ধূমপান কীভাবে ছাড়বেন

সবাই জানেন, ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সিগারেটের প্যাকেটের গায়েও বেশ বড় বড় করে লেখা থাকে ‘ধূমপান ফুসফুস ক্যানসারের কারণ’। তারপরও ধূমপায়ীরা এই সিগারেটের নেশাটা ছাড়তে পারেন না। ধূমপান ছাড়তে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ব্যক্তিও ‘আজকেই শেষ’, ‘এটাই শেষ’ বলতে বলতে সিগারেট খেতেই থাকেন।

গবেষকদের মতে, তীব্র মানুষিক ইচ্ছা এবং জীবনযাপনের কিছুটা পরিবর্তন আপনাকে ধূমপান ত্যাগ করতে সাহায্য করবে। সেজন্য ধূমপান ছাড়তে মনস্থির করতে হবে। মনস্থির করতে পারা ধূমপান ছাড়ার যুদ্ধে অর্ধেক জিতে যাওয়া। যদিও এটি খুব সহজ কোনো ব্যাপার নয়। কিন্তু আপনি যদি শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যান, তাহলে অবশ্যই তা করা সম্ভব।

আপনি হয়ত জানেন- ধূমপান ছাড়ার অনেকগুলি পথ আছে। তাহলে আপনি কোন পথে হাঁটবেন? সেই পথ আপনার জন্য শ্রেষ্ঠ, যেটাতে আপনি শেষ পর্যন্ত লেগে থাকতে পারবেন। এমন কোনো পদ্ধতি পছন্দ করুন, যা আপনার জন্য উপযুক্ত।

হঠাৎ করে বন্ধ করে দেয়া
যারা ধূমপান ছাড়ার কথা ভাবেন তাদের প্রায় ৯০ শতাংশই কোনো কিছুর সাহায্য ছাড়াই হঠাৎ করে ধূমপান ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। কোনো রকম ওষুধ বা থেরাপির সাহায্য গ্রহণ করেন না। যদিও বেশির ভাগ মানুষ এভাবেই ধূমপান ছাড়তে চেষ্টা করেন। তবুও এটি খুব সফল কোনো পদ্ধতি নয়। মাত্র ৫% থেকে ৭% লোক এভাবে নিজে থেকে ধূমপান ছাড়তে সক্ষম হয়েছেন।

ব্যবহারিক থেরাপি
এই পদ্ধতিতে কাউন্সিলরের সঙ্গে ধূমপান ত্যাগের পরামর্শ করে পথ খুঁজে বের করা হয়। কাউন্সিলর আপনার ট্রিগার (যা ধূমপান করতে উদ্বুদ্ধ করে) খুঁজে বের করতে এবং সেগুলো প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবেন।

নিকোটিন রি-প্লেসমেন্ট থেরাপি
নিকোটিন রি-প্লেসমেন্ট থেরাপি বলতে সিগারেটের বদলে অন্য কোনো উপায়ে নিকোটিন গ্রহণ করে আস্তে আস্তে কমিয়ে আনাকে বোঝায়। নিকোটিন প্যাচ, গাম, লজেন্স প্রভৃতি অনেক উপায়ে তামাক ছাড়াও নিকোটিন গ্রহণ করা যায়। আপনি হয়ত এই পদ্ধতিটি পছন্দ করবেন। এটি ব্যবহারিক থেরাপির মধ্যে সব থেকে বেশি কাজ করে। এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, আপনি নিকোটিনের আসক্তি ছাড়তে চাইছেন। শুধু তামাক ছাড়া আপনার উদ্দেশ্য নয়। অনেকে কিন্তু এসব নিকোটিন গাম বা লজেন্সেও আসক্ত হয়ে পড়েন।

ওষুধ
ধূমপান ছাড়ার জন্যে বাজারে অনেক ওষুধ রয়েছে। ডাক্তারের পরামর্শে আপনি সঠিক ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন।

যৌথ পদ্ধতি
একাধিক পদ্ধতি গ্রহণে ধূমপানের আসক্তি থেকে বেড়িয়ে আসার সম্ভাবনা বেশি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শুধু নিকোটিন প্যাচ ব্যবহারের থেকে প্যাচ ও গাম এক সঙ্গে ব্যবহার করতে পারেন। আবার ব্যবহারিক থেরাপির সঙ্গে ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন।

এবার আসুন জেনে নিই কীভাবে ধূমপান ছাড়ার পথে অটল থাকবেন?

