গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, আউটসোর্সিং কর্মচারীরা মূলত সরকারি প্রতিষ্ঠানেই কাজ করে, পাশাপাশি কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও তাদের উপস্থিতি রয়েছে। কিন্তু তাদের সংগঠিত হওয়ার সুযোগ নেই, ফলে দাবি–দাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত থেকে যাচ্ছে।
শনিবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান আনিস এবং সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল হক নুর।
জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের আউটসোর্সিং কর্মচারীদের দুর্দশাই প্রমাণ করে দেশে নিম্নবিত্ত, শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষের জীবনযাত্রার মান কতটা শোচনীয়। তারা যদি রাস্তায় নামেন, মিডিয়া তখন উপস্থিত হয়, আবার কেউ কেউ দুর্ভোগের কথা বলে। কিন্তু সভায় এসে তাদের যে বাস্তব সমস্যার কথা বলা হয়, তা খুব বেশি গুরুত্ব পায় না। সরকারের কাছে এসব তুলে ধরা প্রয়োজন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, দেশের গণমাধ্যমে ইতিবাচক খবর বা শ্রমজীবী মানুষের প্রকৃত সমস্যার চিত্র বড় খবর হয়ে ওঠে না। জুলাই অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন শত শত মানুষ। শ্রমজীবী তরুণরা এতে মূল শক্তি হিসেবে ছিলেন। ফলে পরিবর্তনের পর স্বাভাবিকভাবেই তারা নিজেদের জীবনের সমস্যার সমাধান প্রত্যাশা করেছেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, আউটসোর্সিং কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে গিয়ে নিজেদের দাবি তুলে ধরলে প্রথমেই তা ন্যায্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কিন্তু পরে সেই দাবি আর বাস্তবায়িত হয়নি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রথমে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও দিন যায়, মাস যায়—কিন্তু দাবিগুলো মানা হয় না।
আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের দাবিগুলো হলো :
১. ঠিকাদার প্রথা বাতিল করে স্ব-স্ব মন্ত্রণালয়, দপ্তর, অধিদপ্তর ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে সরাসরি নিয়োগ প্রধান করতে হবে এবং আউটসোর্সিং/দৈনিক ভিত্তিক ও প্রকল্পে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বয়স শিথিল করে আত্মীকরণ করতে হবে। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানকে নীতিমালার মধ্যে আনতে হবে।
২. বার্ষিক ৫ শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধি করতে হবে। চাকরিচ্যুত কর্মচারীদের তালিকা অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানে চিঠি প্রেরণ করে চাকরি বহাল করতে হবে। বেতন বকেয়া কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করার জন্য স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানে মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি প্রেরণ করতে হবে। বেতন বকেয়া পরিশোধ কেন করা হয়নি তা জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
৩. সর্বনিম্ন বেতন ২৫ হাজার টাকা ধার্য করতে হবে। মাসিক বেতন প্রদানে অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে স্টার চিহ্ন প্রথা বাতিল করতে হবে। প্রকল্প কর্মরতদের ক্ষেত্রে প্রকল্প মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নিয়োজিত কর্মচারীদের প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ করতে হবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির নিশ্চয়তা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।
৪. স্ব-স্ব মন্ত্রণালয়ের অধীনে কর্মরত কর্মচারীদের মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া বিনা কারণে চাকরিচ্যুত করা যাবে না এবং ঠিকাদার বাতিল হওয়ার পর যারা কর্মরত আছেন ও চাকরিচ্যুতদের সহ মন্ত্রণালয়, দপ্তর, অধিদপ্তর ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান প্রদানের মাধ্যমে ন্যস্ত থাকার জন্য পরিপত্র জারি করতে হবে।
৫. চাকরির বয়সসীমা ৬০ বৎসর পর্যন্ত নিশ্চিত করতে হবে এবং ঠিকাদার অগ্রিম চেক নিয়ে কম যে প্রক্রিয়া সেটা বন্ধ করতে হবে ও কর্মচারীদের কর্মস্থল নিরাপদ নিশ্চিত এবং বৈষম্য দূর করতে হবে, নতুন টেন্ডার নোটিশ ইস্যু করলে তার মধ্যে পুরাতন কর্মচারীদের বহাল রাখার কথা উল্লেখ থাকতে হবে ও প্রকল্প মেয়াদ শেষ হলে পুরাতন কর্মচারীকে নতুন প্রকল্পে নিয়োগ দিতে হবে।
ইউটি/টিএ