স্বৈরাচারের মতো বিএনপি ঠেকাও প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে : তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘আশ্চর্যের বিষয়, স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে এবার সরকার নয়, বরং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রাজপথের সহযোদ্ধা, কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তি, গোষ্ঠীর আচরণও পলাতক স্বৈরাচার সরকারের মতো। বিএনপির বিজয় ঠেকাও। যারা এই চিন্তা করছেন তাদের বলতে চাই, রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবেলা করুন। জনগণের শক্তির ওপরে আস্থা এবং বিশ্বাস রাখুন।

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি)-এর মিলনায়তনে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় ও আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। এতে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা খেয়াল করছি আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে কোনো কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বক্তব্য, মন্তব্য বা নিত্যনতুন শর্ত সামগ্রিকভাবে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে, জনগণ বিএনপিকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিতে পারে। এই ভয়ে পলাতক স্বৈরাচার বিএনপির বিজয়ের ঠেকাওয়ের মতো অন্তর্ঘাতী অপরাজনীতি চালু করেছিল।

দেশের নির্বাচনব্যবস্থাকেও গত ১৬-১৭ বছরে ধ্বংস করে দিয়েছিল। সেটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় নির্বাচন; প্রায় প্রতিটি জায়গায় একই অবস্থা হয়েছিল।

বিএনপির বিজয় ঠেকানোর অপরাজনীতি করতে গিয়ে বিতাড়িত ফ্যাসিবাদী সরকার, দেশকে একটি তাঁবেদারি রাষ্ট্রের বিশাল বড় জেলখানায় পরিণত করেছিল। বর্তমানে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে নির্বাচন দিলে জনগণ ভোট দিয়ে বিএনপিকে সরকার গঠনে সহায়তা করবে। যারা এই চিন্তা থেকে বিএনপির বিজয় ঠেকানোর জন্য নানা রকম অপকৌশল বা শর্তের বেড়াজালের আশ্রয় নিচ্ছেন, তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবেলা করুন। বিএনপির বিজয় যদি জনগণ দেয়ই, সেই বিজয় ঠেকাতে গিয়ে জনগণের রায় প্রদানের পথ রুদ্ধ করবেন না।’

তিনি বলেন, ‘গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের জনগণ কংশরূপী এক ফ্যাসিস্টের দুঃশাসন, অত্যাচার, নির্যাতন দেখেছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে কংশরূপী ফ্যাসিস্টের কবল থেকে এই দেশ এবং দেশের গণতান্ত্রিকামী মানুষ মুক্ত হয়েছে। স্বৈরাচারের পতনের পর দেশে এখন গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার যাত্রা শুরু হয়েছে। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ সংসদ এবং সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত, গণতন্ত্র উত্তরণের যাত্রাপথ কিন্তু ঝুঁকিমুক্ত নয়।’

পিআর পদ্ধতির সমালোচনা করে তারেক রহমান বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশেই নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি রয়েছে। তবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন এখনো উপযোগী নয়। কাকে বা কোন ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে নিজেদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করে সংসদে পাঠানো হচ্ছে, জনগণের সেটি জানার অধিকার রয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবিত পিআর পদ্ধতিতে কোন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করা হচ্ছে, জনগণের সেটি জানার কোনো সুযোগ নেই। যে কারণে রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি, সংসদে বা সরকারের প্রতিনিধিত্ব করতে চাইলে অবশ্যই তাদের জনগণের মুখোমুখি হয়ে আস্থা অর্জন জরুরি।

