‘মাই টিভি’ দখলের যোগসাজশে তৌহিদ আফ্রিদি ও তার বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে: দাবি নুরের

‘জনকণ্ঠের’ মত ‘মাই টিভি’ দখলে কিছু ব্যক্তি সুপরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে মাইটিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দীন সাথী ও তার ছেলে তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করিয়েছে বলে দাবি করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।

সোমবার (২৫ আগস্ট) দিবাগত রাত ১টা ৬ মিনিটে নিজের ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ দাবি করেন।

স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘জনকণ্ঠ’ দখলের ন্যায় ‘মাই টিভি’ দখলেও সুপরিকল্পিতভাবে কিছু ব্যক্তি পরস্পর যোগসাজশে মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দীন সাথী ও তার ছেলে তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করিয়েছে। এতোদিন তারা নগদ ৫ কোটি কিংবা শেয়ার লিখে নেয়ার দেনদরবার করেছে, সমঝোতায় মিলেনি, তাই ডিজিটাল ও ফিজিক্যাল মবের মাধ্যমে প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তৌহিদ আফ্রিদি ও তার বাবাকে গ্রেপ্তার করিয়েছে।

তিনি প্রশ্ন তুলেন, আচ্ছা, এই যে তৌহিদ আফ্রিদি ও তার বাবাকে যাত্রাবাড়ী থানার ‘ছাত্র হ*ত্যা’ মামলায় আসামি করে ১ বছর পর গ্রেপ্তার করানো হয়েছে। মামলার বাদী কি জানে এই মামলায় কাকে কাকে আসামি করা হয়েছে? তৌহিদ আফ্রিদি কিংবা তার বাবা ‘ছাত্র হ*ত্যা’ করেছে এই মামলা প্রমাণ করতে পারবে? তাহলে কেন এই নাটক?

আফ্রিদি যদি লীগের হয়ে কিছু করে থাকে সেজন্য তাকে সুনির্দিষ্টভাবে সেসব অভিযোগে মামলা দেয়া যেত বলে উল্লেখ করে নুর প্রশ্ন করেন, সে ধরনের মামলা না করে কেন তাকে ও তার বাবাকে যাত্রাবাড়ীর ‘ছাত্র হত্যার’ মামলায় ভিত্তিহীনভাবে আসামি করে এক বছর পর গ্রেপ্তার করানো হলো? এই যে হঠাৎ বিপ্লবের চেতনায় দখলদার হয়ে ওঠা ‘ফিজিক্যাল ও ডিজিটাল মব’ সৃষ্টিকারী দুর্বৃত্তদের চাপে প্রশাসন মাঝে মাঝে কিছু বিবেচনাহীন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এর প্রভাব কি প্রশাসন বা আমরা উপলব্ধি করতে পারতেছি?

ডাকসুর সাবেক ভিপি নুর বলেন, স্বাভাবিকভাবেই সরাসরি রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত না থাকার ফলে এ দু’জনের গ্রেপ্তার দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনসহ অনেকক্ষেত্রে রেফারেন্স হবে যে, এভাবে যারা ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট নয়, গণমাধ্যমের মালিক/ব্যবসায়ী/সেলিব্রিটিরাও মবের শিকার হচ্ছে। তাদেরকেও ঢালাওভাবে আসামি করে প্রশাসন অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার হয়রানি, মামলা বাণিজ্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। ফলে প্রকৃত অপরাধীদেরও বেলাতেও রেফারেন্স হিসেবে দেশী-বিদেশী মানবাধিকার সংগঠন ও অন্যান্য সংস্থা এগুলোকে উদাহরণ হিসেবে তাদের রিপোর্টে তুলে ধরবে (এ বিষয়টি হয়তো সাধারণ মানুষ অনেকেই বুঝবে না,তাদের জন্য বলা; মাঝে মাঝে নিশ্চয়ই দেখেছেন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ পশ্চিমা দেশসমূহ লীগ আমলে বাংলাদেশে বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন নিয়ে রিপোর্ট দিতো) ব্যবহার করবে।

