খুব বেশি ভাবছেন না তো?

কোনো বিষয়ে খুব বেশি চিন্তা-ভাবনা আমাদের মনের সুখ-শান্তি বিনষ্ট করে। একই সঙ্গে এই অতিরিক্ত ভাবনার দুষ্টচক্র আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটায়। মাথায় বারবার ঘুরতে থাকা ভাবনা আপনাকে কর্মক্ষেত্রেও করে তোলে অমনোযোগী ।

যখন আপনি খুব বেশি ভাবতে শুরু করেন, তখন আপনার ‘বিবেচনা ক্ষমতা’ আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে এবং এর ফলশ্রুতিতে আপনি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকেন কিংবা নেতিবাচক সিদ্ধান্তের দিকে অগ্রসর হন।

অতিরিক্ত ভাবনার ফলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটা, ঝিমুনি, দ্রুত হৃদ স্পন্দন, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, ক্লান্তি, মাথা ব্যথা, পেশীতে ব্যথা, মনোযোগে সমস্যা, ঘাম, ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস প্রভৃতি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। তথ্যসূত্র: ওয়েবএমডি.কম।

দীর্ঘ মেয়াদে এই অতিরিক্ত ভাবনার আবর্তন চলতে থাকলে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও এটি হার্ট অ্যাটাক, হজমে সমস্যা, স্মৃতি বিভ্রম, চুল পড়া, করোনারি রোগ, পেশীতে খিঁচুনি প্রভৃতি দীর্ঘ মেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যার সম্ভাবনাকে বহু মাত্রায় বাড়িয়ে দেয়।

তাই সুস্থ ও স্বাভাবিক বাঁচতে চাইলে অবশ্যই এই ‘অতি ভাবনার মায়াজাল’ ছিন্ন করে বেড়িয়ে আসতে হবে।

চলুন জেনে নিই ভাবনার দুষ্টচক্রের আবর্তন থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায়-

সচেতনতাই পরিবর্তনের শুরু
কীভাবে অতি ভাবনা বন্ধ করবেন? সেক্ষেত্রে আপনার প্রথম পদক্ষেপ হবে- যখন আপনি খুব বেশি ভাবছেন তখন সেটাকে চিহ্নিত করা। তারপর মনে মনে বলতে হবে- আমি এখন খুব বেশি ভাবছি, এই ভাবনার কোনো ফল নেই। লম্বা শ্বাস নিন, প্রয়োজনে এক গ্লাস পানি পান করুন, মাথা ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করুন, পুরো ঘটনাটি আরও একবার ভাবুন।

সাইকোলজি টুডেতে সাইকোথেরাপিস্ট অমি মোরিন এ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন, আপনাকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে এসব অতিরিক্ত চিন্তা-ভাবনার কোনো ইতিবাচক দিক নেই। আপনি যখন আপনার এই অতি চিন্তার বিষয়টি আগে থেকেই ধরে ফেলতে পারবেন, তখন এটি আস্তে আস্তে কমে যাবে।

অন্য কারো মতামত নিন
আপনি একা একাই জীবনের সব জটিল বিষয় নিয়ে ভেবে চলেছেন। তবে কাছের কোনো বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তা শেয়ার করা বা কারো মতামত নেয়ার মধ্য দিয়ে আপনি অন্য একটি দৃষ্টি ভঙ্গি পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে অন্যকে আপনার অতি ভাবনার বিষয়টি বলে তা সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাইতে পারেন। আপনি যদি আপনার দুশ্চিন্তার গভীর কারণ অনুসন্ধান করতে চান তাহলে থেরাপির কথাও বিবেচনা করতে পারেন।

ইতিবাচক থাকুন
বেশির ভাগ সময় মানুষ খুব বেশি ভাবতে শুরু করে। কারণ তারা ভয় পেয়ে যায়, তারা সম্ভাব্য সব কিছুর নেতিবাচক ফলাফল নিয়ে ভাবতে থাকে। এর বদলে আপনার জীবনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সবকিছুর ফলাফল নিয়েই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলুন। জন হপকিনস মেডিসিন জার্নাল অনুযায়ী, এই পদ্ধতিকে বলা হয় ‘রিফেমিং’। এটি আপনাকে স্বাভাবিক করে তুলতে সক্ষম।

সুতরাং কীভাবে অতি ভাবনা বন্ধ করবেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়, বরং কীভাবে ভাবনাগুলিকে ইতিবাচক গঠনে বদলে দেবেন সেই প্রশ্নের উত্তর আপনাকে খুঁজতে হবে।

