নুরের ওপরে হামলা ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের অংশ

ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে নুরুল হক নুরের উপর হামলা চালানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি ও সাবেক এমপি ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ।

তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী বারবার দাবি করে আসছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভিতরে এবং বাহিরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা ঘাপটি মেরে বসে আছে। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের উপর হামলার মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীর সেই দাবি প্রমাণিত হয়েছে।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ দলীয় নেতাকর্মীদের উপর হামলার প্রতিবাদে শনিবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিলপূর্বক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় তিনি জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের শরিক ১৪ দলকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে নুরুল হক নুরকে টার্গেট করে হামলা করা হয়েছে।

ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির অন্যতম নেতা নুরুল হক নুরের উপর হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না উল্লেখ করে তিনি সিসি টিভি ফুটেজ এবং গণমাধ্যম কর্মীদের ধারণকৃত ভিডিও দেখে অনতিবিলম্বে হামলাকারী আওয়ামী দোসরদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

সাবেক এমপি আযাদ বলেন, যেই পদ্ধতির নির্বাচনে স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও জনগণের সরকার গঠিত হয়নি, সেই পদ্ধতি জনগণ আর চায় না। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের তৈরি আইনে নির্বাচন হলে আবারো ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে। এজন্য জনগণ প্রচলিত পদ্ধতির পরিবর্তে পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায়। পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণের সংসদ ও জনগণের সরকার গঠিত হবে।
তিনি বলেন, যেখানে বিভিন্ন সংস্থার জরিপে উঠে এসেছে দেশের ৭১ শতাংশ জনগণ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়, সেখানে একটি দলের আপত্তিকে অগ্রাধিকার দিয়ে পিআর পদ্ধতি চালু না করলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কোনোভাবেই বিপ্লবী সরকার বলা যাবে না। সরকার যদি জনগণের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যায় তবে জনগণ দাবি আদায়ে রাজপথে নামতে বাধ্য হবে। তাই জনগণ রাজপথে নামার আগেই জনগণের দাবি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, জুলাই যোদ্ধার উপর হামলা হলে জনগণ বসে থাকবে না। গণঅধিকার পরিষদ ফ্যাসিবাদ বিরোধী একটি রাজনৈতিক দল। একটি রাজনৈতিক দলের প্রধানের উপর রাষ্ট্রীয় বাহিনী হামলা চালানোর মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দোসরদের মুখোশ জনগণের সামনে উন্মোচন হয়েছে। যারা এই ঘৃণ্য বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে তাদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদ বিভিন্নভাবে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। একাত্তরকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করলে ছাত্র-জনতা সেটি প্রতিহত করবেই। মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের জন্য জুলাই যোদ্ধাদের পাশাপাশি পুরো জাতিকে গালাগালি করবেন। এটি কাম্য নয়। মেনে নেওয়া যায় না।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেনের পরিচালনায় বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেইটে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন– ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে ড. আব্দুল মান্নান ও মো. শামসুর রহমান। এছাড়াও অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর নেতারাসহ বিভিন্ন পর্যায় নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

সভাপতির বক্তব্যে ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর যদি আইনের দৃষ্টিতে কোনো অপরাধ করে থাকে তাহলে তাকে আটক করা যেতো। কিন্তু তার উপর অমানবিক নিষ্ঠুর বর্বরোচিত হামলা কেন চালানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে স্পষ্ট করতে হবে। যারা এই মামলা চালিয়েছে তারা ফ্যাসিবাদের দোসর। ঘটনাস্থলে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি. এম কাদের উপস্থিত থাকলেও তাকে কোনরূপ মারধর না করে কিংবা আটক না করে, কেন পুলিশের প্রটোকলে নিরাপদে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করা হয়েছে তার জবাব দিতে হবে।

জাতিসংঘ কর্তৃক আওয়ামী লীগ গণহত্যাকারী মানবতাবিরোধী একটি দল হিসেবে স্বীকৃত। আওয়ামী লীগের পরিচালিত গণহত্যায় যেসব দল ও ব্যক্তি সহযোগিতা এবং সমর্থন করেছে তারাও সমান অপরাধী। তাই আওয়ামী লীগের দোসর ১৪ দলীয় জোটকে নিষিদ্ধ করে ফ্যাসিবাদের আগ্রাসন চিরতরে বন্ধ করে তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনতে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

ইএ/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সারাদেশে যৌথ বাহিনীর ৭ দিনের অভিযানে গ্রেপ্তার ১৫১ Oct 24, 2025
img
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানের হাইকমিশনার সাক্ষাৎ Oct 24, 2025
img
দল নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ দল কখনো দেশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না: ড. হেলাল উদ্দিন Oct 24, 2025
img
গেস্টরুম-গণরুম কালচার ছাত্রদলে নেই: রাকিব Oct 24, 2025
img
পুরুষ হলে আমাদের মুখোমুখি হোন, পাক সেনাপ্রধানকে টিটিপি Oct 24, 2025
img
অগ্নিনিরাপত্তা পরিদর্শন সপ্তাহ পালনের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার Oct 24, 2025
img
বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর Oct 24, 2025
এখন মোটামুটি জেনেভা ক্যাম্প নিরাপদ! Oct 24, 2025
ঢাবিতে অভিযান চালিয়ে যা পাওয়া গেল! | Oct 24, 2025
কুমিল্লা নগরীর সড়কে শৃঙ্খলা ফিরাতে ট্রাফিক পুলিশের অভিযান Oct 24, 2025
১৫ সেনা কর্মকর্তার পক্ষে আইনি লড়াই থেকে সরে দাঁড়ালেন সরোয়ার Oct 24, 2025
১০ মিনিটে গোটা বিশ্বের সারাদিনের সর্বশেষ আলোচিত সব খবর Oct 24, 2025
চাকসু পরিচালকের বিতর্কিত ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে শপথ অনুষ্ঠানে হট্টগো/ল Oct 24, 2025
এশিয়া-প্যাসিফিক শীর্ষ সম্মেলনে ট্রাম্পের কূটনৈতিক পদক্ষেপ Oct 24, 2025
অতীতের ভুলের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন জামায়াত আমির Oct 24, 2025
চরফ্যাশনে ৩ শতাধিক দুস্থ ও অসহায় মানুষ পেল বিএনপি'র উপহার Oct 24, 2025
সোশ্যাল মিডিয়া নয়, কাজের জগতে ব্যস্ত মাহি Oct 24, 2025
img
হাসিনা সরকারের কিছু ভুল ছিল, স্বীকার করেছেন জয় Oct 24, 2025
img
রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্মেলন স্থগিত ঘোষণা পুতিনের Oct 24, 2025
img
মেসিকে পাওয়া আমাদের জন্য সৌভাগ্যের: ডেভিড বেকহ্যাম Oct 24, 2025