তিনি মনে করেন, এসব ইস্যুতে সরকারের ওপর দেশি-বিদেশি চাপ বাড়বে, ফলে স্বাভাবিকভাবেই দেখা যাবে দেশি-বিদেশি চাপে অনেকক্ষেত্রে সরকার/আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ গ্রহণে পিছপা হতে বাধ্য হবে। কার্যত এসব ভুল পদক্ষেপ প্রকারান্তে ফ্যাসিবাদের ফেরারই রাস্তা তৈরিতেই সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

সবশেষে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুর বলেন, ‘জনকণ্ঠ’ দখলের ন্যায় ‘মাই টিভি’ দখলেও যারা প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এগুলো করাচ্ছে তাদের মুখোস উন্মোচন করে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হোক।

প্রসঙ্গত, জুলাই আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার আসাদুল হক বাবু হত্যা মামলায় গত ২৪ আগস্ট রাতে বরিশাল থেকে কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পরে গতকাল সোমবার বিকেলে তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেন মো. আসাদুল হক বাবু। দুপুর আড়াইটার দিকে আসামিদের ছোঁড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন আসাদুল। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় গত বছরের ৩০ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা জয়নাল আবেদীন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় আসামির তালিকায় নাসির উদ্দীন সাথী ও তৌহিদ আফ্রিদির নামও রয়েছে। মামলায় নাসির উদ্দীন ২২ নম্বর এবং তার ছেলে তৌহিদ আফ্রিদি ১১ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি।

টিকে/

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Aug 26, 2025
img
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরও ৪৭০ জন Aug 26, 2025
img
ডাকসু নির্বাচন : চূড়ান্ত প্রার্থী ৪৭১, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৩৮ জনের Aug 26, 2025
img
বিশ্বসেরা ১০০ পরিবেশবান্ধব কারখানার ৬৮টিই বাংলাদেশের: বিজিএমইএ Aug 26, 2025
img
তিন ওয়ার্ড ঢাকা-২ আসনের সঙ্গে রাখার দাবি এলাকাবাসীর Aug 26, 2025
img
চলতি বছরেই কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠক করতে চান ট্রাম্প Aug 26, 2025
img
নেসকো ঘেরাও করে বিক্ষোভে রুয়েটের শিক্ষার্থীরা Aug 26, 2025
img
হিজাবের ছবিতে কটূ মন্তব্য, কড়া জবাব দিলেন প্রভা Aug 26, 2025
img
‘জন্ম দিলেই আপন হয় না’, পোস্টে কী বার্তা দিলেন সঞ্জয় কন্যা? Aug 26, 2025
img
নতুন চার খেলোয়াড়সহ এশিয়া কাপ স্কোয়াড ঘোষণা ওমানের Aug 26, 2025
img
নির্বাচনবিরোধীরা রাজনীতির মাঠ থেকে মাইনাস হয়ে যাবে: সালাহউদ্দিন Aug 26, 2025
img
দুর্বৃত্তের হামলায় ঢামেকে এক যুবক চিকিৎসাধীন Aug 26, 2025
img
শেয়ারবাজারের প্রতারক চক্র গোয়েন্দা সংস্থার নজরে : ডিএসই Aug 26, 2025
img
খালেদা জিয়া দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা: বুলু Aug 26, 2025
img
কোচ রাজিন সালেহ স্কোয়াড নিয়ে খুশি, ধন্যবাদ জানিয়েছেন নির্বাচকদের Aug 26, 2025
img
রিজার্ভ চুরি মামলার প্রতিবেদন দাখিল ২৯ সেপ্টেম্বর Aug 26, 2025
img
আজ বৈঠকে বসবেন নেতানিয়াহু, আসতে পারে নতুন সিদ্ধান্ত! Aug 26, 2025
img
১৮০ দেশে একযোগে চালু হলো গুগলের এআই মোড Aug 26, 2025
img
ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দিতে প্রস্তুত কেন্দ্রীয় ব্যাংক Aug 26, 2025
img
উপজেলা পর্যায়ে প্রতি কেজি ২৪ টাকায় বিক্রি হবে খোলা আটা Aug 26, 2025