নির্বাচনের জন্য এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি : রেজাউল করীম

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মানুষের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করেনি। তারা কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের ফসল। এ সরকারের ঘোষণা ছিল সংস্কার, দৃশ্যমান বিচার ও তারপরে জাতীয় নির্বাচন। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন এখন পর্যন্ত সেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি।

বুধবার (২০ আগস্ট) বিকেলে ফেনী শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, এখনো সংস্কার ও দৃশ্যমান বিচার হয়নি। এ অবস্থায় আপনারা যেনতেন নির্বাচন করলে- যে হাজার হাজার মায়ের কোল খালি হয়েছে, হাজারো মানুষ পঙ্গু হয়েছে, চক্ষু হারিয়েছে তাদের কি জবাব দেবেন? জবাব ঠিক করে নির্বাচনের তারিখ দেবেন।

রেজাউল করীম বলেন, সুজনের জরিপ অনুযায়ী ৭১ শতাংশ মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চান। প্রতিটি ভোটারের সেখানে মূল্যায়ন হয়। পিআর পদ্ধতিতে এককভাবে ফ্যাসিস্ট চরিত্রের সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ নেই। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধির সংসদে যাওয়ার সুযোগ থাকে। তখন এলাকাভিত্তিক যে গুন্ডা, দখলবাজ ও চাঁদাবাজ তৈরি হয় তা বন্ধ হবে।

এজন্য পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, মৌলিক সংস্কার ও দৃশ্যমান বিচারের পরই জাতীয় নির্বাচনের চিন্তা করবেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কখনো অশুভ চক্রের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হয়নি উল্লেখ করে দলটির আমির বলেন, বর্তমানে এক শ্রেণির রাজনৈতিক দল আমাদের ব্যাপারে নানা কটূক্তিমূলক, বিরক্তিকর ও অযৌক্তিকভাবে গালাগাল ও ঘৃণা করছে। আমি সেই ভাইদের বলব ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ রাজনীতি করে মানবতা, দেশ ও কল্যাণের জন্য। শুধু কয়েকজন এমপি বা কিছু সম্পদ-সম্মানের জন্য রাজনীতি করে না। তার বাস্তবতা হল ৮৭ সাল থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত বহু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমাদের একজন এমপিও সংসদে যায়নি।

খুনি, চাঁদাবাজ, মিথ্যাবাদী, জুলুমবাজ ও টাকা পাচারকারী যে অশুভ চক্র রয়েছে তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কখনোই ব্যবহৃত হয়নি।

সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, যারা দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করেন তাদের উদ্দেশ্যে বলব, ৫ আগস্টের পরে দেশ গড়ার যে ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে এই সুযোগ গত ৫৩ বছরে আর আসেনি। এই সুযোগ যদি আমরা সদ্ব্যবহার করতে না পারি তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যখন ইতিহাস পড়বে তখন আমাদের ধিক্কার জানাবে, ঘৃণা করবে। সুযোগের পরেও কাজে লাগাতে না পারলে তারা তখন আমাদের নিয়ে আফসোস করবে।

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনাদের পরিচালনায় এ দেশের হাজার হাজার মায়ের কোল সন্তানহারা হয়েছে, ২৪ লাখ কোটি টাকার উপরে বিদেশে পাচার হয়েছে, আইয়্যামে জাহিলিয়াতের সেই সময়কে হার মানিয়ে মানুষকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আয়না ঘরের মতো তাণ্ডব পরিচালনা করেছেন। দেশের স্বার্থের চেয়ে অন্য দেশের স্বার্থকে আপনারা অগ্রাধিকার দিয়েছেন। ২৪ এর ৫ আগস্ট আল্লাহর মেহেরবানি ও ছাত্র-জনতা যখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ন্যায়ের পক্ষে নিজের জীবন বিলীন করে আওয়াজ তুলেছিল তখনই ফ্যাসিস্ট, খুনি ও এই টাকা পাচারকারীরা দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছে।