পিআর পদ্ধতি এবং আরো দু-একটি ইস্যুতে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছুটা ভিন্ন মত রয়েছে। প্রতিটি ইস্যুই সময়ের সাথে সাথে সুন্দরভাবে সমাধান করা যাবে বলে বিশ্বাস করি। যারা আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপচেষ্টা করছেন, এর মাধ্যমে আপনারা হয়তো নিজেদের অজান্তেই গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করে তুলছেন। একই সঙ্গে পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার পুনর্বাসনের পথও হয়তো-বা সুগম হচ্ছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সহযোদ্ধাদের প্রতি বিনীত আহ্বান, নিজেদের মধ্যকার বিরোধ এমন পর্যায়ে নেওয়া উচিত হবে না, যেটাকে পুঁজি করে পরাজিত ফ্যাসিবাদ নিজেদের অপকর্মগুলোকে জাস্টিফাই করার সুযোগ নিতে পারে। প্রতিটি ইস্যুতে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য হতেই হবে, এটি জরুরি নয়। তবে অবশ্যই পলাতক স্বৈরাচারের পুনর্বাসন ঠেকানো, দেশকে তাঁবেদারমুক্ত রাখা, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলোতে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকা জরুরি।’

উপস্থিত সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা অতীতে দেখেছি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর, তাদের ধর্মীয় স্থাপনা, বাসাবাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনাগুলোর দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া, অধিকাংশ হামলার ঘটনা কোনো ধর্মীয় কারণে হয়নি। বরং অধিকাংশ হামলার ঘটনার নেপথ্য ছিল অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা অবৈধ লোভ-লাভের আশা। যে কারণেই হোক না কেন, কারো ওপর কোনো হামলা কিংবা অবিচার যেন না হয় তা নিশ্চিতের দায়িত্ব রাষ্ট্র ও সরকারের। বিএনপি বিশ্বাস করে, দল-মত, ধর্ম-দর্শন যার যার, রাষ্ট্র সবার। ধর্ম যার যার, কিন্তু নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার।’

এমকে/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নিষেধাজ্ঞা চলাকালে ইলিশ বিক্রির সময় ২ মণ ইলিশ জব্দ Oct 13, 2025
img
নতুন পরিচয়ে আসছেন অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ Oct 13, 2025
img
মসজিদ ও স্কুলের কাছে সিগারেটের দোকান নিষিদ্ধ করল সৌদি আরব Oct 13, 2025
img
ইসির নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, বরখাস্ত অফিস সহকারী Oct 13, 2025
img
বিপিএলে ভালো মানের বিদেশি ক্রিকেটার পাওয়া নিয়ে মন্তব্য করলেন ফারুক Oct 13, 2025
img
প্রথম দিনেই টাইফয়েডের টিকা নিল ১০ লাখ শিশু Oct 13, 2025
img
ফিনল্যান্ডকে হারিয়ে শীর্ষে নিজেদের জায়গা পোক্ত করল ডাচরা Oct 13, 2025
img

জামায়াত আমিরের সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য জার্মানির সহায়তা কামনা Oct 13, 2025
img
স্যান্টনার ও রবীন্দ্রকে ফিরিয়ে ইংল্যান্ড সিরিজের জন্য দল ঘোষণা নিউজিল্যান্ডের Oct 13, 2025
img
আর্জেন্টিনা বনাম স্পেন : ফিনালিসিমার ভেন্যু ও তারিখ চূড়ান্ত ! Oct 13, 2025
img
গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটেছে: ট্রাম্প Oct 13, 2025
img
ট্রাম্পের নেতৃত্বে বিশ্বনেতাদের শান্তি সম্মেলনে থাকছে না মূল ২ পক্ষ Oct 13, 2025
img
বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার Oct 13, 2025
img

চাকসু নির্বাচন

চলছে শেষ মুহূর্তের প্রচারণা Oct 13, 2025
img
নতুন রেকর্ড গড়লেন লিওনেল মেসি Oct 13, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্র চীনকে সাহায্য করতে চায়, ক্ষতি নয়: ট্রাম্প Oct 13, 2025
img
আজ আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস Oct 13, 2025
img
তরুণ কৃষি-উদ্যোক্তাদের জন্য সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার Oct 13, 2025
img
গাজায় ২০ মিলিয়ন পাউন্ড সহায়তা ঘোষণা করবে যুক্তরাজ্য! Oct 13, 2025
img
মোদি প্রসঙ্গে বিক্রান্তকে নিয়ে ব্যঙ্গ-রসিকতা সামাজিক মাধ্যমে Oct 13, 2025