মনোযোগ ঘুরিয়ে দিন
যখন আপনি খুব বেশি ভাবনার কবলে পড়ে যাবেন, তখন চট করে আপনার অবস্থান পরিবর্তন করে নিন। এছাড়াও তখন আপনি অন্যকোনো কাজে যেমন শরীরচর্চা, গান গাওয়া, নাচ করা বা বই পড়া প্রভৃতি দিকে আপনার মনোযোগ ঘুরিয়ে দিন। আপনি যত বেশি এই বাজে চিন্তাগুলি দূর করতে চাইবেন, সেগুলি ততবেশি ভেসে উঠবে। তাই সহজ সমাধান হলো অন্য কোনো ইতিবাচক কর্মকাণ্ডে নিজের সময়ের বিনিয়োগ করা।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার করুন
জীবনে নতুন কিছুর পেছনে ছুটতে গিয়ে ইতিমধ্যে যা পেয়েছি, এর মধ্যে যা কিছু ইতিবাচক তার মর্মার্থ উপলব্ধি করতে ভুলে গেছি। ফলে না পাওয়া কিছু বা নেতিবাচক কিছুর জন্য আমাদের মনে উদ্বেগ-দুশ্চিন্তা হয় ঠিকই কিন্তু ভালো কিছু আমরা পাই না। তাই প্রতিদিন জীবনের ইতিবাচক দিকগুলি নিয়ে আমাদের কৃতজ্ঞতা অনুভব করা উচিৎ। ফলে মন ইতিবাচক হয়ে ওঠে, হতাশা কমে যায় এবং দুশ্চিন্তা দূর হয়।

পার্ফেক্টশনিস্ট হতে চাইবেন না
কখনোই সব কিছু পরিকল্পনা মাফিক হয় না এবং এই বিষয়টি আমাদের সবাইকেই মেনে নিতে হবে। তাই সবকিছু পার্ফেক্ট হতে হবে এমন ভাবনা পরিত্যাগ করুন। পার্ফেক্ট হওয়ার থেকেও ক্রমাগত উন্নতি সাধনের মাঝে আনন্দ খুঁজে নেয়া গুরুত্বপূর্ণ।

মেডিটেশন
ইতিবাচক কিছুর আশায় নিয়মিত মেডিটেশন করলে আমাদের নেতিবাচক ভাবনাগুলো দূর হয়ে যায়। ফলে উদ্বেগ দূর হয়, কর্মোদ্দীপনা বেড়ে যায় এবং মেডিটেশন আমাদেরকে নিজের মনের উপর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণে সাহায্য করে।

নিজেকে মেনে নিতে শিখুন
দুশ্চিন্তার গোঁড়া অনেক সময় নিজের নেতিবাচক চিন্তার মধ্যে লুকিয়ে থাকে। আবার অনেক সময় অতি আত্মবিশ্বাসও হতে পারে বেশি ভাবনার কারণ। ‘আমি তুচ্ছ আমার দ্বারা কিছু হয় না’ বা ‘আমি সব থেকে সেরা তাই আমাকে সবার থেকে ভালো করতে হবে’, এসব চিন্তা থেকে আমাদেরকে বেড়িয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে নিজের সক্ষমতা ও অক্ষমতাকে ইতিবাচকভাবে স্বীকার করে নিতে হবে। তথ্যসূত্র: ইংক.কম , বেস্টহেলথম্যাগ.সিএ।

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
এই নির্বাচনে বিএনপি একা হয়ে পড়েছে : ডা. তাহের Dec 29, 2025
img
বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ময়মনসিংহ-৬ আসনে জামায়াত নেতা বহিষ্কার Dec 29, 2025
img
তাসনিম জারার রহস্যময় পোস্ট Dec 29, 2025
img
জকসু নিয়ে ন্যারেটিভের জরিপ, শীর্ষ তিন পদে এগিয়ে ছাত্রশিবির Dec 29, 2025
ট্রাম্পের শান্তির প্রচেষ্টা বিশ্বজুড়ে প্রশংসা পাচ্ছে: পুতিনের বিশেষ দূত Dec 29, 2025
কমিটমেন্টের চেয়ে ৫গুন বেশি কাজ করবে বর্তমান ডাকসু প্রতিনিধিরা :ডাকসু ভিপি Dec 29, 2025
img
ঝালকাঠি-১ আসনে এনসিপির চূড়ান্ত প্রার্থী ডা. মাহমুদা মিতু Dec 29, 2025
img
মনোনয়নপত্র জমা দিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলন Dec 29, 2025
img

নাহিদ ইসলাম

যেখানে জোটের প্রার্থী থাকবে আমরা তার পক্ষে কাজ করব Dec 29, 2025
img
সুপারস্টার হয়েও শেষ জীবনে নিঃসঙ্গ ছিলেন রাজেশ খান্না Dec 29, 2025
img
মঙ্গলবার ‘স্যালুটিং আওয়ার কালচারাল হিরো’ কর্মসূচি ঘোষণা ইনকিলাব মঞ্চের Dec 29, 2025
img
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন জোনায়েদ সাকি Dec 29, 2025
img
৯০ হাজার ভক্তের গান প্রকাশের পর অভিনয় ছাড়া নিয়ে মুখ খুললেন বিজয় Dec 29, 2025
img
আমি বিজয়ী হলে তারেক রহমান বিজয়ী হবেন : রাশেদ খান Dec 29, 2025
img
মঞ্চে এপির ‘ঘনিষ্ঠ’ মুহূর্ত ভাইরাল নিয়ে মুখ খুললেন তারা-বীর Dec 29, 2025
img
এই গল্প আপনার মনকে উষ্ণ রাখবে : মেহজাবীন Dec 29, 2025
img
৩০০ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল ২৫৮২টি Dec 29, 2025
img
ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন ৪০ হাজারের বেশি অভিবাসী Dec 29, 2025
img
অবশেষে দেশের বাজারে কমল স্বর্ণের দাম Dec 29, 2025
img
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন ও শিক্ষার্থীদের মতামত Dec 29, 2025