চরমোনাই পীর আরও বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে যখন কোনো রাজনৈতিক দল ব্যানার নিয়ে রাস্তায় নামতে পারেনি, তখনও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অন্যায়ের প্রতিবাদে, খুনিদের বিরুদ্ধে ও দেশ গঠনের জন্য রাস্তায় নেমেছিল। আজ সেই বাংলাদেশে কিছু ক্ষমতালোভী আমাদের গুলির ভয়, মাস্তানি ও গুণ্ডামির তাণ্ডব দেখিয়ে আওয়াজ বন্ধ করতে চান। আমরা যেনতেন নির্বাচনের মাধ্যমে এ দেশকে আর বিদেশের তাঁবেদার রাষ্ট্র বানাতে চাই না৷ এ পরিবর্তন আমাদেরই করতে হবে। খুশির খবর হলো আজ দেশপ্রেমিক ও ইসলামপ্রেমিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আর এ ঐক্যবদ্ধ শক্তি ক্ষমতাপ্রেমিকদের বাংলার জমিন থেকে উৎখাত করে বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করবে।

পরে ফেনীর তিনটি আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ফেনী জেলা সভাপতি মাওলানা গাজী এনামুল হক ভূঞার সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা একরামুল হক ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় গণসমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন— ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা নুরুল করীম আকরাম, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, জান্নাতুল ইসলাম, ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রকৌশলী আতিকুর রহমান মুজাহিদ, জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মুফতি আবদুল হান্নান, হেফাজতে ইসলামের জেলা সেক্রেটারি মাওলানা ওমর ফারুক প্রমুখ।

এ সময় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও সহযোগী সংগঠনের জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

এফপি/ টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
গাজায় সংঘর্ষ চলাকালে প্রাণ গেল ফিলিস্তিনি সাংবাদিকের Oct 13, 2025
img
আজ থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বাস চলবে Oct 13, 2025
img
আজ ১৩ অক্টোবরে ইতিহাসের আলোচিত যত ঘটনা Oct 13, 2025
img
শিক্ষকদের ওপর পুলিশি হামলায় ছাত্রশিবিরের নিন্দা Oct 13, 2025
img
জেনে নিন, দেশে কত দামে স্বর্ণ ও রুপা বিক্রি হচ্ছে আজ? Oct 13, 2025
img
আজ থেকে শুরু আন্দোলনরত শিক্ষকদের কর্মবিরতি Oct 13, 2025
img
কুষ্টিয়ায় টুঙ্গীপাড়া এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনে আগুন Oct 13, 2025
img
গাজায় হামাসের সঙ্গে একটি গোত্রের সংঘর্ষে নিহত ২৭ Oct 13, 2025
img

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর

সব জিম্মি ইসরায়েলে পৌঁছলে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি Oct 13, 2025
img

শেখ হাসিনার মামলায় যুক্তিতর্কে চিফ প্রসিকিউটর

গুমে অভিযুক্তদের চাকরিতে বহাল রাখা নিয়ে বিতর্ক Oct 13, 2025
img
চুয়াডাঙ্গায় অ্যালকোহল পানে প্রাণ হারাল ৬ Oct 13, 2025
img
কামিন্স ছিটকে গেলে অ্যাশেজে সুবিধা পাবে ইংল্যান্ড: ব্রুক Oct 13, 2025
img
আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে জরিমানার মুখে ক্যারিবীয়ান পেসার Oct 13, 2025
img
আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদকে আইকনিক হিসেবে গড়ে তোলা হবে : ধর্ম উপদেষ্টা Oct 13, 2025
img
বিশ্বনাথে ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার Oct 13, 2025
img
রাতে ঘুমানোর আগে এই ১টি কাজ করলেই দূর হবে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা! Oct 13, 2025
img
মোরেলগঞ্জে সাড়ে ১৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার Oct 13, 2025
img
ট্রুডোর সঙ্গে প্রমোদতরীতে ঘনিষ্ঠ কেটি পেরি Oct 13, 2025
img
খুলনায় লটারির মাধ্যমে ১৫ জন এসি ল্যান্ডের পদায়ন Oct 13, 2025
img
ট্রাম্পের আমলে মার্কিন শেয়ারবাজারে এক ঐতিহাসিক ধস Oct 13, 2025