় কাকে উদ্দেশ্য করে কী বলতে চেয়েছেন তা স্পষ্ট না হলেও, অনেকের মতে এটি গাভির সঙ্গে সাম্প্রতিক ফাটল ধরা সম্পর্কের ইঙ্গিত।
এফপি/এসএন