তদন্ত সংস্থার কাছে আসিফ মাহমুদের বিস্ফোরক জবানবন্দি

ছাত্র-জনতার তোপের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পরপরই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সমন্বয়কারীদের যোগাযোগ চলছিল। পাশাপাশি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও মিটিং করা হয়—এমনটাই জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থাকে দেওয়া তার লিখিত জবানবন্দিতে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের নানান দূর্নীতিরি আরও অনেক বিস্ফোরক তথ্য তুরে ধরেছেন তিনি।

জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেখানোর কথা বলে সমন্বয়কদের থেকে জোরপূর্বক ভিডিও বার্তা নেওয়া হয়েছিল।
আজ মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ১৯ জুলাই রাতে গুম হওয়ার আশঙ্কায় গুলশান থেকে স্থান পরিবর্তনের চেষ্টা করছিলাম আমি। কিন্তু ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় আমাকে সেলুলার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে হয়েছিল এবং সেই নেটওয়ার্ক ট্র্যাক করে ডিজিএফআই আমাকে ধরে নিয়ে যায়। ওই রাতেই নাহিদ ভাইকেও গুম করা হয়।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘চোখ খুলে নিজেকে একটি অচেনা কক্ষে পাই। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের পতনের পর ক্যান্টনমেন্টে অবস্থিত ডিজিএফআইয়ের আয়নাঘর পরিদর্শনের সময় বুঝতে পারি, আমাকেও সেখানেই রাখা হয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক তাসনীম খলিলের ভাষ্যমতে, সেটি ছিল তথাকথিত ‘ভিআইপি’ সেল, যেখানে তুলনামূলক ভালো পরিবেশ থাকলেও, আমি ১৯ জুলাই শুক্রবার থেকে ২৪ জুলাই বুধবার পর্যন্ত গুম অবস্থায় ছিলাম। মুক্তির পর গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। যেখানে নাহিদ ভাইও চিকিৎসাধীন ছিলেন। সে সময় আমরা সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে ছিলাম।’

জবানবন্দিতে আরও বলেন, ‘ওইসময় সরকার কোটা আন্দোলনকারীদের দাবির অনুকূলে রায় ঘোষণা করে। ১৭ জুলাইয়ের পর থেকেই ডিজিএফআই, ইন্টারনাল এফআইএস ব্যুরো ও ডিএমপি-সিটিটিসির কয়েকজন কর্মকর্তা ‘সংলাপের’ চেষ্টা শুরু করে। কিন্তু এ আলোচনার আড়ালে চলতে থাকে নজরদারি, মোবাইল জব্দ ও আন্দোলন স্থগিতের চাপ।’

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘২৫ জুলাই ভিডিও বার্তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমাকে শারীরিকভাবে আঘাত করা হয়।’

লোমহর্ষক নির্যাতনের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২৬ জুলাই হাসপাতালে থেকে আমাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ডিবি কার্যালয়ে। যেখানে ৬ দিন আটক রেখে জোরপূর্বক ভিডিও স্টেটমেন্ট নেয়া হয়। রমনা জোনের ডিসি হুমায়ুন আমাদের পরিবার ও আন্দোলনকারীদের নামে মামলা দেওয়ার হুমকি দেন, আর ভিপি নূরকে সেখানেই মারধরের ঘটনা ঘটে।’

ডিবি কার্যালয়ে অনশন শুরু করলে খবর ছড়িয়ে পরে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আমাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন। অবশেষে ১ আগস্ট মুক্তি পাওয়ার পর আমরা আন্দোলনের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করি। ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ‘একদফা’ দাবির ঘোষণা দেই বলেও জানান যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা।

জবানবন্দিতে তিনি আন্দোলনের শুরুর দিককার কথাও তুলে ধরেন। কীভাবে তারা আন্দোলনে সমন্বয়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন। উপদেষ্টা বলেছেন, কীভাবে উত্তাল সেই দিনগুলোতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের অস্ত্রধারীদের সামনে সাহস নিয়ে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তারা। এছাড়া আওয়ামী লীগ র‍্যাবকে নিজেদের স্বার্থে সামরিকীকরণ করে ব্যবহার করত বলে দাবি করেন তিনি। সেই সঙ্গে র‍্যাবের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগও তোলেন আসিফ মাহমুদ।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

ম্যাচ হারায় অনেক কষ্ট পেয়েছি, শেষের গোলটা আশা করিনি Oct 10, 2025
'মাছ চাষ করলেও তোমার কিছু মাছ খাইতে পারবা'! Oct 10, 2025
img
খাট-সোফা ছাড়াই বিয়ে সেরেছিলেন অপু বিশ্বাস! Oct 10, 2025
“গাজীপুর থেকে এসেছেন জনসংযোগে যোগ দিতে - হাদির আবেগঘন প্রতিক্রিয়া” Oct 10, 2025
img
আবারও মডেল মাহিকার প্রেমে হার্দিক Oct 10, 2025
img
পিআর নিয়ে জাতির রায় আমরা গ্রহণ করব: গোলাম পরওয়ার Oct 10, 2025
img
৩৩০ গুণ বেতন পেয়ে চাকরি ছাড়েন কর্মী, আদালত দিলো তার পক্ষেই রায় Oct 10, 2025
img

ট্রাম্পের দাবি

ইরানের সঙ্গে এবার কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র Oct 10, 2025
img
দেশের অধিকাংশ মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়: মিয়া গোলাম পরওয়ার Oct 10, 2025
img
৪৯তম বিশেষ বিসিএস: লিখিতে উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা ২৬ অক্টোবর Oct 10, 2025
img
শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পাওয়া হল না ট্রাম্পের Oct 10, 2025
img
মানসিক রোগে আক্রান্ত দেশের ১৯%, চিকিৎসা সেবা সংকটে Oct 10, 2025
img

নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ

২ পরিবর্তন নিয়ে টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ Oct 10, 2025
img
স্পেনকে ন্যাটো থেকে বের করে দেওয়া উচিত: ট্রাম্প Oct 10, 2025
img
অভিশংসনে ক্ষমতা হারালেন পেরুর প্রেসিডেন্ট Oct 10, 2025
img
শান্তিতে নোবেল পেলেন ভেনিজুয়েলার মারিয়া কোরিনা মাচাদো Oct 10, 2025
img
চার দফা দাবিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করছে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন Oct 10, 2025
রেকর্ড দুই দলের ব্যাটারদের, ধরাশায়ী ভারত Oct 10, 2025
আরাফাত রহমান কোকোর স্মরণে কর্পোরেট ক্রিকেট টুর্নামেন্ট! Oct 10, 2025
অতীত ভুলে সামনের দিকে এগোতে চাহালের স্পষ্ট বা Oct 10, 2025