ছয় বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো বৈঠক করতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের সবচেয়ে বড় শহরে তাদের বহুল প্রতীক্ষিত এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে।
আর ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যকার এই আলোচনা ব্যর্থ হলে ভারতের ওপর আরও শুল্ক চাপাবে যুক্তরাষ্ট্র। এমন হুঁশিয়ারিই দিয়েছেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট। তিনি বলেছেন, (ট্রাম্প ও পুতিনের) আলোচনার ফল ভালো না হলে ভারতের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বা শুল্ক আরও বেড়ে যেতে পারে।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আসন্ন শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হলে ভারতকে লক্ষ্য করে অতিরিক্ত সেকেন্ডারি শুল্ক আরোপ করা হতে পারে বলে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
গত বুধবার ব্লুমবার্গ টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বেসেন্ট বলেন, “রুশ তেল কেনার কারণে আমরা ইতোমধ্যেই ভারতের ওপর সেকেন্ডারি শুল্ক আরোপ করেছি। যদি আলোচনার ফল ভালো না হয়, তাহলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বা শুল্ক আরও বাড়তে পারে।”
এর আগে চলতি মাসের শুরুতে ট্রাম্প রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র কেনার জন্য ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, যা বিদ্যমান ২৫ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে যোগ হয়েছে। এতে করে ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে।
যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে। বুধবার ট্রাম্প সতর্ক করে বলেন, মস্কো শান্তিচুক্তিতে রাজি না হলে “গুরুতর পরিণতি” ভোগ করতে হবে। শুক্রবার আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন ট্রাম্প, সেখানে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান নিয়ে আলোচনা হবে।
বেসেন্ট বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করছেন, আর ইউরোপীয়রা বাইরে থেকে বলে যাচ্ছে, কীভাবে ও কী করা উচিত। ইউরোপীয়দের উচিত এই নিষেধাজ্ঞায় আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়া এবং সেকেন্ডারি শুল্ক আরোপে প্রস্তুত থাকা।”
বিবিসি বলছে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর সস্তা রুশ অপরিশোধিত তেল আমদানি ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে ভারত, যা দিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়িয়েছে এবং চলমান বাণিজ্য আলোচনাও ব্যাহত করেছে। ২০২১ সালে যেখানে ভারতের তেল আমদানিতে রুশ তেলের অংশ ছিল মাত্র ৩ শতাংশ, ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে।
দিল্লি যুক্তি দিয়েছে, জ্বালানি আমদানিকারক দেশ হিসেবে দরিদ্র জনগণকে বাড়তি ব্যয় থেকে রক্ষা করতে তাদের সবচেয়ে সস্তা তেল কেনা ছাড়া বিকল্প নেই।
এর আগে গত মঙ্গলবার ফক্স বিজনেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেসেন্ট ভারতের বাণিজ্য আলোচনায় আচরণকে “কিছুটা অনমনীয়” বলে উল্লেখ করেন।
ট্রাম্পের দাবি, তার শুল্কনীতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি চাঙা করা এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যে ন্যায্যতা আনার পরিকল্পনার অংশ। তিনি বহুবার ভারতকে “শুল্ক অপব্যবহারকারী” বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে তিনি আগ্রহী।
বিবিসি বলছে, দিল্লি-ওয়াশিংটনের মধ্যে কয়েক মাস ধরে বাণিজ্য আলোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা দিল্লিতে পৌঁছানোর পর আগামী ২৫ আগস্ট নতুন করে আলোচনায় বসবে দুই পক্ষ। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষি ও দুগ্ধপণ্যের ওপর শুল্ক কমাতে ভারতের অনীহা এই আলোচনায় বড় বাধা।
এদিকে ট্রাম্প ঘোষিত ভারতের ওপর নতুন ৫০ শতাংশ শুল্ক আগামী ২৭ আগস্ট কার্যকর হবে, যা অনেক বিশেষজ্ঞের মতে দুই দেশের বাণিজ্যে কার্যত নিষেধাজ্ঞার সমান। এ শুল্কভার ভারতকে এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি করযুক্ত বাণিজ্য অংশীদারে পরিণত করবে।
এর ফলে ভারতের টেক্সটাইল ও গয়নাসহ রপ্তানিমুখী শিল্পে বড় ধাক্কা দেবে এবং ভারতের প্রবৃদ্ধি অর্ধ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে।
এসএন