নিজের ট্রিগার সম্পর্কে জানুন এবং সেগুলো এড়িয়ে চলুন
সেসব জিনিস, ঘটনা, পরিস্থিতি বা অনুভূতির কথা লিখে রাখুন; যেগুলো আপনার সিগারেট খাওয়ার আগ্রহ বাড়িয়ে তোলে। ভাবতে চেষ্টা করুন কীভাবে আপনি পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে পারেন। সেসব ব্যক্তি, স্থান বা অভ্যাস ত্যাগ করুণ; যেগুলি আপনাকে ধূমপান করতে আগ্রহী করে তোলে। অন্ততপক্ষে প্রথম তিন মাস এই অভ্যাস মেনে চলুন। কারণ প্রথম তিন মাসের মধ্যেই আপনি আবার ধূমপান শুরু করতে পারেন।

মনে রাখবেন প্রথম কিছুদিন সব থেকে কঠিন
প্রথম কয়েকদিন আপনি খুব বিরক্তি অনুভব করবেন, মানসিক অবসাদে ভুগতে পারেন, ধীর ও ক্লান্ত অনুভব করবেন, বিশেষ করে আপনি যদি হঠাৎ করেই ধূমপান ছাড়তে চান। কোনো বন্ধু বা ধূমপান ত্যাগী দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে তুলুন। প্রথম কিছুদিন বাদে আপনি অনেক বেশি স্বাভাবিক হয়ে উঠবেন, যদিও সিগারেটের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা তখনও অনুভব করবেন।

আকাঙ্ক্ষা কাছে পরাজিত হবেন না
যতবার আপনি তীব্র আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করতে পারবেন, ততবার আপনার ধূমপান ত্যাগের সম্ভাবনা জোড়াল হবে। অভ্যাস পরিবর্তন করুন. হাতে সিগারেটের পরিবর্তে অন্য কিছু ধরুন, চুয়িংগাম চিবাতে পারেন অথবা ফোনে গেম খেলতে পারেন।

অধূমপায়ী বন্ধুদের সঙ্গে নতুন শখ গড়ে তুলুন
এমন কিছু করুন যা আপনাকে ব্যস্ত রাখে আর আপনার মানসিক অবসাদ দূর করে।

নিজেকে পুরস্কৃত করুন
আপনি যা করছেন তা সহজ কোনো ব্যাপার নয়। যখন আপনি একটি লক্ষ্য অর্জন করবেন তখন নিজেকে এমন কিছু দিয়ে পুরস্কৃত করুন, যা আপনি মন থেকে চাইছেন অথবা পছন্দ করেন। তথ্যসূত্র: ওয়েবএমডি

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
শিগগিরই পর্দায় আসছে ‘বজরঙ্গী ভাইজান ২’ Jul 16, 2025
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১০ লাখ নেতাকর্মীর সমাগমের প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী Jul 16, 2025
ভোগান্তির অবসান, মালয়েশিয়ায় এখন থেকে মাল্টিপল ভিসা পাবেন বাংলাদেশিরা Jul 16, 2025
img
গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনা, ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী Jul 16, 2025
img
‘রামায়ণ’ দেখে কৌশল পাল্টাল ‘গড অব ওয়ার’ নির্মাতারা Jul 16, 2025
img
গোপালগঞ্জকে সঙ্গে নিয়েই নতুন বাংলাদেশ গড়বো: তাসনিম জারা Jul 16, 2025
img
গোপালগঞ্জে আ.লীগ-নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ৭ নেতাকর্মীকে আটক করেছে সেনাবাহিনী Jul 16, 2025
img
নিজ বাড়ি থেকে তারকা দম্পতির মরদেহ উদ্ধার Jul 16, 2025
img
বিশ্ব বাজারে বেড়েছে ডলারের মান ও ট্রেজারি বন্ডের সুদহার Jul 16, 2025
img
কিছু কিছু ম্যাচ সারা জীবন মনে থাকে: মোহাম্মদ সিরাজ Jul 16, 2025
img
ঘুষ দিতে গিয়ে মালয়েশিয়ায় এয়ারপোর্টে দুই বাংলাদেশি আটক Jul 16, 2025
img
‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়তে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার Jul 16, 2025
img
অভিনেতা রবি তেজার বাবা আর নেই Jul 16, 2025
img
ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে রেখে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় : বিআরটিএ চেয়ারম্যান Jul 16, 2025
img
বিসিবি এবার টাইগারদের জন্য নিয়োগ দিল ‘পাওয়ার হিটিং’-এর জনক Jul 16, 2025
img
লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে ক্রিকেটের সময়সূচি ঘোষণা Jul 16, 2025
img
ওমান সাগরে ২০ লাখ লিটার তেলসহ ট্যাংকার জব্দ করলো ইরান Jul 16, 2025
img
ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি ও দাম কমাতে কাজ করছে সরকার: ফয়েজ আহমদ Jul 16, 2025
img
বিমানবন্দরের মারাত্মক ভুলে করাচির যাত্রী পৌঁছে গেলেন সৌদি Jul 16, 2025
img
কন্যাসন্তান পেয়ে জীবন বদলে গেল: সিদ্ধার্থ Jul 16, 2025