সরকারি দপ্তর, পরিদপ্তর, অধিদপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং বিভিন্ন কর্পোরেশনের চাকরিতে সরকার কোটা পদ্ধতি পরিবর্তন করেছে। সেজন্য অপেক্ষমাণ তালিকা সংরক্ষণ সংক্রান্ত আগের পরিপত্র সংশোধন করে নতুন সিদ্ধান্ত দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
সোমবার (২৫ আগস্ট) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, সব সিনিয়র সচিবকে এ বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, সরকারি দপ্তর/পরিদপ্তর/অধিদপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং বিভিন্ন কর্পোরেশনের চাকরিতে যেহেতু কোটা পদ্ধতি পরিবর্তন করেছে, সেহেতু অপেক্ষমাণ তালিকা সংরক্ষণ সংক্রান্ত ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিলের পরিপত্র সংশোধন করে সব গ্রেডের পদে সরাসরি জনবল নিয়োগে অপেক্ষমাণ তালিকা সংরক্ষণে নিচের পদ্ধতি অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
(ক) নিয়োগ কমিটি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মেধা তালিকা এবং বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করে শূন্য পদে প্রার্থী সুপারিশের পাশাপাশি সুপারিশকৃত প্রতিটি পদের বিপরীতে ১:২ অনুপাতে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্য থেকে অপেক্ষমাণ তালিকা তৈরি করে কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষরে সিলগালা করা খামে গোপনীয়তার সঙ্গে সংরক্ষণ করবে।
অপেক্ষমাণ তালিকা প্রণয়নের সময় ডিপিসি শূন্য পদে নিয়োগে যে ধরনের কোটায় সুপারিশ করবে, সেই কোটার যোগ্য প্রার্থীদের মধ্য থেকে প্রতিটি সুপারিশ করা প্রার্থীর বিপরীতে ১:২ অনুপাতে অপেক্ষমাণ তালিকা প্রণয়ন করবে। তবে অপেক্ষমাণ তালিকা প্রণয়ন করার সময়ে কোনো কোটার অধীন সংশ্লিষ্ট কোটার যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা কোটা থেকে মেধাক্রমের ভিত্তিতে অপেক্ষমাণ তালিকা প্রণয়ন করতে হবে।
(খ) অপেক্ষমাণ তালিকা সংরক্ষণের মেয়াদ হবে বিবেচ্য বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে প্রথম নিয়োগের সুপারিশ দেওয়ার তারিখ থেকে এক বছর বা শূন্য পদ পূরণের জন্য পরবর্তী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ যেটি আগে ঘটে।
(গ) নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা প্রার্থীদের মধ্যে কেউ চাকরিতে যোগদান না করলে বা চাকরিতে যোগদানের পর চাকরি থেকে ইস্তফা প্রদান করলে শূন্য পদ পূরণের প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট ডিপিসির সভায় অপেক্ষমাণ তালিকা এবং উত্তীর্ণ প্রার্থীদের রেজাল্ট শিট উপস্থাপনপূর্বক শূন্য পদে নিয়োগের জন্য প্রার্থী সুপারিশ করতে হবে। পাশাপাশি কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে সুপারিশ করা প্রার্থীকে তার নিয়োগের বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে অবহিত করতে হবে।
(ঘ) ডিপিসি থেকে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে সুপারিশ করা প্রার্থীদের রোল নম্বরের তালিকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নোটিশ বোর্ড ও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে এবং ডিপিসির সদস্য-সচিব কর্তৃক প্রার্থীকে তাৎক্ষণিক মোবাইল ফোন কল, এসএমএস, ই-মেইল (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)-এর মাধ্যমে অবহিত করতে হবে।
(ঙ) সুপারিশ করা প্রার্থীকে মোবাইল ফোন কল, এসএমএস, ই-মেইল (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)-এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিক অবহিত করার পাশাপাশি তার স্থায়ী ঠিকানায় রেজিস্ট্রি পত্র যোগে কমপক্ষে ১০ (দশ) কার্যদিবস সময় দিয়ে নিয়োগপত্র দিতে হবে।
(চ) অপেক্ষমাণ তালিকা থেককে সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের জ্যেষ্ঠতা প্রথম নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থীদের পরে নির্ধারিত হবে। ডিপিসি অপেক্ষমাণ তালিকার কোনো প্রার্থীকে চাকরিতে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করলে তার জ্যেষ্ঠতা তার ওই পদে যোগদানের তারিখ থেকে নির্ধারিত হবে।
অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে দুই বা ততোধিক প্রার্থী যদি একই দিনে একই পদে যোগদান করেন সেক্ষেত্রে তাদের পারস্পরিক জ্যেষ্ঠতা পূর্বে প্রস্তুতকৃত রেজাল্টের মেধাক্রম অনুসারে নির্ধারিত হবে। তবে একই নম্বর প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বয়সের ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করা হবে এবং বয়স একই হলে নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জনের শিক্ষাবর্ষের ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করা হবে।
# অনুচ্ছেদ ১(ক) এ যা কিছু উল্লেখ থাকুক না কেন কোটা সংক্রান্ত ২৩ জুলাই ২০২৪ এর প্রজ্ঞাপন জারির পর এ প্রজ্ঞাপনের আলোকে যেসব নিয়োগের জন্য ডিপিসি থেকে সুপারিশ করা হয়েছে কিন্তু অপেক্ষমাণ তালিকা প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি সেসব ক্ষেত্রে বিবেচ্য পরিপত্র জারির পর ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ডিপিসি কর্তৃক অপেক্ষমাণ তালিকা তৈরি করতে হবে।
পরে এ বিজ্ঞপ্তির পদ শূন্য হলে অনুচ্ছেদ ১(গ), ১(ঘ) ও ১(ঙ) অনুসরণ করে কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রস্তুত করা অপেক্ষমাণ তালিকার মেয়াদ হবে অপেক্ষমাণ তালিকা তৈরির তারিখ থেকে এক বছর অথবা পরবর্তী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ যেটি আগে ঘটে।
চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) এর বিজ্ঞপ্তির অধীনে সুপারিশ করা ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে এ পরিপত্র প্রযোজ্য হবে না।
এতে বলা, যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে অপেক্ষমাণ তালিকা প্রস্তুত করা হবে, ডিপিসি থেকে সেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বাইরে অন্য কোনো বিজ্ঞাপনের শূন্য পদ বা অন্য কোনোভাবে পদ শূন্য হলে ওই শূন্য পদ পূরণের জন্য অপেক্ষমাণ তালিকার কোনো প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা যাবে না।
চিঠিতে আরও বলা হয়, এ সরকারি সিদ্ধান্ত সব মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও এর অধীন সরকারি দপ্তর/পরিদপ্তর/অধিদপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, কর্তৃপক্ষ এবং বিভিন্ন কর্পোরেশনের সব পর্যায়ের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে অবগত করতে অনুরোধ করা হলো।
এমকে/এসএন